চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে দলীয় সমর্থন না পাওয়া বর্তমান ১৪ সাধারণ কাউন্সিলরের মধ্যে অন্তত ১১ জন স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচনে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। গত ১৯ ফেব্রুয়ারি আওয়ামী লীগের স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ড চট্টগ্রাম সিটি নির্বাচনে দল সমর্থিত প্রার্থীদের নাম ঘোষণার করলে এতে বাদ পড়েন বর্তমান ১৪ কাউন্সিলর। এদের মধ্যে চারবারের হেভিওয়েট প্রার্থী যেমন ছিল তেমনি ছিল একবারের নবীন প্রার্থীও।
তবে বাদ পড়া ১৪ জনের মধ্যে ১১ জনই স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচনে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন। কিন্তু দলের সিদ্ধান্তের বাইরে গিয়ে নির্বাচনে যেতে আগ্রহী না ১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ডের মোহাম্মদ হোসেন হিরণ ও ৪০ নম্বর উত্তর পতেঙ্গা ওয়ার্ডের বর্তমান কাউন্সিলর জয়নাল আবেদীন। অন্যদিকে দলের সমর্থনহারা হয়ে আত্মগোপনে ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ডের তৌফিক আহমেদ চৌধুরী।
চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে দলীয় সমর্থন না পাওয়া বর্তমান ১২ কাউন্সিলর নিশ্চিত করেছেন ‘এলাকাবাসীর দাবির মুখে’ তারা স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচনে অংশগ্রহণ করবেন। ১ নম্বর দক্ষিণ পাহাড়তলী ওয়ার্ড থেকে বাদ পড়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর তৌফিক আহমেদ চৌধুরী। তার স্থলে মনোনয়ন পেয়েছেন আওয়ামী লীগের সভাপতি গাজী মোহাম্মদ শফিউল আজিম। তবে একটি খুনের মামলায় জড়িয়ে বর্তমানে আত্মগোপনে রয়েছেন তৌফিক। সে কারণে তিনি নির্বাচন করবেন কিনা তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।
২ নম্বর জালালাবাদ ওয়ার্ড থেকে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর সাহেদ ইকবাল বাবু। তার জায়গায় মনোনয়ন দেওয়া হয়েছে চট্টগ্রাম মহানগর যুবলীগের সদস্য মোহাম্মদ ইব্রাহীমকে। তবে স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচন করবেন সাহেদ ইকবাল বাবুও।
৯ নম্বর উত্তর পাহাড়তলী ওয়ার্ডে জহিরুল আলম জসিমের জায়গায় এবার মনোনয়ন পেয়েছেন পাহাড়তলী থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি নুরুল আবছার মিয়া। মনোনয়ন না পেলেও স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচনে যাওয়ার কথা বলেছেন জসিম।
১১ নম্বর দক্ষিণ কাট্টলী ওয়ার্ড থেকে এবার বর্তমান কাউন্সিলর নগর আওয়ামী লীগের সদস্য মোরশেদ আকতার চৌধুরীর স্থলে মনোনয়ন পেয়েছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি মো. ইসমাইল। তবে এখানে থামছেন না মোরশেদ। তিনিও স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচন করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
১২ নম্বর সরাইপাড়া ওয়ার্ড থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের আহ্বায়ক মো. নুরুল আমিন। এই ওয়ার্ড থেকে বাদ পড়া বর্তমান কাউন্সিলর সাবের আহমেদও স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচনে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন।
১৩ নম্বর পাহাড়তলী ওয়ার্ড থেকে চারবারের কাউন্সিলর মোহাম্মদ হোসেন হিরুণের জায়গায় এবার মনোনয়ন পেয়েছেন মহানগর যুবলীগের সদস্য মো. ওয়াসিম উদ্দিন চৌধুরী। তবে অন্য ওয়ার্ড কাউন্সিলর প্রার্থীরা যেখানে স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচনে লড়ার ঘোষণা দিয়েছেন সেখানে মোহাম্মদ হোসেন হিরণ সেই পথে না গিয়ে রাজনীতিতেই থাকতে চান।
১৪ নম্বর লালখান বাজার ওয়ার্ডে মনোনয়ন বঞ্চিত হয়েছেন কাউন্সিলর আবুল ফজল কবির আহমদ মানিক। তারস্থলে মনোনয়ন পেয়েছেন চট্টগ্রাম মহানগর স্বেচ্ছাসেবকলীগের সদস্য আবুল হাসনাত মোহাম্মদ বেলাল। তবে এই ওয়ার্ড থেকে নির্বাচন করার ঘোষণা দিয়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর মানিক।
২৫ নম্বর রামপুর ওয়ার্ড থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন সাবেক কাউন্সিলর আব্দুস সবুর লিটন। তবে বাদ পড়া বর্তমান কাউন্সিলর এস এম এরশাদ উল্লাহও স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন।
২৭ নম্বর দক্ষিণ আগ্রাবাদ ওয়ার্ড থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মো. শেখ জাফরুল হায়দার চৌধুরী। বাদ পড়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর এইচ এম সোহেল। তিনি মনোনয়ন বঞ্চিত হলেও থামছেন না নির্বাচনী লড়াই থেকে। লড়বেন স্বতন্ত্র হয়ে।
২৮ নম্বর পাঠানটুলী ওয়ার্ড থেকে এবার বাদ পড়েছেন আবদুল কাদের প্রকাশ মাছ কাদের। তারস্থলে মনোনয়ন পেয়েছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি নজরুল ইসলাম বাহাদুর। তবে কাদেরও এখানে থামছেন না। তিনি নির্বাচন করবেন বলে ঘোষণা দিয়েছেন।
৩০ নম্বর পূর্ব মাদারবাড়ী ওয়ার্ড থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আতাউল্লাহ চৌধুরী। বাদ পড়া বর্তমান কাউন্সিলর মাজহারুল ইসলাম চৌধুরীও স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন।
৩১ নম্বর আলকরণ ওয়ার্ড থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সদস্য মো. আব্দুস সালাম। বাদ পড়েছেন ৪বারের কাউন্সিলর তারেক সোলায়মান সেলিম। তবে এলাকাবাসীর দাবির মুখে সেলিমও নির্বাচনে লড়াইয়ে থাকছেন।
৩৩ নম্বর ফিরিঙ্গী বাজার ওয়ার্ড থেকে মনোনয়ন পেয়েছেন মহানগর ছাত্রলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মদ সালাহউদ্দিন। তার কারণে বাদ পড়েছেন বর্তমান কাউন্সিলর হাসান মুরাদ বিপ্লব। তবে বিপ্লবও হাল ছাড়ছেন না। তিনিও স্বতন্ত্র হয়ে নির্বাচন করবেন বলে জানিয়েছেন।
এডি/এসএস