সুজনকে মন্ত্রীর ফোন, চিটাগং শপিংয়ের ‘দোকানবাণিজ্য’ তদন্তের নির্দেশ

চট্টগ্রাম প্রতিদিনে প্রকাশিত প্রতিবেদনের প্রতিক্রিয়া

চিটাগং শপিং কমপ্লেক্সে পার্কিংয়ের জায়গাসহ খোলা জায়গায় নির্বিচারে দোকান নির্মাণ নিয়ে চট্টগ্রামে প্রতিদিনে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন স্থানীয় সরকার,পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত মন্ত্রী তাজুল ইসলামের নজরে আসার পর তিনি অভিযোগটি দ্রুত তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজনকে।

এরপর ইতিমধ্যে দোকান নির্মাণ বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছেন চসিক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন।

শনিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সন্ধ্যায় মন্ত্রীর নির্দেশের কথা নিশ্চিত করে চসিক প্রশাসক চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘খালি জায়গায় দোকান, ‘গুদামঘরে’ রূপ নিচ্ছে চিটাগং শপিং কমপ্লেক্স— শিরোনামে প্রকাশিত প্রতিবেদনটি এলজিআরডি মন্ত্রী মহোদয়েরও নজরে এসেছে। মন্ত্রী কিছুক্ষণ আগে আমাকে সশরীরে গিয়ে জায়গাটি পরিদর্শন করে অভিযোগের বিষয়টি নিশ্চিত হওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন। অভিযোগের সত্যতা পেলে নির্মাণকাজ বন্ধ সহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন।’

খোরশেদ আলম সুজন বলেন, ‘চট্টগ্রাম প্রতিদিনের প্রতিবেদনটি দেখে আজ সকালেও নির্মাণকাজ আপাতত বন্ধ রাখার নির্দেশ দিয়েছি। রোববার (৬ সেপ্টেম্বর) সরাসরি চিটাগং শপিং কমপ্লেক্সের পার্কিংয়ের জায়গাসহ আলো-বাতাস চলাচলের জন্য রাখা খোলা স্থানে পরিদর্শনে যাবো। এরপর এটি নিয়ে গণশুনানি করবো। চট্টগ্রামের আলো-বাতাসের গতিরোধ করে বাণিজ্যিক স্থাপনা করা যাবে না।’

শনিবার চট্টগ্রাম প্রতিদিনে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদনে জানানো হয়, চিটাগং শপিং কমপ্লেক্সের পার্কিংয়ের জায়গাসহ আলো-বাতাস চলাচলের জন্য রাখা খোলা স্থানে নির্মাণ করা হচ্ছে দোকান। দোকান নির্মাণের নামে এমন অরাজকতায় শপিং কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ীদের মধ্যেও চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে।

জানা গেছে, সদ্যবিদায়ী চসিক মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দিন দোকান নির্মাণের কাজটি দিয়েছেন জামায়াত নেতার প্রতিষ্ঠান শামীম করপোরেশনকে।

নগরীর অন্যতম প্রাণকেন্দ্র ষোলশহরে সাবেক মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর সময়ে নির্মিত চিটাগং শপিং কমপ্লেক্সের রূপ পরিবর্তন করে বর্তমানে সেখানে পার্কিংয়ের জন্য নির্ধারিত জায়গায় দোকান নির্মিত হচ্ছে। শপিং কমপ্লেক্সের ভেতরে আলো-বাতাস চলাচলের জন্য রাখা খোলা স্থানে নির্মাণ হচ্ছে দোকানগুলো।

শুধু তাই নয়, কমপ্লেক্সের সামনে ও পেছনে গাড়ি পার্কিংয়ের জন্য রাখা স্থানেও নির্মাণ হচ্ছে দোকান। নিচে মহিলা টয়লেট ও জেনারেটর রুম সবকিছু ভেঙে দোকানগুলো তৈরি হচ্ছে। অথচ টয়লেট, জেনারেটর রুম ও পার্কিং স্থানে দোকান করার কোনো অনুমোদনও নেই। এদিকে শপিং কমপ্লেক্সের ছাদের ওপরে আরো এক তলা নির্মাণ করা হচ্ছে লোহার ফ্রেম ও অ্যাঙ্গেল বসিয়ে।

দোকান নির্মাণের নামে এমন অরাজকতায় শপিং কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ীদের মধ্যেও চরম অসন্তোষ দেখা দিয়েছে। গত জুন মাসে ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে দোকান নির্মাণ না করার জন্য মানববন্ধনও করেছে। চিটাগং শপিং কমপ্লেক্সে বর্তমানে ৩৮০ জন ব্যবসায়ী রয়েছেন। অবৈধ এ সব দোকান নির্মাণ বন্ধ না হলে তারা আন্দোলনে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন।

ব্যবসায়ীরা অভিযোগ করে জানান, শপিং কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামালকে নতুন নির্মানাধীন দুটি দোকান বরাদ্দ দিচ্ছে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। এ কারণে তিনি আর আন্দোলনে নেই।

শপিং কমপ্লেক্সের ব্যবসায়ী মাহবুবুল আলম বলেন, শপিং কমপ্লেক্সে আলো বাতাস আসার পথ বন্ধ হয়ে গেছে। এতে এটি অনেকটা গুদামঘরে পরিণত হচ্ছে। সুন্দর ও মনোরম পরিবেশ হারিয়ে যাচ্ছে।

ব্যবসায়ী এমরান হোসেন বলেন, সামনে ও পেছনে পার্কিংয়ের জায়গাতে দোকান হচ্ছে। মানুষ পার্কিং বাড়ানোর চেষ্টা করে। অথচ এখানে উল্টো দোকান বানানো হচ্ছে।

ব্যবসায়ীদের অসন্তোষের কথা জানতে চাইলে চট্টগ্রাম শপিং কমপ্লেক্স দোকান মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মোস্তফা কামাল বলেন, ‘চসিক অনুমোদন দিয়েছে তাই নতুন দোকান নির্মাণ হচ্ছে। ফলে আমরা আন্দোলন করছি না।’

তবে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান থেকে দুটি দোকান পাওয়ার কথা তিনি অস্বীকার করেন।

জানা গেছে, চট্টগ্রাম শপিং কমপ্লেক্সের নতুন দোকানগুলো নির্মাণ করছে চসিকের ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান শামীম করপোরেশন। এর স্বত্ত্বাধিকারী সাইফুল ইসলাম নগরে জামায়াতের রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত বলে জানা গেছে। সদ্য বিদায়ী মেয়র আ জ ম নাছিরের ঘনিষ্ঠজন হিসেবে তিনি এ কাজটি পেয়েছেন বলে সিটি কর্পোরেশন সূত্রে জানা গেছে।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm