সেই ‘এএসপি’ ছাত্রলীগ নেতা আবার ধরা বাকলিয়ায়, এবার চুরি ও প্রতারণার অভিযোগ

এবার চেক চুরি ও প্রতারণার অভিযোগে চট্টগ্রামের বাকলিয়া থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আকিবুল ইসলাম আকিব। এর আগে ‘এএসপি’ পরিচয়ে ধর্ষণ ও প্রতারণার ঘটনায় যে নারীর মামলায় আটক হয়েছিলেন তিনি, জেল থেকে জামিনে বেরিয়ে উল্টো এবার সেই নারীর বিরুদ্ধেই ‘প্রতারণা’র মামলা দায়ের করে আলোচনায় এসেছিলেন তিনি।

বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) রাতে বাকলিয়া থানা এলাকায় অভিযান চালিয়ে সিআর মামলায় আকিবকে গ্রেপ্তার করে বাকলিয়া থানার পুলিশ। একই অভিযোগে অভিযুক্ত আকিবের বাবা হাজী নুরুল আবছার (৬০) পলাতক রয়েছেন। দুজনেই চট্টগ্রামের আনোয়ারা উপজেলার খানসামা অলি মিয়া বাড়ির বাসিন্দা। তবে তারা নগরীর বাকলিয়ার কালামিয়া বাজার এলাকায় বসবাস করেন।

জানা গেছে, শামিমা আক্তার মুক্তা নামের এক নারী গত ২৩ জুলাই চেকচুরি ও প্রতারণাসহ বিভিন্ন অভিযোগে চট্টগ্রাম মহানগর হাকিমের আদালতে একটি মামলা দায়ের করেন। ওই মামলাটি পিবিআইকে তদন্তের নির্দেশ দেন আদালত। পিবিআইয়ের উপ-পুলিশ পরিদর্শক মো. শাহজাহান মামলাটি তদন্ত করে গত ৩১ অক্টোবর আদালতে তদন্ত প্রতিবেদন দেন। এরপর আদালত অভিযুক্ত পিতা-পুত্রের বিরুদ্ধে গ্রেপ্তারি পরোয়ানা জারি করলে বাকলিয়া থানা পুলিশ মামলার দ্বিতীয় আসামি আকিবুল ইসলাম আকিবকে গ্রেপ্তার করে।

এর আগে চলতি বছরের জানুয়ারিতে ধর্ষণ ও প্রতারণা এবং ফেসবুকে ভুয়া আইডি খুলে নগ্ন ছবি পোস্ট করার অভিযোগ এসে আকিবুল ইসলাম আকিব, নাজমা আকতার ও ওয়াহেদুল ইসলামকে অভিযুক্ত করে আইসিটি আইনে একটি মামলা দায়ের করেছিলেন শামীমা আক্তার মুক্তা। এই মামলায় গত ৬ জানুয়ারি নগরীর রাহাত্তারপুল থেকে আকিবকে গ্রেপ্তার করে বাকলিয়া থানা পুলিশ।

এরপর ফেসবুকে ভুয়া আইডি খুলে বিভিন্ন সময় তরুণীদের নগ্ন ছবি পোস্ট করতে সহায়তা করায় আকিবুল ইসলাম আকিবের ছোট বোন নাজমা আক্তারকেও চলতি বছরের ১ জুন আনোয়ারা উপজেলার উপজেলার হাইলধর ইউনিয়নের খাসখামা এলাকা থেকে গ্রেপ্তার করা হয়।

ছাত্রলীগের এই নেতা বাংলাদেশ পুলিশের সহকারী কমিশনার (এএসপি) পরিচয়ে ফেসবুকের মাধ্যমে এক তালাকপ্রাপ্ত নারীর সঙ্গে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তোলেন। পরে নগরীর বাকলিয়া রাহাত্তারপুল এলাকার ওই দুই বাচ্চার মাকে নানা প্রলোভন দেখিয়ে বিয়ে করেন।

গৃহবধূর সঙ্গে ‘এএসপি’ ছাত্রলীগ নেতার সংসার
গৃহবধূ শামীমা আকতার মুক্তার দায়ের করা মামলার অভিযোগে জানা যায়, গত আগস্ট থেকে নগরীর বিভিন্ন হোটেল-বাসায় স্বামী স্ত্রী হয়ে আকিবুল ইসলাম আকিবের সঙ্গে সংসার পাতেন তিনি। এক সময়ে তারা নগরীর বাকলিয়া থানার ডিটি রোডের হোসেন বিল্ডিংয়ের দ্বিতীয় তলায় বাসাও ভাড়া নেন। মাসতিনেক প্রতারণার মুখোশ পরে আকিবুল ইসলাম ওরফে তাহসান খান ঘর সংসার করলেও আস্তে আস্তে উন্মোচিত হতে থাকে তার মুখোশ।

‘এএসপি’ পরিচয় দিয়ে তালাকপ্রাপ্ত দুই সন্তানের জননীকে পাশে থাকার আশ্বাস দিয়ে বিয়ে করলেও দিন দিন নানা অজুহাতে টাকা-পয়সা হাতিয়ে নিতে থাকেন ছাত্রলীগ নেতা আকিব। এরপরও নিজের সুখের কথা ভেবে আগের স্বামীর কাছ থেকে দেনমোহরের পাওনা টাকা থেকে দুহাত ভরেই দিতে থাকেন সব অর্থকড়ি। গত বছরের ৫ সেপ্টেম্বর ওই নারীর কাছ থেকে পাঁচ লাখ টাকা ধার নেন আকিব। ২৭ অক্টোবর এক লাখ ২৮ হাজার টাকা দিয়ে তাকে একটি মোবাইল ও তিন লাখ টাকা দিয়ে একটি মোটর সাইকেলও কিনে দেন ওই নারী। বিভিন্ন সময় ডেবিট কার্ড দিয়ে তুলে নেন আরও চার লাখ টাকা। এভাবে কমপক্ষে ১০ লাখ টাকা তাহসান তার কাছ থেকে নিয়েছে বলে অভিযোগ ওই নারীর।

এভাবে বারবার টাকা চাইতে থাকলে ওই নারীর সন্দেহ হয়। ওই নারী একদিন তাহসানের মোবাইল ফোন পরীক্ষা করে দেখেন, বিভিন্ন নামে ফেসবুক আইডি খুলে আরও বিভিন্ন মেয়ের সঙ্গে সম্পর্ক তৈরি করেছে আকিব। নিজেকে অবিবাহিত পরিচয় দিয়ে তাদের সঙ্গে শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তুলে সেটা ভিডিও করে আবার ফেসবুক ম্যাসেঞ্জারে টাকা দাবি করার তথ্যও পান মোবাইলে। এভাবে নানা অসঙ্গতি চোখে পড়তে থাকলে ওই নারী খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, তার নাম তাহসান নয়, আসল নাম আকিবুল ইসলাম আকিব। তার এএসপি পরিচয়ও ভুয়া।

অবশেষে একাধিক মেয়ের সঙ্গে প্রতারণা করে মিথ্যা পরিচয় দিয়ে শারীরিক সম্পর্ক স্থাপন, টাকা আত্মসাৎ করার কারণে মামলার আসামি করা হয় দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আকিবুল ইসলাম আকিবকে। গত ২৫ ডিসেম্বর আকিব ওই নারীর বাসায় গিয়ে মাথায় পিস্তল ঠেকিয়ে তাকে হুমকি দেয় বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়।

এদিকে ‘এএসপি’ পরিচয়ে ধর্ষণ ও প্রতারণার ঘটনায় যে নারীর মামলায় আটক হয়েছিলেন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা ছাত্রলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আকিবুল ইসলাম আকিব, জেল থেকে জামিনে বেরিয়ে উল্টো এবার সেই নারীর বিরুদ্ধেই ‘প্রতারণা’র মামলা দায়ের করেন তিনি। গত ২৪ নভেম্বর চট্টগ্রাম নগরীর দামপাড়া এলাকা থেকে আনোয়ারা উপজেলার তৈলারদ্বীপ পূর্ব বারখাইনের শামীমা আকতার মুক্তা (৩২) নামে ওই নারীকে নগরীর চকবাজার থানার পুলিশ বিস্ময়কর দ্রুতগতিতে গ্রেপ্তার করে। ওই নারী দুই সন্তানের জননী। এই ঘটনায় অনেকে প্রতারণার দায়ে অভিযুক্ত আকিবের সঙ্গে চকবাজার থানার পুলিশের গোপন যোগসাজশের অভিযোগ এনেছিলেন।

আকিবের দায়ের করা ওই মামলায় জামিনে আসার পর ভুক্তভোগী শামীমা জানতে পারেন, ইতিপূর্বে তার বাসা থেকে একাধিক চেক চুরি করে আকিব তার বাবার মাধ্যমে টাকা তুলে নেওয়ার চেষ্টা করেছেন। পরে তারা সেইসব চেক ফিরিয়ে দেওয়ার বিনিময়ে শামীমার কাছ থেকে ৫০ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে— এই অভিযোগ এনে শামীমা আকতার মুক্তা আদালতে অপর একটি মামলা দায়ের করেন। বৃহস্পতিবার (২৪ ডিসেম্বর) সেই মামলাতেই আকিব গ্রেপ্তার হলেন বাকলিয়া পুলিশের হাতে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!