স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির নিজেরই স্বাস্থ্য খারাপ

রোগী আছে ডাক্তার নেই, মেলে না ওষুধও

স্বাস্থ্য কেন্দ্র নিজেরই স্বাস্থ্য খারাপ। পুরনো, জরাজীর্ণ ব্যবহারের অনুপযোগী আসবাবপত্র, ভাঙ্গাচুরা ভবনের সব ক’টা জানালার গ্লাস ভাঙ্গা। পিয়ন ও উপসহকারী ডাক্তারের মাধ্যমে চলছে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সেবা কার্যক্রম। কর্ণফুলী উপজেলার বড়উঠান ইউনিয়নের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্রের চিত্র এটি।

জানা যায়, চট্টগ্রাম জেলার কর্ণফুলী উপজেলার ২ নম্বর বড়উঠান ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডে বড়উঠান স্বাস্থ্য কেন্দ্রে রোগীরা পাচ্ছে না ঠিকমত চিকিৎসা সেবা। দায়িত্বে মুসারাত নাজ নামের একজন মহিলা ডাক্তার থাকলেও আসে মাত্র সপ্তাহে ১/২ দিন। তিনি কোন দিন আসে কোনদিন আসে না তারও নেই কোন হিসাব।

শনিবার (৮ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে গিয়েও ডাক্তারের দেখা মিলও না। দেখা যায় ডা. নারায়ণ চন্দ্র নাথ উপসহকারী ডাক্তারের মাধ্যমে চলছে চিকিৎসা সেবা। কিন্তু তিনিও সকাল ৯টা থেকে দুপুর ১টায় পর্যন্ত থাকেন। এরপরই সম্পূর্ণ স্বাস্থ্য কেন্দ্রের দায়িত্ব পালন করেন মো. আকবর হোসেন নামের পিয়ন। যিনি ঝাড়ুদার তিনিই পিয়ন, আবার তিনিই কমপাউন্ডার।

ওই স্বাস্থ্য কেন্দ্রে পরিবার কল্যাণ কক্ষের চিত্রও একই রকম। ডা. নিপু সেন নামের একজন ভিজিটর ডাক্তার থাকলেও দুপুরে পর তার দেখা মিলেও না। অপরিচ্ছন্ন পরিবেশ ওষুধ ও ডাক্তারের সেবার ঘাটতি নিয়ে চলছে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সব কাজকর্ম।

স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির নিজেরই স্বাস্থ্য খারাপ 1

বড়উঠান স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ কেন্দ্র ঘুরে দেখা যায়, ইউনিয়নের একমাত্র স্বাস্থ্য কেন্দ্র হওয়ার পরও দেখভাল করার কেউ নেই। স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ভবন থেকে শুরু করে আসবাবপত্র, ভবনের চারদিকের জানালা ভেঙে জরাজীর্ণ হয়ে গেছে। সংস্কারের অভাবে ব্রিটিশ আমলে নির্মিত ভবনে বড় বড় গাছের শিকড় গজিয়েছে।
কাঙ্খিত চিকিৎসা সেবার বড়ই অভাব। পিয়ন ওরফে কম্পাউন্ডার একহাতে ধূমপান করছে আরেক হাতে রোগীকে ওষুধ দিতে ব্যস্ত। ফার্মেসির এককোণে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের ময়লা আবর্জনা স্তূপ করে রাখা হয়েছে। স্বাস্থ্য কেন্দ্র নেই কোন বিশুদ্ধ পানির ব্যবস্থা। একটা টিউবওয়েল থাকলেও শ্যাওলা জমে একাকার হয়ে আছে। বাথরুমে নেই পানির লাইন। তাই বাথরুম দুটোতে তালা ঝুলানো থাকে। আশপাশে বৈদ্যুতিক লাইন থাকলেও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে বৈদ্যুতিক সংযোগ নেই। ফলে গ্রীষ্মকালে গরমে অতিষ্ট হয়ে ওঠেন রোগী ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রে দায়িত্বরতরা। তাছাড়া সরকারি ওষুধ সরবরাহও অপ্রতুল। ফলে রোগীরা প্রয়োজনমত ওষুধ থেকে বঞ্চিত।

স্থানীয়রা জানান, প্রয়াত আওয়ামী লীগ নেতা আখতারুজ্জামান চৌধুরী (বাবু) ৩২ শয্যা বিশিষ্ট একটি হাসপাতাল করার ঘোষণা দিয়েছিলেন। তবে আজও তা বাস্তবায়ন হয়নি।

চিকিৎসা নিতে আসা স্থানীয় কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, অসুখ বিসুখে এখনও আমাদের পটিয়া উপজেলার স্বাস্থ্য কেন্দ্র কিংবা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল উপর ভরসা করতে হয়। প্রয়োজনীয় ওষুধ ও ডাক্তারের অভাবে বাড়ির পাশে স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সুফল পাচ্ছেন না তারা। এমপি আখতারুজ্জামান বাবু একটি হাসপাতাল করার ঘোষণা দিলেও এ বিষয়ে কোন উদ্যোগ কোনও উদ্যোগ নিচ্ছেন না জনপ্রতিনিধিরা। শুধু নির্বাচন আসলে প্রতিশ্রুতি দিয়ে যান, নিবার্চন শেষ হলেই ভুলে যান তারা।

এ বিষয়ে কর্ণফুলী উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক চৌধুরীর সাথে যোগাযোগ করলে তিনি বলেন, আমাদের স্বাস্থ্য বিভাগটা এখনও সম্পূর্ণ পটিয়া কন্ট্রোল করে। যার কারণে আমাদের ইচ্ছা থাকা সত্বেও বড়উঠান স্বাস্থ্য কেন্দ্রের জন্য কিছু করতে পারছি না। যতক্ষণ পর্যন্ত আমাদের কর্ণফুলীর অধীনে না আসবে ততোদিন আমরা কোন পদক্ষেপ নিতে পারছি না। তাও রাস্তাটি সংস্কার কাজের জন্য পাঁচ লাখ টাকার বাজেট পাস করাতে সম্খম হয়েছি।

স্বাস্থ্য কেন্দ্রটির নিজেরই স্বাস্থ্য খারাপ 2

কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার সৈয়দ শামসুল তাবরীজ বলেন, বড়উঠান স্বাস্থ্য কেন্দ্রের করুণ অবস্থার কথা আমি জানি। এজন্য পটিয়ার সিভিল সার্জেন্ট ও স্বাস্থ্য বিভাগকে চিঠিতে জানানো হয়েছে। বড়উঠানের স্বাস্থ্যসেবার মান ও পরিবেশ উন্নয়নের বিষয়ে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি।

ডাক্তারের অনুপস্থিতির বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, একজন মেডিকেল অফিসার দায়িত্বে আছেন, তিনিও নিয়মিত নয়- এটা অস্বীকার করার কিছু নেই।

তিনি আরও বলেন, আমরা উপজেলার জন্য ৫০ শয্যা বিশিষ্ট হাসপাতাল নির্মাণ করার চেষ্টা করছি। এজন্য জায়গাও নির্ধারণ করা হয়েছে।

স্বাস্থ্য কেন্দ্রে অনিয়মিত হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে মেডিকেল অফিসার ডা. মুসরাত নাজ চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, আমাদেরকে পটিয়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও সময় নিতে হয়। আমাদের আউটডোর থাকে তিনদিন। আর ইমার্জেন্সি থাকলে তখনও আসতে পারি না। তাছাড়া এখানে জেনুইন রোগী তেমন নেই। যে কয়েকজন রোগী থাকেন তাদেরকে আগে জানিয়ে দেয়া হয়, আমাকে কোনদিন পাওয়া যাবে। কয়েক বছর আগে এখানে কোনও ডাক্তারই ছিল না। এখন আমি সপ্তাহে অন্তত ২/৩ দিন হলেও চিকিৎসা সেবা দিচ্ছি।

আরএ/এসএ

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!