করোনা ভাইরাস ঠেকাতে যখন বন্ধ করা হচ্ছে একের পর এক প্রতিষ্ঠান ও জনসমাগমস্থল, তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে হঠাৎ করেই বাড়ছে নিত্যপ্রয়োজনীয় সামগ্রীর দাম। এর সবচেয়ে বেশি প্রভাব পড়েছে চালের পাইকারি বাজারে। একদিনের ব্যবধানে বস্তা প্রতি সর্বোচ্চ ৫০০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে চট্টগ্রামের বাজারে। চাক্তাই-খাতুনগঞ্জ আড়তদার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির কর্তৃপক্ষের দাবি, করোনার জন্য চালের দাম বাড়েনি, ধানের সংকটে কল মালিকরাই চালের দাম বাড়িয়েছে।
সরেজমিনে চট্টগ্রামের বিভিন্ন বাজার ঘুরে চালের দাম বাড়ার সত্যতা মিলেছে। পাইকারি বাজারে চালের দাম বাড়ার প্রভাব পড়েছে চট্টগ্রামের কাজির দেউড়ি, চকবাজার, রিয়াজউদ্দিন বাজার, বহদ্দারহাটসহ সব খুচরা বাজারে। খুচরা বাজারে বস্তা প্রতি ১০০ থেকে সর্বোচ্চ ৫০০ পর্যন্ত বেড়েছে।
মঙ্গলবার (১৭ মার্চ) যে চিনিগুড়া চালের দাম ছিল ৪৪০০ টাকা, পরদিন বুধবারেই সেটা ৫০০ টাকা বেড়ে ৪৯০০ টাকায় পাইকারি বিক্রি হচ্ছে। মঙ্গলবার মিনিকেট ছিল ১৯৫০ টাকা, বুধবার সেটি বেড়ে ২১০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছিল। কাটারিভোগ মঙ্গলবার ছিল ২৭০০ টাকা, বুধবার সেটি বেড়ে দাঁড়ায় ২৮৫০ টাকায়। সিদ্ধ পাইজারের দাম ছিল ১৮০০ টাকা, বুধবার সেটি বেড়ে দাঁড়ায় ১৯৫০ টাকা। বেতি চাল দাম ১৭০০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ১৮৫০ টাকা। কাটারিসিদ্ধের দাম ২০৫০ টাকা থেকে বেড়ে হয়েছে ২১২০ টাকা।
ক্রেতারা অভিযোগ করে বলেন, অতিরিক্ত মুনাফার জন্য বাজারে করোনার গুজব ছড়িয়ে চালের কৃত্রিম সংকট তৈরি করছে ব্যবসায়ীরা।
হঠাৎ চালের দাম বৃদ্ধি নিয়ে একটি বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা মো. সাইফুল্লাহ ক্ষুব্ধ স্বরে বললেন, ‘আমরাও আজব দেশে বাস করি। কোনো কিছু হলেই গুজব ছড়িয়ে নিত্যপণ্যে কৃত্রিম সংকট করে দেশের মানুষকে জিম্মি করা হয়। একদিনের ব্যবধানে চালের এত দাম বৃদ্ধি ভাবা যায়! সামনে দিনে কেমন হবে সেটাই চিন্তার বিষয়।’
এদিকে জিনিসপত্রের দাম বাড়বে ভেবে তাই আগেভাগে অনেকে কেনাকাটার মাত্রা বাড়িয়ে দিয়েছেন। চট্টগ্রাম নগরীর সদরঘাট এলাকার মুদি দোকানদার ওমর ফারুক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘করোনা ভাইরাসের অজুহাতে অসাধু ব্যবসায়ীরা নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসের দাম বাড়িয়ে দিতে পারে। বিশেষ করে চালের দাম এমনিতেই বাড়তে শুরু করেছে। এজন্য বেশি বেশি নিয়ে ঘরে জমা করে রাখছে সবাই। কাস্টমার চাইছে আমি তো নামা করতে পারি না। বাধ্য হয়ে কাস্টমারের চাহিদা পূরণ করতে হচ্ছে। এমন মজুদ আর কৃত্রিম সংকট আরো কয়েকদিন চলতে থাকলে দিনমজুর খেটে খাওয়া মানুষগুলোর অবস্থা খুব করুণ হবে।’
কাজির দেউড়ি বাজারের এক চাল বিক্রেতা নাম প্রকাশে অনিচ্ছা জানিয়ে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, করোনার জন্য স্কুল, কলেজ ও জনসমাগম বন্ধের পর থেকে অন্যান্য নিত্যপণ্যের চেয়ে চালের দাম তুলনামূলকভাবে বস্তাপ্রতি ১০০ থেকে ৫০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। চালের দাম কেজিতে ১০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। নতুন চাল বাজারে না আসা পর্যন্ত প্রতিদিন বস্তা প্রতি ৫০-১০০ টাকা বৃদ্ধি পেতে পারে।’
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাবেক সভাপতি সোলাইমান বাদশা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, হঠাৎ করে কল মালিকরা চালের দাম বাড়িয়ে দিয়েছে। সরকার কৃষক থেকে ধান কিনে গুদামজাত করার কারণে বাজারে ধানের সংকট দেখা দিয়েছে। যার জন্য চালের দামটা বৃদ্ধি পেয়েছে। প্রতি বছর ইন্ডিয়া থেকে চাল আমদানি করা হয়। কিন্তু এ বছর কৃষকদের সুবিধার জন্য ভারত থেকে চাল আমদানি করা হয়নি। যার প্রভাব এখন বাজারে পড়ছে। করোনার জন্য চালের দাম বেড়েছে— এটা সঠিক নয়।’
চাক্তাই খাতুনগঞ্জ আড়তদার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. মহিউদ্দিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘খাতুনগঞ্জে চালের দাম বেড়েছে। কল মালিকরাই হঠাৎ করে চালের দাম বাড়িয়েছে। যেসব পাইকার বা দোকানদার অতিরিক্ত দামে চাল বিক্রি করছে তাদের রশিদ দেখাতে বলেন। আগের গুদামজাত করা চাল হঠাৎ করে কোন কারণ ছাড়া বৃদ্ধি করেছে। সবার নীতি-নৈতিকতা খারাপ হয়ে গেছে যার জন্য এমন করছে। তাদেরকে ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে জরিমানা করা প্রয়োজন।’
সিপি