স্বাদ-গন্ধে চট্টগ্রামে উপসর্গ বদলে যাচ্ছে করোনার, জ্বর ছেড়েও আবার আসে শ্বাসকষ্ট সঙ্গী করে

ফুসফুসে সংক্রমণ ছড়িয়ে যায় অজান্তেই

মুখে স্বাদ ও নাকে গন্ধ না পাওয়াকে এতদিন ধরে করোনার অন্যতম উপসর্গ হিসেবে ধরা হতো। তবে করোনার ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তদের ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে এর ব্যতিক্রম। সাম্প্রতিক এক গবেষণায় বলা হয়েছে, চট্টগ্রামের ৯৩ ভাগ করোনারোগীই এই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত। এই ভ্যারিয়েন্টের করোনায় আক্রান্ত রোগীরা মুখে স্বাদ যেমন পাচ্ছেন, অন্যদিকে নাকে গন্ধ পাওয়াতেও সমস্যা হচ্ছে না তাদের। শুধু তাই নয়, জ্বর হয়ে ছেড়ে দেওয়ার পর নিরবে ফুসফুসে সংক্রমণ ছড়িয়ে যাওয়ার প্রবণতাও দেখা যাচ্ছে বলেও জানিয়েছেন বেশ কয়েকজন চিকিৎসক।

করোনা আক্রান্ত রোগীদের নমুনার জীবনরহস্য উন্মোচনের জন্য করা একটি গবেষণায় উঠে এসেছে এমন তথ্য। ওই গবেষণায় যে ৩০ জন করোনা আক্রান্ত রোগীকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল তাদের ২৮ জনই ছিলেন ভারতীয় ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত। এর আগে বৃহস্পতিবার (৫ আগস্ট) বাংলাদেশে শনাক্ত ৯৮ শতাংশ করোনা রোগীই ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্ত বলে জানিয়েছে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) গবেষকরা। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার মতে, ডেল্টা ভ্যারিয়েন্ট অত্যন্ত বিপজ্জনক। এটির কাঠামোগত এবং চারিত্রিক রূপান্তর ঘটেই চলেছে বিশ্বজুড়ে। এমনকি যেসব দেশে ভ্যাকসিন কার্যক্রম ভালো হয়েছে সেখানেও ছড়াচ্ছে এটি।

এদিকে হঠাৎ নতুন সব উপসর্গের মুখে পড়ে করোনা চিকিৎসার সঙ্গে যুক্ত ডাক্তাররা বলছেন, জ্বর হয়ে সেরে গেলেই নির্ভার হয়ে থাকার সুযোগ নেই এখন। নতুন করে ভাবতে হবে অনেক কিছুই।

চট্টগ্রামের করোনারোগী নিয়ে ভেটেরিনারি ও অ্যানিমেল সাইন্সেস বিশ্ববিদ্যালয় (সিভাসু) ও বাংলাদেশ বিজ্ঞান ও শিল্প গবেষণা পরিষদের (বিসিএসাআইআর) উদ্যোগে পরিচালিত ওই গবেষণা কাজে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকা ডা. সিরাজুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টের করোনার ক্ষেত্রে গত এক বছরের অনেক ধারণাকে ভেঙে দিয়েছে। আগের উপসর্গগুলোর সাথে অনেক কিছুই এখন মিলছে না।’

‘যেমন আগে বেশিরভাগ করোনারোগীরই স্বাদ ও গন্ধ পাওয়ার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যেতো করোনা আক্রান্ত হলে। কিন্তু ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তদের বেলায় এমনটি হচ্ছে না। তাদের স্বাদ ও গন্ধ নেওয়ার ক্ষমতা বরাবরের মতোই থাকছে’— করোনার অন্যতম একটি উপসর্গের হঠাৎ বদলে যাওয়ার উদাহরণ দিয়ে বলেন এই গবেষক।

এছাড়াও ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তদের পেটে অসুখও হচ্ছে জানিয়ে ডা. সিরাজুল ইসলাম বলেন, ‘আগে তো শুধু জ্বর থাকতো। তবে ডেল্টা ভ্যারিয়েন্টে আক্রান্তদের জ্বরের পাশাপাশি পাতলা পায়খানাও দেখা দিচ্ছে শুরুতে। এটা আগে ছিল না।’

অন্যদিকে চট্টগ্রাম মা ও শিশু জেনারেল হাসপাতালের করোনা চিকিৎসাবিষয়ক কমিটির প্রধান অধ্যাপক ডা. অলক নন্দী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘ইদানিং দেখা যাচ্ছে প্রথম সপ্তাহে অনেকের জ্বর হয়ে সেরে যাচ্ছে। কিন্তু দ্বিতীয় সপ্তাহ পর আবার জ্বর আসছে। একই সঙ্গে শ্বাসকষ্টও শুরু হচ্ছে। অর্থাৎ মাঝের সময়টাতে নীরবে ফুসফুসে ইনফেকশন ছড়িয়ে যাচ্ছে। এই সময়টাতে বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই আক্রান্ত রোগীর ফুসফুস ৩০ থেকে ৪০ শতাংশ পর্যন্ত সংক্রমিত হয়ে যায়।’

তিনি বলেন, ‘জ্বর সেরে যাওয়ায় অনেকে ধরে নেন যে তার আসলে সিজনাল ফ্লু বা ভাইরাল ফিভার হয়েছে। তিনি আর টেস্ট করান না। পরে যখন বোঝেন তখন অনেক দেরি হয়ে যায়।’

হঠাৎ করে করোনার ধরন ও উপসর্গের এমন পরিবর্তনের ফলে যেকোন একটি উপসর্গ দেখা দিলে সাথে সাথেই করোনা টেস্ট করানোর পরামর্শ দিচ্ছেন চিকিৎসকরা। তারা বলছেন শুরুতে নিশ্চিত হওয়া গেলে চিকিৎসাও দ্রুত শুরু করা যায়। আর এতে ক্ষতিও কমবে।

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!