সয়াবিন তেল বোতলজাতে ১৪ টাকা ও খোলা ১৭ টাকা কমানো হলেও চট্টগ্রামের কোথাও সেভাবে বিক্রি হচ্ছে না। খুচরা বিক্রেতারা আগের দামেই পকেট কাটছে ভোক্তাদের। ফলে ভোক্তা অধিকারের অভিযান দাবি জানিয়েছেন ক্রেতারা।
মঙ্গলবার (৪ অক্টোবর) থেকে কম দামে সয়াবিল তেল বিক্রি করার কথা। কিন্তু বৃহস্পতিবার খবর নিয়ে জানা গেছে, নতুন নির্ধারিত দামে পাইকারিতে কিনতে পারছেন না ব্যবসায়ীরা। তাই আগের দামেই বিক্রি হচ্ছে খুচরায়।
গত সোমবার নতুন দাম নির্ধারণ করে দেয় সরকার। দাম অনুসারে, ১৪ টাকা কমিয়ে বোতলজাত সয়াবিন তেল বিক্রি করবে ১৭৮ টাকায়, ১৭ টাকা কমিয়ে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি করবে ১৫৮। এতদিন বোতলে সয়াবিন তেল বিক্রি হতো ১৯২ টাকাতে আর খোলায় ১৭৫ টাকা।
বাংলাদেশ ভেজিটেবল ওয়েল রিফাইনার্স অ্যান্ড বনস্পতি ম্যানুফ্যারার্স অ্যাসোসিয়েশন সয়াবিনের দাম কমানোর এ ঘোষণা দেয় সোমবার। এতে বলা হয়, মঙ্গলবার থেকেই কার্যকর হবে নতুন এ দাম। কিন্তু এখনও পর্যন্ত এর সুফল পাচ্ছেন না ভোক্তারা।
বৃহস্পতিবার (৬ অক্টোবর) চট্টগ্রাম নগরীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বোতলজাত প্রতি লিটার সয়াবিন তেল ১৯০ থেকে ১৯২, পাঁচ লিটারের বোতল ৯৩৫ থেকে ৯৪৫ এবং খোলা সয়াবিন তেল লিটারপ্রতি ১৭০ থেকে ১৭২ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। অথচ ভোজ্যতেল ব্যবসায়ীদের সংগঠন সয়াবিন তেলের দাম কমানোর সিদ্ধান্ত জানিয়ে গত সোমবার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে চিঠি দেয়।
নগরীর ষোল শহর কর্ণফুলী মার্কেটের মুদির দোকানদার মো. শফি সওদাগর বলেন, ‘আমরা কম দামে কিনতে পারছি না, বিক্রি করবো কিভাবে।’
তিনিও ভোক্তা অধিকারের অভিযানের দাবি জানিয়ে বলেন, ‘পাইকারি ব্যবসায়ীদের গুদামে অভিযান চালানো হোক। আমাদের কম দামে দেওয়ার ব্যবস্থা করা হোক। আমরা অবশ্যই কম দামে বিক্রি করবো।’
বহাদ্দারহাট বাজারের মুদি ব্যবসায়ী মো. জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘কোম্পানিগুলো দাম কমানোর সিদ্ধান্ত নিলেও খুচরা বাজারে নতুন দরের তেল এখনও সরবরাহ করেনি। এছাড়া প্রতিটি দোকানে এখনও বিভিন্ন কোম্পানির আগের প্রচুর তেল রয়েছে। সেগুলো বিক্রি শেষ না হলে নতুন তেল ক্রয়ের অর্ডার দিতে চান না খুচরা বিক্রেতারা।’
হালিশহর ‘কে’ ব্লক এলাকার খুচরা দোকানদার মো. সেলিম বলেন, ‘লিটারে ১৪ টাকা কমে বিক্রি করলে অনেক টাকা লোকসান হবে। বিষয়টি অনেক ভোক্তাও বুঝতে চান না। ফলে দোকানদারের সঙ্গে প্রতিদিন ছোটখাটো গণ্ডগোল বাধছে। ভোক্তা পর্যায়ে নতুন দরের তেল পেতে আরও চার থেকে পাঁচদিন সময় লাগবে।’
বিবিরহাট বাজারে তেল ক্রয় করতে আসা ব্যাংকার রবিউল হোসেন বলেন, ‘যখন তেলের দাম বাড়ানোর ঘোষণা দেওয়া হয়, তখন সঙ্গে সঙ্গে বাজারে বেড়ে যায়। কিন্তু কমানোর ঘোষণা দেওয়ার তিনদিন পরও তা কমে না।’
স্কুল শিক্ষিকা শারমিন আক্তার বলেন, ‘সংসারের বাজার আমাকেই করতে হয়। কয়েক মাস আগেও এক হাজার টাকায় যে বাজার পেতাম, এখন সেই বাজার করতে দু’হাজার টাকা লাগে। খরচ বেড়ে গেছে কিন্তু আয় বাড়েনি। তাই দ্রব্যমূল্য কমানো জরুরি।’
কনজ্যুমার অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশের (ক্যাব)সহ-সভাপতি নাজের হোসাইন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের দেশে বাড়তে সময় লাগে না, কিন্তু কমতে সময় লাগে। এর জন্য সরকারের নজরদারির অভাব। সরকার দাম কমানোর জন্য কোনো ব্যবস্থাই গ্রহণ করেনি, শুধু ঘোষণার মধ্যে সীমাবদ্ধ। তাই আমরা দাবি, দ্রুত ভোক্তা অধিকারেরসহ প্রশাসনের নির্বাহী ম্যাজিস্টেট দিয়ে অভিযান পরিচালনা করা হোক।’
এএস/ডিজে