সেমিস্টার ফির জন্য অনলাইনে ক্লাস করতে দিচ্ছে না চট্টগ্রাম ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি

রুমানা রহমান (ছদ্মনাম)। চট্টগ্রাম ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিআইইউ) স্কুল অব ল বিভাগের সপ্তম সেমিস্টারের শিক্ষার্থী। মে মাসে অনলাইনে অনুষ্ঠিত ষষ্ঠ সেমিস্টারের পরীক্ষায় তিনি অংশ নিয়েছেন। সেমিস্টার ফি জমা না দেওয়ায় জুন মাসে রেজাল্ট দেখতে গিয়ে দেখেন তার আইডি ব্লক করা। ফলে তিনি এখন পরের সেমিস্টারের ক্লাসেও অংশ নিতে পারছেন না।

মোহাম্মদ রহিম (ছদ্মনাম) নামের একই সেমিস্টারের আরেক শিক্ষার্থী বলেন, আমাদের ষষ্ঠ সেমিস্টার ছিল জানুয়ারি-জুন পর্যন্ত। মার্চ মাসের অর্ধেক ক্লাস হওয়ার পর করোনার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ হয়ে যায়। পরে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে একটা অনলাইন আইডি দেয়। সেটাতে লগইন করে আমরা পরীক্ষায় অংশ নিই। পরে রেজাল্ট দেখতে যখন আইডিতে লগইন করতে যাই, তখন দেখি আইডি ব্লক। পরবর্তীতে তাদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা বলে আপনি সেমিস্টার ফি দেন নাই। ফি জমা দিলে আইডি খুলে যাবে। পরে আমি টাকা জমার ব্যাংক স্লিপটা হারিয়ে ফেললে তাদেরকে একটা স্লিপ দিতে বলি। তারা আমাকে জানায় আপনি আপনার বন্ধুর স্লিপ দিয়ে জমা দেন। পরে আমি বলি অন্তত আইডিটা খুলে দেন, আমি সেখান থেকে প্রিন্ট করে নেবো। তারা তাও করলো না। এখন আমি রেজাল্টও দেখতে পারছি না, আবার একটা সেমিস্টার লস যাচ্ছে। মানসিকভাবে খুব টেনশনে আছি। কী করবো বুঝতেছি না।’

বিবিএর একাদশ সেমিস্টারের এক ছাত্রী বলেন, ‘সেমিস্টার ফির জন্য আমাদের আইডি ব্লক করে রাখা হয়েছে। গত মাসের শুরুতে আমি অফিসে ফোন দিয়ে আইডি ব্লকের কথা বলি। তারা বলল আমাদের কিছু করার নাই। আপনাকে এসে সব টাকা পেমেন্ট করে ঠিক করে যেতে হবে। পরে আমি বললাম আমাদের এলাকা তো রেড জোন করা হয়েছে। তারা তবুও বলে আপনি এসে ঠিক করে যান। পরে আমি আমার বাবাকে নিয়ে এসে সেমিস্টার ফি জমা দিই। পরবর্তীতে তারা আইডির ব্লক খুলে দেয়।’

ওই শিক্ষার্থী আরও বলেন, ‘গ্রামের বাড়ি থেকে জামালখান যাওয়ার পর আমরা নিজেরাই করোনা সাসপেক্টেড হয়ে যাই, গলা ব্যথা শুরু হয়। আল্লাহর রহমতে দুই দিনের গরম পানি খাওয়া ও অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলায় সুস্থ হই। আমরা যদি করোনায় আক্রান্ত হয়ে যেতাম। তবে এর দায়ভার কি ইন্ডিপেন্ডেন্ট ইউনিভার্সিটি গ্রহণ করতো’— প্রশ্ন রাখেন এই শিক্ষার্থী।

শুধু রুমানা বা রহিমই নন, সেমিস্টার ফি দিতে না পারায় এমন বিপাকে পড়েছেন এই বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও অনেক শিক্ষার্থী। যদিও করোনাকালে সেমিস্টার ফি নিয়ে শিক্ষার্থীদের জোরাজুরি না করতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে কঠোরভাবে নিষেধ করে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)।

চট্টগ্রাম ইন্ডিপেন্ডেন্ট বিশ্ববিদ্যালয়ের (সিআইইউ) শিক্ষার্থীরা জানান, জানুয়ারি থেকে এপ্রিল মাস সেমিস্টারের মেয়াদ হলেও ক্লাস হয়েছে মাত্র আড়াই মাস। তবুও তাদের থেকে ফুল সেমিস্টার ফি দিতে হচ্ছে। করোনার এই কঠিন সময়ে এমনিতেই সবার আর্থিক অবস্থা খারাপ। তার ওপর বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের এমন আচরণ তাদেরকে মানসিকভাবে অসুস্থ করে তুলছে বলেও তারা জানান।

এদিকে অনলাইনে অনুষ্ঠিত হওয়া ক্লাস-পরীক্ষা নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

এক শিক্ষার্থী বলেন, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের স্টুডেন্টরা যে কোর্স এক বছরে শেষ করে তা আমাদের কোর্স প্ল্যানে ১ মাসে শেষ করার কথা উল্লেখ আছে। এই একমাসে কীভাবে একটা কোর্স শেষ হবে?

অনলাইনে পরীক্ষা পদ্ধতি নিয়ে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, ‘অনলাইনে পরীক্ষার ক্ষেত্রে স্যাররা কিছু প্রশ্ন দিয়েছে, নির্দিষ্ট কয়েক ঘন্টা পর বই খুলে আমরা উত্তর পাঠিয়েছি। আর অ্যাসাইনমেন্টের ক্ষেত্রে একই। প্রশ্নের উত্তর টাইপ করে মেইলে পাঠাতে হয়েছে। একইভাবে দিয়ে দেওয়া হয়েছে প্রেজেন্টেশন ও উপস্থিতির ফুল নাম্বার। এভাবে আমাদের মেধার কতটুকুই বা মূল্যায়ন হবে?’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার (ভারপ্রাপ্ত) আনজুমান বানু লিমা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন,
‘এ ধরনের কোন ঘটনা আমার জানা নেই। এ ধরনের ঘটনা ঘটার কথাও না। স্টুডেন্টদের কারও এমন সমস্যা থাকলে ফ্যাকাল্টিদের সাথে যোগাযোগ করতে বলা আছে। ’

এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে ইউজিসির বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় বিভাগের পরিচালক ড. মো. ফখরুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘প্রমাণসহকারে অভিযোগ পেলে আমরা ব্যবস্থা নেবো।’

ইউজিসি সূত্রে জানা যায়, গত ৭ মে ইউজিসি করোনা পরিস্থিতিতে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে অনলাইনে ক্লাস ও পরীক্ষা এবং মূল্যায়ন সংক্রান্ত একটি বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করে। এতে ১৪টি নির্দেশনা দেওয়া হয়। যার মধ্যে ৪, ৫, ৬ ও ৭ নং অনুচ্ছেদে আর্থিক বিষয়ে মানবিক দিক বিবেচনাসহ বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে বিভিন্ন সুযোগ দিতে বলা হয়।

পরবর্তীতে একই বিষয়ে ২১ জুন ইউজিসি থেকে দেওয়া দ্বিতীয় বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ৭ মে জারি করা বিজ্ঞপ্তির ৪, ৫, ৬ ও ৭ নং অনুচ্ছেদের কেউ ব্যত্যয় ঘটালে যেন ইউজিসিকে মেইল করে অভিযোগ জানানো হয়।

৪ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়, করোনা সংকটের কারনে আর্থিক অস্বচ্ছলতায় পতিত শিক্ষার্থীদের মানবিক দিক বিবেচনায় রেখে বিদ্যামান সেশন ফি/টিউশন ফি মওকুফ/হ্রাস/ইনস্টলমেন্টে প্রদানের সযোগ রাখতে হবে।

৫ নং অনুচ্ছেদে বলা হয়, করোনা সংকটকালীন সময়ে সৃষ্ট আর্থিক পরিস্থিতি বিবেচনায় শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে এসময় ফি আদায়ে মানসিক চাপ প্রদান করা সমীচীন নয় বিধায় তা পরিহার করে তাদের সাথে মানবিক আচরণ করতে হবে।

৬ অনুচ্ছেদে বলা হয়, বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ এর ৯(৪) ধারা অনুসরণপূর্বক বিনা বেতনে অধ্যয়নের সুযোগ অবারিত করতে হবে।

একইভাবে ৭ নং অনুচ্ছেদেও আর্থিক বিষয়ের কথা বলা হয়।

এমআইটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!