চট্টগ্রামের পটিয়ায় উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক নাজমুল সাকের সিদ্দিকীকে জুতা নিক্ষেপ করেছে এক নারী। ওই নারীকে ছাত্রলীগের এই নেতা বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে ধর্ষণ করেছিল বলে অভিযোগ রয়েছে। এ ঘটনায় ছাত্রলীগের জেলা ও কেন্দ্রীয় কমিটির কাছে লিখিত অভিযোগ দায়ের করার পর ওই নেতাকে বহিস্কার করা হয় সংগঠন থেকে।
রোববার তার বহিস্কারাদেশ প্রত্যাহার করা হয়। সোমবার (২৮ জানুয়ারি) বিকেল ৪টার দিকে পটিয়া পোস্ট অফিস মোড় এলাকায় নাজমুলকে সংবর্ধনার আয়োজন করে তারই অনুসারী নেতাকর্মীরা। এ সময় ভুক্তভোগী ওই নারী সেখানে উপস্থিত হয়ে ছাত্রলীগের আহবায়ক নাজমুলকে লক্ষ্য করে জুতা নিক্ষেপ করে।
ছাত্রলীগ নেতাকর্মীরাও এ সময় ওই নারীকে পটিয়া উপজেলা পরিষদের সামনে পেয়ে লাঞ্ছিত করে। এ সময় ওই নারী ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের হাত থেকে রক্ষা পেতে উপজেলা মসজিদে আশ্রয় নেন। সেখান থেকে মুসল্লিরা তাকে বের করে দিলে পরে উপজেলা নির্বাহী অফিসারের কার্যালয়ে আশ্রয় নেওয়ার চেষ্টা করে ওই নারী। কিন্তু সেখানেও তাকে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। পরে তাকে একটি রিক্সাযোগে সেখান থেকে পাঠিয়ে দেওয়া হয়।
এদিকে জুতা নিক্ষেপের ঘটনায় ওই নারীর বিরুদ্ধে নাজমুলের অনুসারী ছাত্রলীগ নেতা আরাফাত রহমান বাদি হয়ে পটিয়া থানায় লিখিত একটি অভিযোগ দায়ের করেছেন।
জানা গেছে, নাজমুলের বিরুদ্ধে ওই নারী গত ২৪ জানুয়ারি চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।
অভিযোগে ওই নারী উল্লেখ করেন, গত দুই বছর ধরে নাজমুল সাকের সিদ্দিকীর সঙ্গে ওই নারীর সম্পর্ক। নাজমুল বিভিন্ন সময় ওই নারীর মোবাইলে ফোন দিয়ে তার সঙ্গে কথা বলতেন। পরবর্তীতে তিনি বিভিন্ন প্রলোভন দেখিয়ে ওই নারীর সাথে প্রেমের সম্পর্ক স্থাপন করেন। একপর্যায়ে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন জায়গায় একাধিকবার জোরপূর্বক তাকে ধর্ষণ করেন।
অভিযোগে ওই নারী আরও উল্লেখ করেন, বিভিন্ন সময় নাজমুল নানা অজুহাতে ওই নারীর কাছ থেকে প্রায় তিন লাখ টাকা ধার নিয়েছেন। উপজেলা ছাত্রলীগের কমিটিতে পদ দেওয়ার কথা বলেও ওই নারীর কাছ থেকে নগদ ১ লাখ টাকা নেন পটিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক নাজমুল।
এছাড়া গত ৩১ জানুয়ারি চট্টগ্রামের একটি আদালতেও নাজমুল সাকের সিদ্দিকীর বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন ওই নারী।
গত ১৪ ফেব্রুয়ারি পটিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের আহ্বায়কের পদ থেকে নাজমুল সাকের সিদ্দিকীকে অব্যাহতি দেওয়ার ঘোষণা দেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগ সভাপতি বোরহান উদ্দিন ও সাধারণ সম্পাদক আবু তাহের। এ সময় ভারপ্রাপ্ত আহবায়কের দায়িত্ব দেওয়া হয় যুগ্ম আহবায়ক মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিনকে।
এরপর রোববার (২৭ মার্চ) কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের পক্ষ থেকে নাজমুলকে আবারও স্বপদে বহাল করা হয়। পদ ফিরে পাওয়ায় সোমবার বিকেলে পটিয়া উপজেলা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা তাকে ফুল দিয়ে পোস্ট অফিস মোড় এলাকায় বরণ করে নেন। সেখানে ওই নারী তাকে জুতা নিক্ষেপ করেন।
এ ব্যাপারে উপজেলা ছাত্রলীগের আহবায়ক নাজমুল সাকের সিদ্দিকীকে একাধিক বার ফোন দেওয়া হয়। কিন্তু সংযোগ স্থাপন সম্ভব হয়নি।
পটিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) রেজাউল করিম মজুমদার বলেন, ‘ওই ঘটনায় একটি ছাত্রলীগের পক্ষে সাধারণ ডায়রী করা হয়েছে। আমরা উভয়ের সাথে কথা বলে আইনানুগ ব্যবস্থা নিব।’
এমএফও