সেজান জুস নিয়ে চট্টগ্রামেই উত্থান হাসেমের, হাত পাকান খাতুনগঞ্জের ট্রেডিংয়ে

সেজান জুস তৈরির কারখানায় ভয়াবহ আগুনে অর্ধশতাধিক শ্রমিক নিহত হওয়ার ঘটনার পর দেশজুড়ে আলোচনায় এখন প্রতিষ্ঠানটির মালিক সজীব গ্রুপের কর্ণধার আবুল হাসেম। নব্বইয়ের দশকের শেষদিকে ঢাকা-নারায়ণগঞ্জে গিয়ে থিতু হলেও এই শিল্পপতির উত্থান হয়েছিল চট্টগ্রাম নগরীতে। তার পুরো পরিবারই থাকতেন নগরীর পাঁচলাইশে। খাতুনগঞ্জ ও টেরিবাজারে ছিল তার প্রতিদিনের বিচরণ।

গত বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) সেজান জুসের কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৫৩ জন নিহত ও অধশতাধিক শ্রমিক আহত হওয়ার ঘটনায় ইতিমধ্যে গ্রেপ্তার হয়েছেন সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল হাসেমসহ (৭০) তার চার ছেলে— হাসীব বিন হাসেম ওরফে সজীব (৩৯), তারেক ইব্রাহীম (৩৫), তাওসীব ইব্রাহীম (৩৩) এবং তানজীম ইব্রাহীম (২১)।

সেজান জুসের কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের গ্রেপ্তার হয়েছেন সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল হাসেমসহ তার চার ছেলে।
সেজান জুসের কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডের গ্রেপ্তার হয়েছেন সজীব গ্রুপের চেয়ারম্যান আবুল হাসেমসহ তার চার ছেলে।

হাসেমের উত্থান যেভাবে

লক্ষ্মীপুরে বিড়ির ব্যবসা ছিল বাবা ইব্রাহিম মিয়ার। স্বাধীনতার পর তিনি পাকাপাকিভাবে চলে আসেন চট্টগ্রামে। এসেই চট্টগ্রামের অবাঙালি ব্যবসায়ী দাদা ভাইয়ের অ্যালুমিনিয়াম কারখানার সব সম্পত্তি নিলামে কিনে নেন। এর মধ্যে ছিল নাসিরাবাদ এলাকার অ্যালুমিনিয়াম কারখানা, টেরিবাজার এলাকার অ্যালুমিনিয়াম শোরুম এবং মাঝিরঘাট এলাকার অ্যালুমিনিয়ামের গোডাউন। বিড়ির ব্যবসার চেয়েও চট্টগ্রামে তিনি অ্যালুমিনিয়াম ব্যবসার দিকেই মনোযোগী হয়ে পড়েন বেশি। সেই ইব্রাহিম মিয়া একসময় সিটি ব্যাংকের চেয়ারম্যানও হয়েছিলেন।

ইব্রাহিম মিয়ার দুই সংসারের বড় ছেলে আবুল হাসেম বাবার ব্যবসায় জড়ান মূলত নব্বইয়ের দশকের শুরুতে। এর পাশাপাশি তার অন্য চার ছেলেও যুক্ত হন পারিবারিক ব্যবসায়। তখন তাদের নারায়ণগঞ্জভিত্তিক কটন মিলের ব্যবসা থাকলেও পরিবারটি চট্টগ্রামকেই আবাসস্থল বানিয়ে ফেলে।

চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ এলাকায় বিশাল জায়গা কিনে বাড়ি তৈরি করেন ইব্রাহিম মিয়া। ওই বাড়িতেই তিনি পরিবারের সব সদস্যকে নিয়ে বসবাস করতেন।

নব্বইয়ের দশকে ইব্রাহিম মিয়ার বড় ছেলে আবুল হাসেমের ব্যবসা শুরু হয় পাকিস্তানের সেজান জুস আমদানির মাধ্যমে। এরপর একে একে নসিলা, কুলসন সেমাই, কুলসন মেকারনিসহ বিভিন্ন পণ্য আমদানি করতেন পাকিস্তান থেকে। এছাড়া তিনি খাতুনগঞ্জের ট্রেডিং ব্যবসায় জড়িত ছিলেন ওতপ্রোতভাবে। এ সময় হাসেমের অফিস ছিল চট্টগ্রাম নগরীর টেরিবাজারের ইব্রাহীম ম্যানশনে।

সেজান জুসের কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৫৩ জন নিহত ও অধশতাধিক শ্রমিক আহত হন।
সেজান জুসের কারখানায় ভয়াবহ অগ্নিকাণ্ডে ৫৩ জন নিহত ও অধশতাধিক শ্রমিক আহত হন।

কপাল খোলে ওয়ান-ইলেভেনে

নব্বইয়ের দশকের শেষ দিকে হাসেম চট্টগ্রাম থেকে নারায়ণগঞ্জে চলে যান। সেখানে আগের পৈত্রিক ব্যবসার সঙ্গে নতুন করে আরও কিছু ব্যবসা শুরু করেন। ২০০৭ সালের শুরুর দিকে সেনাসমর্থিত সরকার ক্ষমতায় আসার পর সাবেক সেনাপ্রধান মঈন ইউ আহমেদের সঙ্গে আত্মীয়তার সূত্রে মনোনয়ন পেয়ে লক্ষ্মীপুর-৩ (সদর) আসনে আওয়ামী লীগ থেকে ২০০৮ সালের সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেন হাসেম। তবে সেই নির্বাচনে হেরে যান বিএনপি প্রার্থী শহীদ উদ্দিন চৌধুরী অ্যানীর কাছে। এই শিল্পপতি মঈন ইউ আহমেদের মেয়ের ভাসুর বলে জানা গেছে।
হেরে গেলেও ঠিক ওই সময়ে এসে হাসেমের ব্যবসা পায় অবিশ্বাস্য গতি। গড়ে তোলেন সজীব গ্রুপ। এ সময় পাকিস্তান থেকে পণ্য আমদানির পাশাপাশি নারায়ণগঞ্জে বেশ কয়েকটি গার্মেন্টস কারখানা স্থাপন করেন। পরবর্তীতে পাকিস্তান থেকে পণ্য আমদানি করার বদলে সেসব পণ্য দেশেই উৎপাদন শুরু করে সজীব গ্রুপ।

বর্তমানে রাজধানীর ফার্মগেটে সজীব গ্রুপের কর্পোরেট অফিস গড়ে তোলা হলেও চট্টগ্রামের টেরিবাজারের ইব্রাহিম ম্যানশনে এই প্রতিষ্ঠানের বিশাল একটি লিয়াজোঁ অফিস এখনও সচল রয়েছে। অফিস আছে নাসিরাবাদ ও আগ্রাবাদেও।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!