স্ত্রীর নামে ঠিকাদারি, চসিক প্রকৌশলীর শাস্তি চায় মন্ত্রণালয়
বেনামে ঠিকাদারি ব্যবসা পরিচালনার মাধ্যমে দুর্নীতি ও সরকারি চাকরি বিধিমালা লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠার পর চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের (চসিক) প্রকৌশলী কামাল হোসেন সেলিমের বিরুদ্ধে এবার ‘ব্যবস্থা’ নিতে বলেছে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়। চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের উপসহকারী প্রকৌশলী (বিদ্যুৎ) কামাল হোসেন সেলিম সরকারি কর্মচারী হয়েও খোদ সিটি করপোরেশনের প্রকল্পে ঠিকাদারি ব্যবসা পরিচালনা করে যাচ্ছেন। এ বিষয়ে অধিকতর তদন্তে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়, চসিক ও চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের মধ্যে একাধিকবার চিঠি চালাচালি হলেও তিনি রয়ে যান ধরাছোঁয়ার বাইরে।
বুধবার (২০ নভেম্বর) স্থানীয় সরকার বিভাগের উপসচিব মো. এমদাদুল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত এক দাপ্তরিক পত্রে কামাল হোসেন সেলিমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিয়ে সেটি অবহিত করার জন্য চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহাকে বলা হয়েছে।
স্থানীয় সরকার বিভাগ থেকে পাঠানো ওই পত্রে বলা হয়, ‘প্রকৌশলী মো. কামাল হোসেন সেলিম তার স্ত্রীর মালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান মেসার্স এএইচএন্ডএবি ইঞ্জিনিয়ার্সের নামে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনে ঠিকাদারি ব্যবসা পরিচালনা করেছেন। যা চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের কর্মচারী চাকরি বিধিমালা, ২০১৯ এর ধারা ৩৬ (এর) ২ (ঙ), সরকারি কর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯ বিধি ১৭ (৩) এবং স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) আইন, ২০০৯ এর পরিপন্থী ও শাস্তিযোগ্য অপরাধ।’
গত ৮ আগস্ট দৈনিক চট্টগ্রাম প্রতিদিনে ‘বেনামে ঠিকাদারি ব্যবসায় চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রকৌশলী‘ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমসহ বিভিন্ন মহলে সেটি ব্যাপক আলোচিত হয়।
প্রকৌশলী কামাল হোসেন সেলিমের স্ত্রী জেবুন্নেসা খানমের মালিকানাধীন মেসার্স এএইচ অ্যান্ড এবি ইঞ্জিনিয়ার্স নামের প্রতিষ্ঠানটি চসিকের কয়েকটি প্রকল্পে কাজ করেছে— এই মর্মে মিলেছে প্রমাণও। এর মধ্যে ওই ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানটি ২০১৬ সালে ৪ লাখ ৯৩ হাজার ৩০০ টাকায় বিবিরহাট গরুর বাজারের জন্য পিসি পোল স্থাপনপূর্বক মেটাল হ্যালাইড শেডের মাধ্যমে আলোকায়নের কাজ করেছে। ২০১৭ সালে ৪ লাখ ৮৫ হাজার টাকায় করেছে ৩৬ নং ওয়ার্ড বারিক বিল্ডিং পোল থেকে নিমতলা পর্যন্ত পোল সরবরাহ, উত্তোলন ও স্থাপনের কাজ, ৫ লাখ টাকায় করেছে চসিকের আওতাধীন নালা-খাল থেকে (অংশ-১) এস্কেভেটর দ্বারা মাটি উত্তোলন অপসারণ কাজ।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, গত ৮ মে মো. কামাল হোসেন সেলিমের দুর্নীতি তদন্ত করে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ে একটি প্রতিবেদন দেন চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের তৎকালীন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট উজালা রাণী চাকমা। পরবর্তীতে গত ১৬ জুলাই কামাল হোসেনের দুর্নীতির সম্পূরক প্রতিবেদন দাখিলের জন্য চট্টগ্রামের স্থানীয় সরকারের উপপরিচালক ইয়াসমিন পারভীন তিবরিজিকে একটি দাপ্তরিকপত্র দেন স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগের (সিটি করপোরেশন-২, শাখা) এমদাদুল হক চৌধুরী। ৮ আগস্ট মো. কামাল হোসেন সেলিমের ব্যাপারে তথ্য চেয়ে চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহাকে একটি পত্র দেন ইয়াসমিন পারভীন তিবরিজি।
চসিকের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মো. সামসুদ্দোহা ওই সময় চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মন্ত্রণালয় আমাদের কাছে জানতে চেয়েছিল বিষয়টি। আমরা বলেছি, ‘‘হ্যাঁ। কামাল হোসেনের স্ত্রীর নামে একটি প্রতিষ্ঠান চসিকে ঠিকাদারি ব্যবসা করছে। এ ক্ষেত্রে আগে কোন অনুমতি নেওয়া হয়নি। এরপর মন্ত্রণালয় আমাদেরকে আর কিছু জানায়নি।’
অভিযোগের ব্যাপারে ওই সময় কামাল হোসেন সেলিম মুঠোফোনে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমি কোন ঠিকাদারি ব্যবসা করি না। এগুলো অনেক আগেই বন্ধ হয়ে গেছে। সিটি করপোরেশন অ্যাকশন নিয়েছিল। এখন কেন এ বিষয়ে আবার প্রশ্ন করছেন?’
সিপি