সীতাকুণ্ডে পুদিনাপাতার বাগানে বাগানে দোল লেগেছে

চায়ের কাপে পুদিনাপাতা না পড়লে কেন যেন জমেই না। ফাস্টফুডের আইটেমে কিংবা সালাদের খুশবু বাড়াতেও পুদিনার জুরি নেই। লেমন জুসকে সুস্বাদু করতে গেলে ব্লেন্ডারে এক মুঠো পুদিনাতো লাগেই। আবার কফ জমে কাশি কিংবা ঠান্ডাজনিত গলা ব্যথায় গরম পানিতে লেবুর সঙ্গে ঔষধি এই পাতার কার্যকারিতাও পরীক্ষিত, স্বীকৃত।

চট্টগ্রামের সীতাকুণ্ডে ব্যাপক পরিসরে চাষ করা হয়েছে এই পুদিনাপাতা। পাহাড়ের ভাঁজে ভাঁজে এই অঞ্চলের কৃষকদের বড় একটি অংশ পুদিনা বাগান করেন বছরজুড়েই। বাগানের এসব পুদিনা বাজারে উঠবে ক’দিনের মধ্যেই। তাই পুদিনাপাতার পরিচর্যায় ব্যস্ত সময় কাটছে চাষীদের।

সরেজমিন কয়েকটি বাগান ঘুরে দেখা গেল, গাছের গোড়া থেকে কেউ নিংড়ে ফেলছেন আগাছা। আবার কেউ ছিটাচ্ছেন পানি। নিবিড় পরিচর্যা করে প্রতিটি চারাকে চাষীরা গড়ে তুলছেন যেন পরম মমতায়। বিশাল বিশাল বাগানে সারি সারি পুদিনার সমারোহে দোল খেলে যাচ্ছে বাতাস।

চলতি বছর উপজেলার ভাটিয়ারী, সলিমপুর, সোনাইছড়ি ও কুমিরায় ১৫ হেক্টর জমিতে পুদিনার চাষ করেছেন কৃষকেরা।

কৃষি অফিসের হিসেবে, সীতাকুণ্ডে ১৫ হেক্টর পাহাড়ি জমিতে ১০৬ জন কৃষক পুদিনাপাতা উৎপাদন করেছেন। এর মধ্যে শুধুমাত্র ভাটিয়ারী খাদেমপাড়া এলাকাতেই পুদিনা চাষ করেন ৪০ থেকে ৫০ জন কৃষক। এই এলাকার ৬ হেক্টর পাহাড়ি ঢালু জমিতে এ বছর পুদিনার চাষ হয়েছে।

খাদিমপাড়ার পুদিনা চাষী মো. শিবলু জানান, প্রতিবছর রমজানকে সামনে রেখে বাড়তি উৎপাদনের চেষ্টা করে সীতাকুণ্ডের পুদিনা চাষীরা। এ সময় চাহিদা অন্যান্য সময়ের তুলনায় বেশি থাকে। এবার পাহাড়ি এলাকায় প্রায় ৯০ শতক জায়গায় পুদিনার চাষ করেছেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘এটুকু জায়গায় পুদিনা চাষ করতে শ্রমিক ও অন্যান্য ব্যয় বাবদ তার খরচ পড়েছে প্রায় ৮০ হাজার টাকা। বাজার দর ভাল হলে ৪ থেকে ৫ লাখ টাকার পুদিনা বিক্রি করা যাবে। তবে বর্তমানে সারাদেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হওয়ায় বাজার পরিস্থিতি খারাপ। তাই বাগান থেকে পুদিনা তুলে বাজারগুলোতে যথাযথভাবে বিক্রি কতটা সম্ভব সে নিয়ে রয়েছে শংকা। তাছাড়া কাল বৈশাখীসহ প্রাকৃতিক দুর্যোগের দুশ্চিন্তাতো আছেই।’

সীতাকুণ্ড উপজেলা কৃষি অফিসার আল মামুন রাসেল চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় ১৫ হেক্টর পাহাড়ি জমিতে ১০৫ জন কৃষক পুদিনাপাতার চাষ করেছেন। সারাবছর পুদিনার চাষ হলেও রমজানের চাহিদা মেটাতে কৃষকরা বাড়তি চাষ করে থাকেন। প্রতিবছর এই এলাকা থেকে দেশের বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় পুদিনা সরবরাহ হয়। তবে এবার করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে দেশজুড়ে বিভিন্ন জেলা, উপজেলা লকডাউন রয়েছে। এ কারণে পাইকারী ক্রেতারা সীতাকুণ্ডে আসতে না পাড়লে পুদিনা চাষীরা পড়তে পারেন বিপাকে।’

সীতাকুণ্ডের উপ-সহকারি কৃষি কর্মকর্তা ঝন্টু কুমার নাথ বলেন, ‘এখানকার পাহাড়ের ঢালু জমি পুদিনাপাতা চাষের বেশ উপযোগী। সারা বছর চাহিদা থাকায় কৃষকদের বড় একটি অংশ এই অঞ্চলে পুদিনা চাষ করে ব্যাপক হারে। পুদিনা চাষাবাদ অন্যান্য শাক-সবজির চেয়ে কিছুটা শ্রমসাধ্য কাজ। নিবিড় পরিচর্যা করে এর ফলন নিশ্চিত করতে হয়। কৃষকরা নিজদের জীবিকা নির্বাহের জন্য চাষ করলেও ঔষধি গুণাগুণ সমৃদ্ধ পুদিনার উৎপাদনে বেশ উপকৃত হচ্ছে মানুষ।’

এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm