সুদে টাকা নিলেই মিলছে ইলিশ ধরার ‘অনুমতি’, গরিব জেলেদের চোখে জল

বঙ্গোপসাগরে ইলিশ ধরার মৌসুম শুরুর পরই সক্রিয় হয়েছে চট্টগ্রামের ইপিজেড এলাকার দাদন ব্যবসায়ীরাও। তাদের কাছে যারা দাদন (সুদে টাকা ধার) নিয়েছেন— কেবল এমন জেলেদের সাগরে মাছ ধরতে দিচ্ছেন তারা। এ কারণে স্থানীয় জেলেরা ইলিশ শিকারে যেতে পারছেন না। দাদন নিয়ে সাগরে জাল ফেলছে বহিরাগতরাই।

লাখে ২০ হাজার সুদে ঋণ নিলেই কেবল সাগরে ইলিশ শিকারে যাওয়ার ‘অনুমোদন’ মিলছে। এই ‘অনুমোদন’ দিচ্ছেন দাদন ব্যবসায়ী চট্টগ্রামের ইপিজেড থানার আকমল আলী এলাকার ভেন্ডার ব্যবসায়ী মো. আক্কাস প্রকাশ আক্কাস সওদাগর, একই এলাকার তার ম্যানেজার মাসুদ রানা, একই এলাকার নুরুল আলম প্রকাশ নুরুল আলম মাঝি এবং মংলা জেলার বাসিন্দা মো. দুলাল।

জেলেরা জানান, ইলিশ ধরার মৌসুমের আগাম প্রস্তুতির জন্য বোট সংস্কার ও জাল বুনন করতেই ঋণগ্রস্ত হয়েছেন অনেকে। ইলিশ ধরতে না পারলে ঋণের ভারে পড়তে হবে অন্তত ৩০-৪০ জেলে পরিবারকে।

বুধবার (৮ জুলাই) চট্টগ্রামের ইপিজেড থানার আকমল আলী বেঁড়িবাধ এলাকায় গেলে দেখা যায়, বঙ্গোপসাগরে তীরবর্তী এলাকায় অন্তত ৫০টি মাছ ধরার বোট নোঙ্গর করা হয়েছে। ওই সময় বোটে বসে জাল বুনছিলেন অনেক জেলে। সাগরভর্তি জোয়ারের পানি আসায় বিকেলের দিকে মাছ আহরণ করতে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন তারা।

স্থানীয় জেলেরা বলেন, ২০ পারসেন্ট কমিশনে দাদন দেন আক্কাস সওদাগর। সাগরে তার জেলেদের কারণে সেখানে আমরা মাছ ধরতে পারছি না। যারা দাদন নিয়েছে তারা বহিরাগত জেলে। তারাই ইলিশ শিকার করছে। বহিরাগত জেলেদের কারণে আমরা এখন বেকার। সম্প্রতি ইলিশ মাছের জাল বোনার কাজ ও বোট সংস্কারের কাজ করে ঋণগ্রস্ত হয়েছেন অনেক জেলে। মাছ না ধরলে সে ঋণ শোধ করব কিভাবে?

পাঁচ বছর আগে বঙ্গোপসাগরে ইলিশ ধরার মৌসুমে মাছ ধরার নির্দিষ্ট জায়গায় (ফার) নিয়ে স্থানীয় দাদন ব্যবসায়ী ও জেলেরা বিবাদে জড়িয়ে পড়েন। পরে চট্টগ্রামের-১১ আসনের সংসদ সদস্য এমএ লতিফ ও বন্দরের তখনকার উপ-পুলিশ কমিশনার, স্থানীয় কাউন্সিলর ও রাজনৈতিক নেতাদের উপস্থিতিতে ওয়ার্ডভিত্তিক পৃথক ‘ফারে’ মাছ ধরার সিদ্ধান্ত দেওয়া হয়। সেখানে পেশাদার মাছ ব্যবসায়ী ও জেলেদের স্ব-স্ব ওয়ার্ড থেকে বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার সুযোগ দেওয়া হয়।

উত্তর পতেঙ্গা কাটগড় মৎস্যজীবী সমবায় সমিতির প্রধান উপদেষ্টা লিটন দাশ বলেন, ‘দীর্ঘদিন ধরে এ পেশার সঙ্গে জড়িত প্রকৃত জেলে ও মাছ ব্যবসায়ীরাই ফারে মাছ ধরার অধিকার রাখে। সিন্ডিকেট করে বহিরাগতদের নিয়ে ফার দখলে নিয়েছেন কিছু দাদন ব্যবসায়ী। এতে বেকার হয়ে পড়েছে এখানকার স্থানীয় জেলেরা। চলতি মৌসুমে সাগরে মাছ আহরণ করতে না পারলে চরম ক্ষতিগ্রস্ত হবে এখানকার জেলেরা।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মো. আক্কাস সওদাগর বলেন, ‘আমার কোনো বোট নেই। জেলে বা মাছ ব্যবসায়ীদের মাছ ধরতে দিচ্ছি না— এটা সঠিক নয়। ওই এলাকায় আমার ব্যবসা-বাণিজ্য চলছে। বেঁড়ির বাধ এলাকায় কারও কাছ থেকে একটা টাকাও নিইনি। কেউ আমার নাম ব্যবহার করে টাকাপয়সা নিলে তার দায়ভার আমি নেব কেন।’

এ ব্যাপারে ইপিজেড থানার ওসি মীর মো. নুরুল হুদা বলেন, ‘বঙ্গোপসাগরে কেউ মাছ ধরতে পারছেন না— এ ধরনের কোনো অভিযোগ এখনও পাইনি। অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এসএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm