সুজনের বিদায়বেলায় চসিকের হাতে আছে ১ মাসের বেতন

চট্টগ্রাম সিটির ভোট নিয়ে প্রশাসকের মতবিনিময়

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক হিসেবে নিজের কাজের মূল্যায়নের ভার নগরবাসীর হাতে ছেড়ে দিয়ে খোরশেদ আলম সুজন বললেন, ‘বিশাল ঋণের বোঝা মাথায় নিয়ে আমি দায়িত্ব নিয়েছিলাম। তবে আমি যার হাতে দায়িত্ব অর্পণ করবো তিনি চসিকের কর্মকর্তা কর্মচারীদের এক মাসের বেতন দিতে পারবেন।’ শুক্রবার (২২ জানুয়ারি) চট্টগ্রাম প্রেস ক্লাবে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে সুজন এসব কথা বলেন।

তিনি বলেন, ‘আমার মাথার উপর একটা ঋণ ছিল এবং কিভাবে বেতন দেবো সেটাও একটা দুঃসাধ্য ব্যাপার ছিল। যাহোক প্রতিমাসের ১ তারিখে আমি বেতন দিয়ে আসছি। এটা একদিনও ব্যত্যয় ঘটেনি। এখন যিনি আসবেন সিটি কর্পোরেশনে আমি চাই এই ৬ মাসে সিটি কর্পোরেশনের এক টাকাও বিপদগ্রস্থ না থাকে। এবং যিনি আসবে অন্ততপক্ষে এক মাসের বেতনের টাকাটা আমি তার হাতে তুলে দিয়ে যেতে পারি।’

মতবিনিময়কালে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনকে ঘিরে যেটুকু সহিংসতা হয়ে গেছে সেটি যেন আর না বাড়ে সেদিকে খেয়াল রাখতে দলীয় নেতাকর্মীদের পরামর্শ দিয়েছেন চসিকের প্রশাসক ও নগর আওয়ামী লীগের এই সহ সভাপতি। আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের উদ্দেশ্যে তিনি আরও বলেন, শক্তি দিয়ে নয় ভালবেসে মানুষের মন জয় করতে হবে।’

চসিক প্রশাসক হওয়ায় দলীয় প্রার্থীর পক্ষে নির্বাচনী প্রচারণায় মাঠে নামতে না পারায় নিজের মন খারাপের কথা তুলে ধরে মতবিনিময় সভায় সুজন বলেন, ‘এবার আমার জীবনের কঠিন সময়। এবার নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারছি না। যেহেতু আমার একটি দায়িত্ব আছে। আমার ভেতরে যে কষ্ট, খাঁচার পাখির মতো বন্দিশালায় আছি। সবাই মিছিল করছে, মিটিং করছে আমি দেখছি। আমি আগে কত স্লোগান দিয়েছি, এবারে পারছি না। আমার ভেতরের ছটফটানি কাউকে দেখাতে পারছি না।’

চট্টগ্রামের জন্য এই নির্বাচন অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে সুজন বলেন, ‘চট্টগ্রাম ইতিহাসের এক গুরুত্বপূর্ণ অধ্যায়ের সামনে এসে দাঁড়িয়েছে। আগামী ৫-১০ বছরের মধ্যে এ চট্টগ্রাম হবে দক্ষিণপূর্ব এশিয়ার শ্রেষ্ঠ যোগাযোগ কেন্দ্র। এটা উপলব্ধি করতে পেরেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা কর্ণফুলী নদীর তলদেশে টানেল তৈরি করছেন। মাতারবাড়ীতে সমুদ্রবন্দর হয়ে গেছে। সেখানে আলাদা জগত গড়ে উঠেছে। মিরসরাই স্পেশাল ইকোনমিক জোনে সারা পৃথিবীর ইনভেস্টরার ছুটে আসছেন।’

তিনি বলেন, ‘এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর প্রথম নির্বাচনী ইশতেহারে ২৮ দফার অন্যতম ছিল- পতেঙ্গা থেকে ফেনী হাইওয়ে পর্যন্ত বাইপাস করা। মহিউদ্দিন চৌধুরী আজ বেঁচে নেই। কিন্তু সেই স্বপ্ন বাস্তবায়ন করছেন নেত্রী। একের পর এক এক্সপ্রেসওয়ে হচ্ছে। চট্টগ্রাম থেকে কক্সবাজার পর্যন্ত মেরিন ড্রাইভ হচ্ছে। এসবই হচ্ছে প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ আগ্রহে। এই ধারা ধরে রাখতে হলে নির্বাচনে বুঝে শুনে ভোট দিতে হবে। এই হিসেবে বিএনপির সচেতন সমর্থকরাও বুঝে শুনে রেজাউল করিমের পক্ষে ইতিবাচক ভূমিকা নেবে এমন আশাবাদ তুলে ধরে তিনি বলেন, আমার মনে হচ্ছে বিএনপিরও যারা সচেতন আছে চট্টগ্রামের স্বার্থে ও চট্টগ্রামবাসীর স্বার্থে আগামী নির্বাচনে শেখ হাসিনার প্রার্থীর পক্ষে সিদ্ধান্ত নিবে।’

তবে এই নির্বাচনে অংশ নেয়ায় বিএনপি সাংগঠনিকভাবে লাভবান হয়েছে মন্তব্য করে সুজন বলেন, ‘নির্বাচনে অংশ নেওয়ায় বিএনপির যেটা সুবিধা হচ্ছে সেটা হচ্ছে- এই নির্বাচনকে কেন্দ্র করে তারা একটা সাংগঠনিক প্রক্রিয়ার সঙ্গে যুক্ত হতে পেরেছে, অনেক দিন তারা রাজনৈতিক কর্মীদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে পারেনি।’

তিনি বলেন, ‘নির্বাচন আসলে উত্তাপ থাকে। এ উত্তাপ যেন আত্মঘাতী না হয়। এ উত্তাপ যেন গণতান্ত্রিক প্রতিষ্ঠান, ব্যবস্থাপনা, সংস্কৃতিকে যেন ক্ষতিগ্রস্ত না করে। ইচ্ছে করলে মিছিল মিটিং ছাড়াও নির্বাচন করা যায়। এখন মিডিয়ার যুগ। ফেসবুকের যুগ। ম্যাসেজ পাঠাতে পারেন। আমি মনে করি, যতটুকু হয়ে গেছে, আর কোথাও যেন সহিংসতা না হয়। সবাই প্রশাসনকে সাহায্য করুন। নির্বাচনের পর সবাই যেন একসঙ্গে আনন্দমুখর পরিবেশে কাজ করতে পারি।’

এআরটি/কেএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm