সিটি নির্বাচনের আগে হচ্ছে না চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন

আগামী ৭, ৮ ও ৯ ডিসেম্বর পর পর তিন দিন চট্টগ্রাম উত্তর, দক্ষিণ ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনের বিষয়ে কথা থাকলেও মহানগরের সম্মেলন আর হচ্ছে না। দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের কাছ থেকে পাওয়া চূড়ান্ত নির্দেশনায় চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন নিয়ে সব ধোঁয়াশা কেটে গেছে। মহানগরের সম্মেলন কবে হবে— সেটা নিশ্চিত হওয়া না গেলেও দায়িত্বশীল সূত্রগুলো বলছে আগামী বছরের মার্চ বা এপ্রিলে অনুষ্ঠেয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে হচ্ছে না নগর আওয়ামী লীগের আওতাধীন ওয়ার্ড, থানা ও নগর কমিটির সম্মেলন।

যদিও আগামী ৭ ডিসেম্বর উত্তর জেলা ও ৮ ডিসেম্বর দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের দিনক্ষণ যখন চুড়ান্ত, তখনই দলের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম চেয়েছিলেন ৯ ডিসেম্বর নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন সম্পন্ন করতে। তবে ওয়ার্ড কমিটি গঠন নিয়ে থমকে থাকা এই সাংগঠনিক ইউনিটটির সম্মেলন নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্তের জন্য নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতৃত্ব দ্বারস্থ হন দলের সাধারণ সম্পাদক ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদেরের। বুধবার (১৩ নভেম্বর) আওয়ামী লীগের প্রয়াত নেতা আখতারুজ্জামান বাবুর স্মরণসভায় যোগ দিতে আসা ওবায়দুল কাদেরের কাছে সম্মেলনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত চান চট্টগ্রাম মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন। তখনই মেয়র নাছিরকে সম্মেলন না হওয়ার বিষয়টি জানিয়ে দেন সেতুমন্ত্রী।

এ প্রসঙ্গে মেয়র আ জ ম নাছির উদ্দীন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘চট্টগ্রাম উত্তর ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সম্মেলনের পর দিন ৯ ডিসেম্বর মহানগরের সম্মেলনও করতে চেয়েছিলেন সাংগঠনিক সম্পাদক এনামুল হক শামীম। তবে আমাদের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি চিকিৎসার জন্য বর্তমানে ব্যাংককে অবস্থান করছেন। এছাড়া ওয়ার্ড ও থানা কমিটির সম্মেলনও হয়নি। এরকম পরিস্থিতিতে সম্মেলনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত জানতে দলের সেক্রেটারি কাদের ভাইয়ের স্মরণাপন্ন হই। উনি আপাতত সম্মেলন করতে মানা করেছেন। পরবর্তীতে কখন করতে হবে তা তিনি পরে জানিয়ে দেবেন বলেছেন।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে নগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ এক নেতা জানিয়েছেন, আগামী বছরের মার্চ বা এপ্রিলে অনুষ্ঠেয় চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে হচ্ছে না নগর আওয়ামী লীগের অধীনস্থ ওয়ার্ড, থানা ও নগর কমিটির সম্মেলন। আগামী বছরের জুন বা জুলাইয়ের দিকে এসব সম্মেলন হতে পারে।

এর আগে ২ সেপ্টেম্বর থেকে ধারাবাহিকভাবে ৪৩টি সাংগঠনিক ওয়ার্ড ও প্রতিটি ইউনিটের মেয়াদোত্তীর্ণ ওয়ার্ড কমিটির সম্মেলনের উদ্যোগ নেওয়া হলেও কোনও এক অজ্ঞাত অভিযোগের প্রেক্ষিতে ওই মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ওয়ার্ড ও ইউনিট আওয়ামী লীগের সম্মেলন স্থগিত রাখা হয়। অথচ নগর আওয়ামী লীগের অনেক ওয়ার্ড ও ইউনিট কমিটির মেয়াদ অন্তত ২০ থেকে ২৫ বছর পেরিয়ে গেছে।

দলীয় সূত্র জানায়, গত ৭ সেপ্টেম্বর বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের সভায় মেয়াদোত্তীর্ণ সব কমিটির সম্মেলন আগামী ১০ ডিসেম্বরের মধ্যে শেষ করার সিদ্ধান্ত হয়। ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সম্মেলন করা নিয়ে কেন্দ্রে পাল্টাপাল্টি অভিযোগ যায় কেন্দ্রে। চট্টগ্রাম নগর আওয়ামী লীগ বিভক্ত দুই ধারার মধ্যে একটির নেতৃত্ব আছেন সিটি মেয়র ও নগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আ জ ম নাছির উদ্দীন। অন্যটির নেতৃত্বে আছেন আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক ও শিক্ষা উপমন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেল। তবে তাদের পাল্টাপাল্টি অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্র সম্মেলন স্থগিত রাখার নির্দেশ দেয়। এ নিয়ে দলীয়ভাবে আনুষ্ঠানিক কোনও বক্তব্য না আসলেও শুধু দলীয় সভানেত্রীর নির্দেশেই সম্মেলন স্থগিত করার কথা বলা হয়েছিল।

দলীয় সূত্রে জানা গেছে, আ জ ম নাছির উদ্দিনের সঙ্গে প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দীন চৌধুরী যে বিরোধ ছিল, তা বর্তমানে এসে মহিউদ্দীন পুত্র নওফেলের সময়েও চলমান রয়েছে। সেই বিরোধের ধারাবাহিকতায় বিশেষ করে ওয়ার্ড সম্মেলনকে কেন্দ্র করে তা স্পষ্ট হয় আরও। সম্মেলন স্থগিত রাখার পেছনে মহিউদ্দিন চৌধুরীর অনুসারীদের ভূমিকা ছিল বলে ধারণা রয়েছে নাছির অনুসারী অনেক নেতাকর্মীর। আবার নওফেল অনুসারীদের ধারণা, পকেট কমিটির মাধ্যমেই ওয়ার্ড কমিটি গঠনের পর নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলন করতে চান নাছির। তাই সিটি করপোরেশন নির্বাচনের আগে মহিবুল হাসান নওফেলের অনুসারীরা সম্মেলন করার পক্ষপাতী নন বলে জানা গেছে।

জান যায়, প্রয়াত এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও কাজী ইনামুল হক দানুর নেতৃত্বাধীন কমিটির মেয়াদকালীন যে ১৮টি ওয়ার্ডের সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়নি, সেই সব ওয়ার্ডের সম্মেলন আগে সম্পন্ন করারও চিন্তাভাবনা ছিল মাহতাব ও নাছিরের নেতৃত্বাধীন কমিটির। তারপর পর্যায়ক্রমে মেয়াদোত্তীর্ণ সব কমিটির সম্মেলন হওয়ার কথা ছিল। এদিকে সম্মেলনের দিনক্ষণ ঘোষণার পর ৪৩টি ওয়ার্ডের পদপ্রত্যাশী নেতাকর্মীদের মাঝে বেশ উচ্ছ্বাসও দেখা দিয়েছিল। বিভিন্ন সভা সমাবেশ নেতাদের উপস্থিতি বেশ লক্ষ্যণীয় হয়ে ওঠে।

এডি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!