স্ত্রী ও সন্তানকে শ্বাসরোধে হত্যার দায়ে বাস ড্রাইভার আব্দুল বারেক ও তার প্রথম স্ত্রী ফাতেমা বেগম ওরফে লাকি বেগমকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।
বৃহস্পতিবার (২২ জুন) চট্টগ্রাম ৬ষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ বেগম সিরাজাম মুনীরা এই রায় দেন।
দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি আব্দুল বারেক লক্ষীপুর রামগঞ্জ থানার পূর্ব কাজীরখীল হায়দার আলী ব্যাপারী বাড়ির মো. বদু মিয়ার ছেলে ও তার প্রথম স্ত্রী ফাতেমা বেগম ওরফে লাকি বেগম। তারা নগরীর পাহাড়তলী থানার সরাইপাড়া বহেলা পুকুরপাড় সিরাজ মিয়ার ভাড়া ঘরে বসবাস করতেন।
মামলার অভিযোগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১১ সালের ১৬ মার্চ সকালে বারেকের দ্বিতীয় স্ত্রী রহিমা বেগম সুমিকে মাথায় আঘাত করে ও শ্বাসরোধ করে হত্যা করেন তার প্রথম স্ত্রী ফাতেমা বেগম। পরে সুমিকে শাড়ি দিয়ে ফ্যানের সঙ্গে ঝুলিয়ে দেয়। এছাড়া সুমির ছয় মাসের শিশু সন্তান হৃদয়কেও শ্বাসরোধ করে হত্যা করে ফাতেমা।
পরে ঘরের পাশের এক মোবাইল ফোনের দোকান থেকে স্বামী বারেককে ফাতেমা জানায়, সুমি ঘরের দরজা বন্ধ করে রেখেছে। অনেক্ষণ চেষ্টার পরেও সে দরজা খুলছে না। পমবারেক এসে রুমের পেছনের একটি ছোট অংশ দিয়ে ঘরের ভেতর প্রবেশ করে ঝুলন্ত লাশ চকিতে রাখে।
এরপর সুমি নিজ সন্তানসহ আত্মহত্যা করেছে বলে জানায় বারেক। কিন্তু আগে থেকে তাদের পারিবারিক কলহের কারণে সুমির বোন জহুরা বেগম রানু বাদি হয়ে নগরের পাহাড়তলী থানায় হত্যা মামলা দায়ের করেন।
এই মামলায় বারিক ও ফাতেমাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। মামলা তদন্তে গিয়ে বেরিয়ে আসে হত্যাকাণ্ডের মূল রহস্য।
মামলা তদন্ত সূত্রে জানা গেছে, ঘটনার দিন সকালে বোন রানুর সঙ্গে নিজ বাড়ি খাগড়াছড়ি যাওয়ার কথা ছিল সুমির। কিন্তু তার স্বামী বারেক সতীন ফাতেমা ও ননদ মরিয়ম বেগম বাসায় থাকায় সুমি যেতে পারবে না বলে জানায়। তাছাড়া সেসময় তাদের সাংসারিক টানাপোড়েন চলছিল। পরে মামলার আসামিরা যোগসাজশে সুমি ও তার সন্তানকে হত্যার করার বিষয়টি মামলা উঠে আসে।
মামলা তদন্ত শেষে ২০১২ সালের ৩১ জুলাই আদালতে চার্জশিট জমা দেন তদন্ত কর্মকর্তা। এই মামলায় ২০১৪ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি চার্জ গঠন করেন আদালত।
অতিরিক্ত পিপি দীর্ঘতম বড়ুয়া দীঘু বলেন, ‘দণ্ডবিধির ৩০২ ধারায় আব্দুল বারেক ও ফাতেমা বেগম প্রকাশ লাকী বেগমকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড, প্রতিজনকে ২০ হাজার টাকা অর্থদণ্ড অনাদায়ে আরও ৬ মাসের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত। আসামিদের উপস্থিতিতে রায় ঘোষণা করেন আদালত। পরে সাজা পরোয়ানা মূলে তাদের কারাগারে পাঠানো হয়।’
তিনি আরও বলেন, ‘এই মামলায় ১৬ জন সাক্ষীর সাক্ষ্য উপস্থাপন করেছে রাষ্ট্রপক্ষ।’
মামলা পরিচালনায় আরওসহযোগিতা করেন এপিপি বিহি চক্রবর্তী।
আরএস/ডিজে