‘স্টেশন মাস্টারের কাণ্ড’ হাজিরায় অগ্রিম সই, বদলি—অবৈধ দোকান বাণিজ্য

রেলমন্ত্রী নুরুল ইসলাম সুজন চট্টগ্রাম এসেছেন শনিবার। রেলমন্ত্রীর আগমনকে কেন্দ্র করে দোহাজারী, পটিয়া স্টেশনে কর্মরত কর্মকর্তা কর্মচারীদের যেখানে ঘুম হারাম হওয়ার উপক্রম, সেখানে ষোলশহর এবং ক্যান্টনমেন্ট স্টেশন মাস্টার গভীর ঘুমে মগ্ন! এ দুই কর্মকর্তার বিরুদ্ধে দায়িত্ব পালন না করে হাজিরা খাতায় অগ্রিম স্বাক্ষর করে বাসায় অবস্থান করার প্রমাণ মিলেছে। এছাড়াও রয়েছে অন্তহীন অভিযোগ।

শুক্রবার (৫ ফেব্রুয়ারি) সরেজমিনে দেখা যায়, ষোলশহর স্টেশন মাস্টার জাফর আহমেদ মজুমদার এবং বালুছড়া ক্যান্টনমেন্ট রেল স্টেশনের সহকারী স্টেশন মাস্টার তন্ময় চৌধুরী কর্মস্থলে ছিলেন অনুপস্থিত। কিন্তু দুজনই নিজেদের কর্মস্থলে উপস্থিত দেখিয়ে স্টেশনের হাজিরা খাতায় অগ্রিম স্বাক্ষর করেছেন।

শুধু তাই নয়, জাফর আহমেদ মজুমদার ষোলশহর স্টেশনে ফোন বন্ধ রেখে বাসায় অবস্থান করছেন বলে জানা যায়। ক্যান্টমেন্ট রেল স্টেশনে সহকারী মাস্টার তন্ময় চৌধুরীর অগ্রিম স্বাক্ষর করার বিষয়ে সত্যতা নিশ্চিত করেন কিম্যান রাবেয়া আক্তার।

জানা যায়, দীর্ঘদিন ধরে এ দুই স্টেশন মাস্টারের বিরুদ্ধে নানা অভিযোগ থাকলেও কোন ব্যবস্থা নেয়নি রেল কর্তৃপক্ষ।

সরেজমিনে ক্যান্টনমেন্ট স্টেশনে গিয়ে দেখা যায়, কিম্যান রাবেয়া আক্তার অফিস খুলে বসে আছেন। স্টেশন মাস্টার কোথায় জানতে চাইলে বাসায় বলে জানান। সহকারী স্টেশন মাষ্টার তন্ময় চৌধুরী একদিন আগেই (বৃহষ্পতিবার) পরের দিনের (শুক্রবার) হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন। কিম্যান রাবেয়া প্রথমে জানান, সহকারী স্টেশন মাস্টার ১১টায় এসে ১২টায় চলে যান। পরে তন্ময় চৌধুরীর অফিসে না আসার বিষয়টি স্বীকার করেন রাবেয়া।

স্টেশনে আরো দুয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী থাকার কথা থাকলেও কেউ নেই। এ স্টেশনের অপর সহকারী স্টেশন মাস্টার জাহানারা ও পোর্টার মোশারফ সম্পর্কে দেবর ভাবী। জাহানারার ছিল ছুটি, মোশারফ ছিলেন অনুপস্থিত।

সূত্র জানায়, মোশাররফ অফিসেই আসেন না। মাঝেমধ্যে এলেও ১১টায় এসে অগ্রিম স্বাক্ষর করে ১২টায় চলে যান। স্টেশনে রয়েছে ৭টি অবৈধ দোকান। স্টেশনের পিছনে রয়েছে আরো ১৫-২০টি অবৈধ দোকান। এসব দোকনের ভাড়া তুলেন স্টেশন মাস্টার। সহযোগিতা করেন পোর্টার মোশারফ।

ষোলশহর স্টেশনে দেখা যায়, স্টেশন মাষ্টার জাফর আহমেদের রুম তালাবদ্ধ। দায়িত্ব পালন করছেন সহকারী স্টেশন ম্যানেজার অভি সেন। স্টেশন ম্যানেজারের মুঠোফোনে কল করা হলে ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। তার বিরুদ্ধে বদলী বাণিজ্য, টিকেট কালোবাজারীসহ নানা অভিযোগ রয়েছে।

অভিযোগের ব্যাপারে জানতে ক্যান্টমেন্ট স্টেশন মাস্টার তন্ময় চৌধুরীর মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তার ফোনে সংযোগ পাওয়া যায়নি।

ষোলশহর স্টেশন মাস্টার জাফর আহমেদ মজুমদার চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাকে রেস্ট দেওয়া হয়েছিল।’ আপনাকে রেস্ট দেওয়া হয়ে থাকলে বিকেলে হাজিরা খাতায় স্বাক্ষর করেন কিভাবে এমন প্রশ্নের সঠিক উওর দিতে পারেননি তিনি। অন্যান্য স্টেশনে মন্ত্রীর ডেমু উদ্বোধনকে কেন্দ্র করে যেখানে ব্যস্ত সেখানে আপনাকে রেস্ট কে দিলো জানতে চাইলে তিনি জানান পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা স্নেহাশিস দাশগুপ্ত রেস্ট দেন।

রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় পরিবহন কর্মকর্তা স্নেহাশিষ দাশগুপ্ত জানান, ষোলশহর স্টেশন মাস্টার জাফর আহমেদ মজুমদারের বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ নাকি তার কাছে নেই।

অভিযোগ রয়েছে, স্নেহাশিষ দাশের সাথে যোগসাজশে বদলী, অস্থায়ী নিয়োগ বাণিজ্য চালিয়ে যাচ্ছেন জাফর আহমেদ মজুমদার। শুধু তাই নয় স্টেশন, অবৈধ বাজার থেকে দৈনিক আয়ের একটি অংশ এই পরিবহন কর্মকর্তা পান বলে জানান কর্মচারীরা।

কেএস/এমএহক

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!