সিনেমার কায়দায় চট্টগ্রামে ব্যবসায়ী অপহরণ, মধ্যরাতে চলছে পুলিশের অভিযান
অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা নওশাদ মাহমুদ রানার বিরুদ্ধে মামলা
চট্টগ্রাম নগরীতে দিনেদুপুরে এক সিএন্ডএফ ব্যবসায়ীকে বিয়ের অনুষ্ঠান থেকে শত শত মানুষের সামনে অস্ত্রের মুখে তুলে নিয়ে গেছেন যুবলীগ নেতা নওশাদ মাহমুদ রানা ও তার সহযোগীরা। অপহৃত ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলামের সিএন্ডএফ প্রতিষ্ঠানকে কাজ দিয়ে কমিশন ভোগ করা নওশাদ যুবলীগের বিতর্কিত চেয়ারম্যান ওমর ফারুক চৌধুরীর কমিটির সদস্য ছিলেন। অপহৃত ব্যবসায়ীকে উদ্ধার করতে শহরের একাধিক জায়গায় আমাদের ফোর্স অভিযান চালাচ্ছে বলে শুক্রবার দিবাগত রাত দুইটায় হালিশহর থানা সূত্রে জানা গেছে।
এ ঘটনায় হালিশহর থানায় যুবলীগ নেতা নওশাদ ও কয়েকজন সহযোগীকে আসামি করে একটি মামলা (১৯/২০২০) দায়ের করেছেন অপহরণের শিকার ব্যবসায়ী সাইফুলের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস। এতে নওশাদ মাহমুদ রানা ছাড়াও আরও যাদের বিরুদ্ধে অপহরণের অভিযোগ আনা হয়েছে তারা হলেন নওশাদের ভাই পাপ্পু, মোহাম্মদ মাসুদ ওরফে পাগল মাসুদ, বউবাজার ঈদগাঁ এলাকার ইকবাল, সাখাওয়াতসহ অজ্ঞাতনামা আরও তিন-চারজন।
শুক্রবার (১৬ অক্টোবর) বিকেল চারটার দিকে নগরীর হালিশহর থানার বউবাজার এলাকার দুলহান কমিউনিটি সেন্টারে বিয়ের দাওয়াতে অংশ নিতে গেলে রানা তার ১০ থেকে ১২ জন ক্যাডারকে সাথে নিয়ে মাথায় অস্ত্র ঠেকিয়ে সাইফুলকে গাড়িতে তুলে অজ্ঞাত স্থানে নিয়ে যায়। রাত ২টা পর্যন্ত আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কিংবা পরিবারের সদস্যরা তার কোনো হদিস পাননি।
এর আগে তাদের মধ্যে কমিশন নিয়ে ঝামেলা তৈরি হলে নগর পুলিশের এক প্রভাবশালী ওসির মধ্যস্থতায় ডকুমেন্ট অনুযায়ী আপস-মীমাংসা হয়েছিল।
এ ঘটনায় সাইফুল ইসলামের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌস হালিশহর থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। দায়ের করা অভিযোগ সুত্রে জানা গেছে, সাইফুল স্ত্রী ও ছেলে-মেয়ে নিয়ে নিজের প্রাইভেট কারে চড়ে হালিশহর থানার বউবাজার এলাকার দুলহান কমিউনিটি সেন্টারে এক আত্মীয়ের বিয়েতে অংশ নেন। বিয়েতে অংশ নেওয়া শেষে নিজের ব্যক্তিগত গাড়িতে উঠতে গেলেই নওশাদ মাহমুদ রানা, তার গাড়িচালক মুহাম্মদ ইকবাল সহ ১০ থেকে ১৫ জন মিলে ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলামকে প্রকাশ্যে মারধর করে এলটি সিলভার রঙের মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যায়। এ সময় বিয়ের অনুষ্ঠানে উপস্থিত লোকজন বাধা দিলে তাদেরও লাঠিসোটাসহ বিভিন্ন দেশীয় অস্ত্র দিয়ে আঘাত করতে থাকলে মানুষজন ঘটনাস্থল থেকে সরে যায়।
মিরসরাইয়ের অধিবাসী সাইফুল পরিবার পরিজন নিয়ে নগরীর দক্ষিণ খুলশীতে বসবাস করতেন।
জান্নাতুল ফেরদৌসের বড় ভাই তামিম রাত সাড়ে ১২টায় চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে জানান, ‘দুপুরে দুলহান ক্লাবের সামনে থেকে আমার ভগ্নিপতিকে অপহরণ করার পরপরই আমার বোন আমাকে জানায়। আমি ঘটনাস্থলে পৌঁছে তাকে নিয়ে হালিশহর থানায় অভিযোগ দায়ের করি। তারা আমাদেরকে বিভিন্ন নাম্বার থেকে ফোন করেছে। কিন্তু কিছুক্ষণ পর পর তাদের মোবাইল বন্ধ পাওয়া যাচ্ছে। আমরা তার জীবন নিয়ে শঙ্কিত।’
যুবলীগ নেতা নওশাদ মাহমুদ রানার সাথে আগের ঝামেলা মেটানো পুলিশ কর্মকর্তা (ওসি) বলেন, ‘নওশাদ মাহমুদ রানা সিএন্ডএফ ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলামের কাছে কোটি টাকার বেশি কমিশন দাবি করেছিল। সাইফুল সাহেব অভিযোগ করলে দুই পক্ষের কাগজপত্র নিয়ে আমিসহ বসে কাগজপত্রে যে টাকা পায় তার পরিশোধের সিদ্ধান্ত দিই। সাইফুল সাহেব পুরো টাকাই শোধ করেছেন বলে আমি জানি। এরপর তাদের কী লেনদেন সেটা আর আমি জানি না।’
শুক্রবারের ঘটনার বিষয়ে জানতে চাইলে হালিশহর থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সঞ্জয় সিনহা বলেন, ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলামের স্ত্রী জান্নাতুল ফেরদৌসের অভিযোগের ভিত্তিতে বিষয়টি আমরা তদন্ত করছি। শহরের একাধিক জায়গায় আমাদের ফোর্স অভিযান চালাচ্ছে। আশা করি দ্রুত তাকে উদ্ধার করতে আমরা সক্ষম হবো।
সর্বশেষ খবরে জানা গেছে, অভিযুক্ত যুবলীগ নেতা নওশাদ মাহমুদ রানা চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের এক নেতার বাসায় আশ্রয় নিয়েছেন। সেখানে পৌঁছেছেন নগর যুবলীগের এক শীর্ষ নেতাও।
এফএম/এসএইউ/সিপি