সন্দ্বীপের সৌরভ হত্যা মামলার রহস্য বের করতে পেরেছে বলে দাবি করেছে সন্দ্বীপ থানা পুলিশ। এই হত্যা মামলায় ৭ আসামিকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সন্দ্বীপ থানা পুলিশ বলছে, পরকীয়া, সম্পত্তির দ্বন্দ্ব ও পূর্ব শত্রুতার জেরে কামরুল হাসান সৌরভকে হত্যা করা হয়েছে। তবে পুলিশের এ দাবি মানতে নারাজ সৌরভের স্বজনরা। তারা বলছেন এখনো পর্যন্ত গ্রেপ্তারকৃত কারোর সাথেই সম্পত্তির দ্বন্দ্ব ছিল না। এমনকি সংবাদ সম্মেলনে এই মামলার অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য আড়াল করে গেছে পুলিশ। এসব বলে মামলাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা হচ্ছে বলেও শংকা প্রকাশ করেছেন নিহত সৌরভের স্বজনরা।
এমনকি এই মামলার জের ধরে সন্দ্বীপ থানার একজন উপ পরিদর্শকেও বদলি করে দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সৌরভের স্বজনরা। তারা বলেন, এই মামলার প্রথমিক তদন্তে উপ-পরিদর্শক হেলাল খুব সক্রিয় ভূমিকা রেখেছিলেন। মূল রহস্য উৎঘাটনে তিনি বেশ গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ নিয়েছিলেন। এর মাঝেই হুট করে তাকে বদলি করে দেয়া হলো।
সোমবার (২৩ ডিসেম্বর) সন্দ্বীপ থানা পুলিশ আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সন্দ্বীপ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা শেখ শরীফুল ইসলাম বলেন, ‘ক্লুলেস (সূত্রবিহীন) এ মামলায় প্রযুক্তি ব্যবহার করে ও একাধিক অভিযান চালিয়ে জড়িত ৭ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। গ্রেপ্তারকৃতদের মধ্যে রাব্বী নামে একজন ইতোমধ্যে আদালতে ১৬৪ ধারায় স্বীকারোক্তি দিয়েছে। রাব্বির জবানবন্দিতে জানা গেছে, জায়গা সম্পত্তি, পরকীয়া সম্পর্ক এবং পূর্ব শত্রুতার জের ধরে পরিকল্পিতভাবে সৌরভকে হত্যা করে তারা।’
তবে সৌরভের স্বজনদের কয়েকজনের সাথে কথা বলে জানা গেছে, বিভিন্ন সময়ে এই মামলার বিষয়ে পুলিশের তরফ থেকে যেসব তথ্য তাদের জানানো হয়েছে তার অনেক কথায় চেপে যাওয়া হয়েছে সংবাদ সম্মেলনে। বিশেষ করে মূল কারণ বাদ দিয়ে যেগুলোকে সৌরভ হত্যার কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে তাতে করে তারা আশঙ্কা করছেন যে এই মামলাটিকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার চেষ্টা চালানো হচ্ছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে সৌরভের পরিবারের একজন সদস্য চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘মূলত ইয়াবা ব্যবসার জের ধরেই সৌরভকে হত্যা করা হয়েছিল এমনটা বলা হয়েছিল আমাদের। সে এলাকায় ইয়াবা ব্যবসায় বাধা দিত। কয়েকজনকে গ্রেপ্তারও করিয়ে দিয়েছিল। তাছাড়া তার মোবাইলে থাকা একটা ভিডিওর কথাও বলা হয়েছিলো পুলিশের পক্ষ থেকে। এখন যেগুলো বলেছেন তার সাথে সেসবের নূন্যতম কোন সম্পর্কও নেই। আমাদের বলা হয়েছিল এসবের সাথে একজন প্রভাবশালী নেতাও জড়িত আছেন। এখন এটিকে যেভাগে পরকীয়া আর সম্পত্তির দ্বন্দ্বের ঘটনা বানিয়ে দেয়া হলো তাতে মনে হচ্ছে ঐ নেতাকে আড়াল করার একটা চেষ্টা চলছে।
সৌরভের ভাই মেহেদি হাসান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাকে সংবাদ সম্মেলনে থাকতে দেয়া হয়নি। তাই সংবাদ সম্মেলনে কি বলেছেন সে বিষয়ে আমার জানা নেই। তবে আমাদের সাথে কারোর সম্পত্তির বিরোধ ছিল না। যার জের ধরে সৌরভকে হত্যা করা হতে পারে। এসব বিষয়ে আমি তদন্ত কর্মকর্তার সাথে কথা বলবো।’
এসআই হেলাল চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমাদের ভাই বদলির চাকরি। নিয়ম অনুযায়ী আমার সাথে আলাপ করেই আমাকে বদলি করা হয়েছে। আমার বদলির সাথে সৌরভ হত্যা মামলার সম্পর্ক নাই।’
মামলার প্রাথমিক তদন্তে তার ভূমিকা ও মামলার অনেক তথ্য গোপন করা হয়েছে বলে সৌরভের পরিবারের সদস্যদের অভিযোগ আছে, সে বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এসব বিষয়ে আপনারা তদন্ত কর্মকর্তার সাথে কথা বলুন। উনিই ভাল বলতে পারবেন।’
তবে মামলাকে ভিন্ন খাতে প্রবাহিত করার অভিযোগ অস্বীকার করে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও সন্দ্বীপ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) আব্দুল হালিম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা এখনো তদন্তের প্রাথমিক পর্যায়ে আছি। তদন্তের স্বার্থে অনেক কথাই বলা সম্ভব না। আর সম্পত্তির দ্বন্দ্বের কথা একজন আসামি আদালতে জবানবন্দিতে বলেছেন। তবুও আমরা এটি খতিয়ে দেখবো। মামলাকে ভিন্নখাতে প্রবাহিত করার কিংবা কাউকে আড়াল করার প্রশ্নই আসে না। এই মামলায় যাদের জড়িত থাকার তথ্য পাওয়া যাবে তাদের বিরুদ্ধেই ব্যবস্থা নেয়া হবে।’
প্রসঙ্গত, ২০ নভেম্বর মগধরা ১নম্বর ওয়ার্ডের জনৈক আক্তার হোসেনের পুকুর পাড় থেকে হাত পা বাঁধা অবস্থায় সৌরভের লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। এই ঘটনায় সৌরভের ভাই মেহেদী হাসান বাদি হয়ে অজ্ঞাতনামা ১০/১৫ জনকে আসামি করে সন্দ্বীপ থানায় একটি হত্যা মামলা দায়ের করে।
এসএস