সেন্টমার্টিনে আটকেপড়া ১২০০ পর্যটককে হোটেলে ছাড়ের নির্দেশ

ঘূর্ণিঝড় বুলবুল— এ সৃষ্ট দৃর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে সেন্টমার্টিনে আটকা পড়েছেন প্রায় ১২০০ পর্যটক। এরমধ্যে প্রায় পর্যটক ২৫০ জন শিক্ষার্থী। শুক্রবার সন্ধা থেকে সেন্টমার্টিনে থেমে থেমে বৃষ্টিপাত হচ্ছে।

জানা গেছে, সেন্টমার্টিনে ভ্রমণে গিয়ে আটকে পড়া পর্যটকের জন্য ৫০ শতাংশ ছাড় দিতে হোটেল রেস্ট্যুরেন্টগুলোকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। জেলা প্রশাসনের নির্দেশে ইউনিয়ন পরিষদের পক্ষ থেকে শনিবার (৯ নভেম্বর) দ্বীপে মাইকিং করে তা প্রচার করা হয়েছে। এছাড়া পর্যটকদের তেমন কোন সমস্যা নেই বলে জানান দ্বীপের স্থানীয় প্রশাসন।

আটকে যাওয়া পর্যটকদের ৫০ শতাংশ ছাড় দিতে সেন্টমার্টিনে মাইকিং।
আটকে যাওয়া পর্যটকদের ৫০ শতাংশ ছাড় দিতে সেন্টমার্টিনে মাইকিং।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমদের নেতৃত্বে ইউপি সদস্য, কোস্টগার্ড, গ্রাম পুলিশের সদস্যরা যৌথভাবে বিভিন্ন এলাকা পরিদর্শন ও মাইকিং করেন এবং হোটেল মালিকদের মূল্য ছাড়ের নির্দেশ দেন। অন্যথায় আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলেও জানান।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, সেন্টমার্টিনে ৭ নভেম্বর ভ্রমণে আসা পর্যটক বুলবুল ঘূর্ণিঝড়ের কারণে পরের দিন টেকনাফে ফিরতে পারেননি। ২ দিন পেরিয়ে গেলেও সেন্টমার্টিন ত্যাগ করতে পারেননি। সেখানে প্রায় ১২০০ পর্যটক আটকা পড়েছেন।

সেন্টমার্টিন হোটেল মোটেল ব্যবসায়ী মো. আব্দুল্লাহ জানান, পর্যটন মৌসুম শুরু হয় নভেম্বর মাস থেকে। আর এ সময় প্রচুর পর্যটকের আগমন ঘটে দ্বীপে। নভেম্বরের ৮-৯ তারিখ সাপ্তাহিক ছুটি ও রোববার ঈদে মিলাদুন্নবীর ছুটি থাকায় দ্বীপের শতাধিক হোটেল মোটেল অগ্রিম বুকিং হয়ে গিয়েছিল। হঠাৎ বুলবুলের কারণে সব এলোমেলো হয়ে গেলো।

সেন্টমার্টিন ইউপি মেম্বার হাবিব খান জানান, আটকা পড়া পর্যটকরা সারাদিন সৈকতে ও জেটিতে ঘুরাঘুরি করে সময় অতিবাহিত করেন। সাগরের উত্তাল রূপ দেখে অনেক পর্যটক হতভম্ব হয়ে ও ভীত হয়ে পড়েছেন।

সেন্টমার্টিন ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান নুর আহমদ বলেন, দ্বীপে আটকা পর্যটকদের যাতে কোন অসুবিধা না হয় এ ব্যাপারে সব ধরনের সহযোগীতা করা হচ্ছে। সেন্টমার্টিন কোস্টগার্ড বাহিনীর সদস্যরাও আমাদেরকে সহযোগিতা করছেন।

টেকনাফ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা সাইফুল ইসলাম বলেন, সেন্টমার্টিনে আটকা পড়া পর্যটকদের সার্বক্ষণিক খোঁজ খবর নেওয়া হচ্ছে। ইউনিয়ন পরিষদের মাধ্যমে তাদেরকে সার্বিক সেবা ও সহযোগিতা দেওয়া হচ্ছে। ঘুর্ণিঝড় পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে পর্যটকদের ফিরিয়ে আনা হবে বলে জানান তিনি।

এছাড়া ঘুর্ণিঝড় বুলবুল মোকাবেলায় উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে সব ধরনের প্রস্তুতি রয়েছে বলেও জানান তিনি। প্রস্তুত রয়েছে টেকনাফের ৬৪টি সাইক্লোন শেল্টার সেন্টার।

এদিকে সেন্টমার্টিনে আটকা পড়েছে রংপুর ক্যাডেট ও ঢাবির ছাত্রসহ ভ্রমণ পিপাসু অনেক শিক্ষার্থী। তারা এ পরিস্থিতিতে ভীত হয়ে পড়েছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, হোটেল ব্লু মেরিন রিসোর্টে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় প্রাণী বিদ্যা বিভাগের ৯০ জন ও কোরাল ভিউ রিসোর্টে রংপুর ক্যাডেট কলেজের ছাত্র ৭৪ জন, সানসেট ভিউ রিসোর্টে খুলনা প্রকৌশলী বিশ্ববিদ্যালয় টেক্সটাইল বিভাগের ৪৫ জন ও ইউ বির ছাত্র ১৩ জন, ফাহাদ রিসোর্টে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিকতা বিভাগের ২৬ জন শিক্ষার্থী রয়েছেন।

এছাড়া সী ভিউ, ওশান ব্লু শাহজালাল রিসোর্ট, সাইরি রিসোর্ট, সমুদ্র কুটির, সেন্টমার্টিন রিসোর্ট অবকাশ, বাগান বাড়ি, স্যান্ডশুর হোটেল সহ বিভিন্ন হোটেল রিসোর্টে অন্যান্য পর্যটকরা রয়েছেন।

শেরপুর সদরের বাসিন্দা পেশায় চিকিৎসক কামরুন্নাহার অনু (পিথি) (৩৯) জানান, আমরা পরিবারের বাচ্চাসহ ৭জন সেন্টমার্টিনে বেড়াতে এসেছি। রাত্রিযাপন করেছি হোটেল সাকিনাতে। আমার আব্বা অসুস্থ সময়মত সেন্টমার্টিন থেকে ফিরতে না পেরে দ্বীপে আটকে গেছি।

সেন্টমার্টিন হোটেল ব্যবসায়ী মাসুম আলম বলেন, সেন্টমার্টিনে অনেক পর্যটক আটকা পড়েছেন। আমরা তাদেরকে সর্বাত্মক সহযোগিতা করছি।

এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!