স্কুলের ফি মওকুফের জন্য চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনের সঙ্গে দেখা করতে গিয়ে তোপের মুখে পড়েছেন চট্টগ্রামের একদল স্কুলছাত্রী। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ছড়িয়ে পড়া এই ঘটনার একটি ফুটেজে আর্থিক অসঙ্গতির কথা জানিয়ে বেতন মওকুফ চাওয়া এসব ছাত্রীদের সঙ্গে খুব উত্তেজিত হয়ে কথা বলতে দেখা যায় প্রশাসক সুজনকে। এ সময় শিক্ষার্থীদেরকে পড়তে হবে না বলেও মন্তব্য করেন সুজন।
বুধবার (২৩ ডিসেম্বর) ১৯ নম্বর দক্ষিণ বাকলিয়া ওয়ার্ড কার্যালয়ে চসিক প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করেন চর চাক্তাই সিটি কর্পোরেশন হাই স্কুলের এসব শিক্ষার্থীরা। করোনাকালে জমে যাওয়া স্কুলের বেতনের অর্ধেক টাকা মওকুফের দাবি নিয়ে চসিক প্রশাসকের কাছে গিয়েছিলেন এসব শিক্ষার্থীরা।
এ সময় শিক্ষার্থীদের মধ্যে জান্নাত নামে একজন ছাত্রীদের প্রতিনিধি হয়ে চসিক প্রশাসকের সঙ্গে কথা বলেন। জান্নাত চসিক প্রশাসককে জানান করোনার সময় স্কুল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় তাদের অনেক টাকা বকেয়া জমে গেছে। করোনায় আর্থিক সক্ষমতা কমে যাওয়ায় একসঙ্গে এই টাকা পরিশোধ তাদের পক্ষে সম্ভব না।
জবাবে সুজন ওই শিক্ষার্থীকে বলেন, একসঙ্গে দিবেন না কিস্তি করে করে দিবেন।
অভিভাবকরা টাকা দিতে পারছে না জানিয়ে এ সময় জান্নাত সুজনকে বলেন, ‘আমাদের গার্জিয়ান আমাদের বেতন দিচ্ছে না।’
উত্তরে সুজন বলেন, ‘গার্জিয়ানরা আপনাদের ভালো চায় না, আপনাদের গার্জিয়ানরা আপনাদের ভালবাসে না। আপনাদের গার্জিয়ানদের সব কিছুর টাকা আছে শুধু স্কুলের বেতন দেওয়ার টাকা নাই। শুনেন বাবা পৃথিবীতে ফ্রি বলে কোনো জিনিস নাই।
আপনাদের সব ভালো, আপনাদের আল্লাহ পাকে সব ইয়ে দিসে। আমি অনুরোধ করবো আপনারা মেহেরবানী করে যা পারেন ২ কিস্তি, ৩ কিস্তি, ৪ কিস্তিতে দেন।’
সুজন শিক্ষার্থীদের বলেন, ‘সেশন ফি বাদে, স্কুলে যে পরীক্ষার সময় ফি নেয় ওগুলা মাফ। শুধু বেতনটা দেন। সুবিধা মতো কিস্তিতে দেন।’
তিনি বলেন, ‘আপনের সিবিচে যাওয়ার টাকা আছে, হোটেলে যাওয়ার টাকা আছে, গায়ে হলুদের টাকা আছে, এটার টাকা আছে, ওটার টাকা আছে শুধু স্কুলের বেতন দেওয়ার টাকা নাই।’
পরে জান্নাত সুজকে জানান, গরীব শিক্ষার্থীদের যে ১৫ % ছাড় দেওয়ার নির্দেশ চসিক প্রশাসক দিয়েছেন সেটিও মানছে না স্কুলগুলো। ১৫% ছাড় চেয়ে এপ্লিকেশন দেওয়া হলেও সেগুলো গ্রহণ করছে না স্কুল কর্তৃপক্ষ।
এ সময় ক্ষেপে গিয়ে সুজন বলেন, ‘১৫%-১০% বুঝি না, বাংলাদেশের মানুষ যদি বলে যে মোক্ত পাইসে তাইলে বিষ খাইতেও রাজি আছে। মানে দুনিয়াতে সব কিছুর টাকা আছে শুধু স্কুলের বেতনের টিয়া নাই। সিটি কর্পোরেশনের বাইরে কোনো স্কুল-কলেজ আছে, সবাই টাকা নিয়া ফেলছে। শুধু ঠেলাঠেলি করে, এডে পয়সাও কম দিতেও নো চা। ‘
এভাবে চললে শিক্ষকদের বিদায় করে দিতে হবে মন্তব্য করে সুজন জান্নাতকে বলেন, ‘তাইলে মাস্টার বিদায় করে দ, সব বিদায় করে দ।’
পাল্টায় জান্নাত সুজকে জিজ্ঞেস করেন, ‘আমরা পড়বো কিভাবে ?’
এর উত্তরে সুজন বলেন, ‘পড়তে হবে না আপনাদেরকে। আপনাদের লেখা পড়ার দরকার নাই।’
সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এই কথপোকথনের একটি ভিডিও ছড়িয়ে পড়লে এটি নিয়ে তুমূল সমালোচনা শুরু হয়। নেটিজেনরা বলছেন যত যাই হোক শিক্ষার্থীদের সঙ্গে এভাবে কথা বলা উচিত হয়নি প্রশাসক সুজনের।
এই বিষয়ে কথা বলতে জান্নাতের মা ফিরোজা বেগমের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান, আমার স্বামী পেশায় একজন দর্জি। করোনায় উনার আয় রোজগার অনেক কমে গেছে। স্কুলের বেতন জমে ৩৫০০ টাকা জমে যাওয়ায় এটি পরিশোধ করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে তাদের জন্য। এই কারণে কিছু টাকা ছাড়ের জন্য স্কুলের শিক্ষকদের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তারাই পরামর্শ দেন প্রশাসকের সঙ্গে দেখা করতে। এজন্য শিক্ষার্থীদের নিয়ে সেখান যান তারা। তবে প্রশাসক ছাড় দিতে রাজি হননি।
তবে প্রশাসকের সাথে কি কথা হয়েছে এই প্রসঙ্গে কোনো কথা বলতে রাজি হননি ফিরোজা বেগম।
তবে স্কুলের বেতন নিয়ে অভিভাবকদের অজুহাত দেওয়ার বিষয়টি দৃষ্টিকটু উল্লেখ করে প্রবীণ শিক্ষাবিদ ও চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের (চবি) সাবেক অধ্যাপক ড. গাজী সালেহ উদ্দিন বলেন, ‘দেশেতো কিছু থেমে নেই। করোনাও পেপার পত্রিকা আর টেলিভিশন ছাড়া কোথাও নেই। এছাড়া করোনার কারণে কারো বেতন দেওয়া কি বন্ধ হয়েছে? স্কুলের বেতন দিতে কেন এই অজুহাত তোলা হয়। বেতন না দিলে স্কুলগুলো চলবে কিভাবে?’
তবে এই বিষয়ে সুজনের বক্তব্য জানতে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলেও কোনো কথা বলতে রাজি হননি চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন।
এআরটি/এএইচ