সেমির স্বপ্ন পূরণের নাটাই এখন পুরোটায় বাংলাদেশের হাতে নেই। তবে যেটি হাতে আছে তা হচ্ছে ভারত-পাকিস্তানের বিপক্ষে জয় নিয়ে নিজেদের অবস্থান পাকাপোক্ত করা। তাই সেমিফাইনালে খেলার আশা বাঁচিয়ে রাখতে দ্বাদশ বিশ্বকাপে নিজেদের অষ্টম ম্যাচে শক্তিশালী ভারতের বিপক্ষে জয় ছাড়া আর কোন উপায় নেই বাংলাদেশের। ভারতের বিপক্ষে জিতলেই জয়ের আশা বেঁচে থাকবে, আর হেরে গেলে লিগ পর্ব থেকেই এবারের বিশ্বকাপ পর্ব শেষ করতে হবে বাংলাদেশকে। জয় ছাড়া অন্য কোন পথ খোলা না থাকায়, ভারতের বিপক্ষে নিজেদের সেরাটা দিয়ে ম্যাচ জয় করাই এখন একমাত্র লক্ষ্য মাশরাফি বাহিনীর। এমন লক্ষ্য নিয়ে আজ মঙ্গলবার বার্মিংহামের এডজবাস্টনে ভারতের বিপক্ষে খেলতে নামবে টাইগাররা। বাংলাদেশ সময় বিকেল ৩টা ৩০ মিনিটে শুরু হবে ম্যাচটি।
রোববার ভারতের বিপক্ষে ইংল্যান্ডের জয়ে বাংলাদেশের সামনে কঠিন এক সমীকরণ দাঁড়িয়েছে। লিগ পর্বে নিজেদের শেষ দুই ম্যাচে তো জিততেই হবে। সেই সাথে লিগ পর্বে ইংল্যান্ডের শেষ ম্যাচে হারতেই হবে। এই হিসাব-নিকাশ মিলে গেলেই প্রথমবারের মত বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলার আশা পূরণ হবে বাংলাদেশের।
লিগ পর্বে বাংলাদেশের শেষ দুই ম্যাচ ভারত ও পাকিস্তানের বিপক্ষে। ৭ খেলায় ৩টি করে জয়-হারে ও ১টি পরিত্যক্ত ম্যাচে ৭ পয়েন্ট নিয়ে টেবিলের ষষ্ঠস্থানে বাংলাদেশ। শেষ দুই ম্যাচ জিতলে বাংলাদেশের পয়েন্ট হবে ১১। আর যদি ইংল্যান্ড নিজেদের শেষ ম্যাচে নিউজিল্যান্ডের কাছে হেরে যায় তবে স্বাগতিকদের পয়েন্ট থাকবে থাকবে ১০-এই। সেক্ষেত্রে পয়েন্ট টেবিলের চতুর্থস্থানে উঠে যাবে বাংলাদেশ। তাদের উপরে থাকবে অস্ট্রেলিয়া-ভারত-নিউজিল্যান্ড। বাংলাদেশ চতুর্থস্থান দখল করে সেমিফাইনালে খেলবে। আর পঞ্চম ও ষষ্ঠস্থানে থেকে লিগ পর্ব থেকে বিশ্বকাপ শেষ করবে যথাক্রমে স্বাগতিক ইংল্যান্ড ও পাকিস্তান।
এ জন্য সবার আগে শেষ দুই ম্যাচে জিততেই হবে বাংলাদেশকে। সেই সাথে ইংল্যান্ডের হার কামনা করা ছাড়া আর কোন উপায় নাই টাইগারদের। আর যদি ইংল্যান্ড নিজেদের শেষ ম্যাচও জিতে যায় তবে তারা সেমিফাইনালে চলে যাবে। পাশাপাশি বাংলাদেশ দু’টি ম্যাচ জিতে আর ভারত যদি অন্তত আরও এক পয়েন্ট পেয়ে যায় তবে নিউজিল্যান্ডের সাথে টাইগারদের পয়েন্ট সমান হবে। তখন রান রেটে হিসেব করতে হবে। বর্তমানে রান রেটে নিউজিল্যান্ডের চেয়ে পিছিয়ে রয়েছে বাংলাদেশ। শেষ দুই ম্যাচের রান রেট বেড়ে গেলেই নিউজিল্যান্ডকে টপকানো সম্ভব হবে বাংলাদেশের।
তবে রান রেট বা অন্য সমীকরনের না যেতে চাইলে নিজেদের শেষ দুই ম্যাচ জিততেই হবে বাংলাদেশকে। পাশাপাশি শেষ ম্যাচে ইংল্যান্ডের হার কামনা করতে হবে টাইগারদের। তবেই সেমিফাইনালে পা দিবে মাশরাফির দল। শেষ দুই ম্যাচের প্রথমটি ভারতের বিপক্ষে।
তাই এখন ভারতের বিপক্ষে নিজেদের পরিকল্পনা নিয়ে ব্যস্ত বাংলাদেশ। আগের ম্যাচেই আফগানিস্তানকে ৬২ রানে হারিয়েছে টাইগাররা। এছাড়া দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজকে হারানোর মত সাফল্য রয়েছে বাংলাদেশের। প্রোটিয়া ও ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে ৩শর বেশি রান করে হারায় বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে প্রথমে ব্যাট করে ৬ উইকেটে ৩৩০ রান করেছিলো বাংলাদেশ। এরপর দক্ষিণ আফ্রিকাকে ৩০৯ রানে আটকে দিয়ে ২১ রানে জয় তুলে নেয় বাংলাদেশ।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে ৩২২ রানের বিশাল টার্গেট পায় বাংলাদেশ। সাকিব আল হাসানের অপরাজিত ১২৪ ও লিটন দাসের অপরাজিত ৯৪ রানে ৭ উইকেটে ম্যাচ জিতে টাইগাররা। দক্ষিণ আফ্রিকা-ওয়েস্ট ইন্ডিজ-আফগানিস্তানের বিপক্ষে জিতলেও নিউজিল্যান্ড-ইংল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার কাছে হারে বাংলাদেশ। শ্রীলংকার সাথে বৃষ্টির কারনে পয়েন্ট ভাগাভাগি করে টাইগাররা।
ভারতের বিপক্ষে আত্মবিশ্বাসী হয়ে মাঠে নামবে বাংলাদেশ। শেষ ম্যাচ জয়ের সুবাদে। তবে মনের মধ্যে শঙ্কা বা আতঙ্ক ঠিকই থাকবে। কারন হেরে গেলেই বিশ্বকাপ মিশন শেষ করতে হবে বাংলাদেশকে। এসব চিন্তা দূরে রেখে দুর্দান্ত পারফরমেন্সের অপেক্ষায় বাংলাদেশ। অতীতেও এমন রেকর্ড গড়ার স্মৃতি আছে বাংলাদেশের। দেয়ালে পিঠ ঠেকে যাবার পর ম্যাচ ঘুড়ে দাঁড়ানোর নজির গড়েছে মাশরাফির দল। কালও নিজেদের আশা বাঁচিয়ে রাখতে নিজেদের উজার করে দিবে মাশরাফি-সাকিব-তামিমরা, সেই অপেক্ষায় বাংলাদেশের ক্রিকেট সমর্থকরা।
ব্যাটিং লাইন-আপে দুর্দান্ত ফর্মে রয়েছেন সাকিব আল হাসান। ৬ ম্যাচের ৬ ইনিংসে ২টি সেঞ্চুরি ও ৩টি হাফ-সেঞ্চুরিতে ৪৭৬ রান নিয়ে সর্বোচ্চ রানের তালিকায় তৃতীয়স্থানে রয়েছেন সাকিব। বল হাতেও কম যাননি সাকিব। নিয়েছেন ১০টি উইকেট।
সাকিবের পর বাংলাদেশের পক্ষে সবচেয়ে বেশি রান রয়েছে উইকেটরক্ষক মুশফিকুর রহিমের। ৬ ইনিংসে ১টি সেঞ্চুরি ও ২টি হাফ-সেঞ্চুরিতে ৩২৭ রান তার। টপ-অর্ডারে রানে ফিরেছেন ওপেনার তামিম ইকবাল। ছোট ছোট ইনিংস দিয়ে বিশ্বকাপ শুরু করেছিলেন তামিম। নটিংহামে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৬২ রানের ইনিংস খেলে এবারের আসরে প্রথম হাফ-সেঞ্চুরির দেখা পান তামিম।
মিডল-অর্ডারে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ১টি হাফ-সেঞ্চুরিতে করেছেন ১৯০ রান। তবে ভারতের বিপক্ষে তার খেলা নিয়ে রয়েছে সংশয়। এখনো মাহমুদুল্লাহ’র ব্যাপারে নিশ্চিত করে কিছুই বলতে পারছে না বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট। তবে সাকিব-মুশফিক-তামিম-মাহমুদুল্লাহ’র সাথে লিটন-সৌম্য রানে ফিরলে বাংলাদেশের বড় স্কোর গড়া বা বড় টার্গেট স্পর্শ করা অসম্ভব কিছু হবে না।
বোলিং-এ বাংলাদেশের সাকিব-মোহাম্মদ সাইফউদ্দিন-মুস্তাফিজুর রহমান এখন পর্যন্ত ১০টি করে উইকেট নিয়েছেন। তাদের সাথে অফ-স্পিনার মোসাদ্দেক হোসেনের স্পিন ভালো কাজে দিবে। আগের ম্যাচগুলোতে মোসাদ্দেকের ব্রেক-থ্রু বেশ কয়েকবারই বাংলাদেশকে ম্যাচে ফিরিয়েছিলো। তবে এখনও নিজেকে মেলে ধরতে পারেননি অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা। ৬ ম্যাচে মাত্র ১টি উইকেট টাইগার নেতার।
তবে এবার প্রতিপক্ষ ভারত বলে কথা। ভারতের বিপক্ষে মাশরাফির জ্বলে উঠার রেকর্ড রয়েছে। ২০০৪ ও ২০০৭ সালে স্মৃতি আজও রোমাঞ্চিত করে মাশরাফিকে। ২০০৪ সালে দ্বিপক্ষীয় সিরিজের দ্বিতীয় ম্যাচে ৯ ওভারে ৩৬ রানে ২ উইকেট নিয়ে ম্যাচ সেরা হয়েছিলেন তিনি। এরপর ২০০৭ সালের বিশ্বকাপের ভারতের বিদায় ঘন্টা বাজিয়েছিলেন মাশরাফি। ৩৮ রানে তার ৪ উইকেট শিকারে ভারতকে ৫ উইকেটে হারায় বাংলাদেশ। বাংলাদেশের কাছে হেরেই টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল ভারতকে। তাই ভারতের বিপক্ষে মাশরাফির আরও একটি ঝলক দেখার অপেক্ষায় বাংলাদেশ। আর অধিনায়কের হাত ধরেই স্বপ্ন পূরণের আশা বেচে থাকুক বাংলাদেশের, এমনটাই প্রত্যাশা সমর্থকদের।