সিঙ্গাপুর থেকে এস আলমের মামলা এবার সালিশি আদালতে

বাংলাদেশ থেকে অবৈধভাবে সম্পদ পাচারের অভিযোগে সরকারের নেওয়া পদক্ষেপে ক্ষতির অভিযোগ তুলে আন্তর্জাতিক সালিশি আদালতে গেছেন চট্টগ্রামভিত্তিক বিতর্কিত ব্যবসায়ী পরিবার এস আলম।

লন্ডনভিত্তিক সংবাদমাধ্যম ফিন্যান্সিয়াল টাইমস জানিয়েছে, এস আলম গ্রুপের চেয়ারম্যান সাইফুল আলম ও তার পরিবারের আইনজীবীরা গত সোমবার বিশ্বব্যাংকের ওয়াশিংটনে অবস্থিত ইন্টারন্যাশনাল সেন্টার ফর সেটেলমেন্ট অব ইনভেস্টমেন্ট ডিসপিউটসে (আইসিএসআইডি) এই আবেদন জমা দেন। বুধবার (২৯ অক্টোবর) সকালে সংবাদটি প্রকাশ করে ফিন্যান্সিয়াল টাইমস।

এস আলম পরিবারের দাবি, সরকার তাদের লক্ষ্য করে সম্পদ জব্দ, বাজেয়াপ্ত ও ধ্বংস করছে। ২০২৪ সালের ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের নেতৃত্বে গঠিত অন্তর্বর্তী সরকার এসব পদক্ষেপ নিয়েছে বলে অভিযোগ তাদের।

অন্তর্বর্তী সরকার বলছে, পূর্ববর্তী সরকার আমলে শত শত কোটি ডলার পাচার হয়েছে। সরকার সেই অর্থ উদ্ধারে শ্বেতপত্র কমিটি গঠন করে জানায়, গত ১৫ বছরে প্রায় ২৩৪ বিলিয়ন ডলার পাচার হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুরের নেতৃত্বে চলছে এই অর্থ উদ্ধারের প্রচেষ্টা।

আহসান মনসুর বলেন, এস আলম পরিবার বাংলাদেশের ব্যাংকিং খাত থেকে ১২ বিলিয়ন ডলার বিদেশে পাঠিয়েছে। তাঁর প্রশ্ন, সেই অর্থ কোথায় গেল?

এস আলম পরিবার অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছে, এসব তথ্যের কোনো ভিত্তি নেই।

ফিন্যান্সিয়াল টাইমসের প্রতিবেদনে আরও বলা হয়েছে, গত বছরের ডিসেম্বরেই এস আলমের আইনজীবীরা সরকারকে ছয় মাস সময় দিয়েছিলেন। বিরোধ না মিটলে সালিশি আদালতে যাবেন—শেষমেশ সেটিই ঘটল।

সালিশি আবেদনে বলা হয়, সরকার তাদের ব্যাংক হিসাব জব্দ, সম্পদ বাজেয়াপ্ত ও ‘ভিত্তিহীন তদন্ত’ চালিয়েছে। পাশাপাশি ‘প্ররোচনামূলক গণমাধ্যম অভিযান’ চালিয়ে ব্যবসায় ক্ষতিসাধন করা হয়েছে। আইনজীবীরা জানান, এসব ঘটনায় শত কোটি ডলার ক্ষতি হয়েছে, যদিও নির্দিষ্ট পরিমাণ উল্লেখ করা হয়নি।

বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান মনসুর বলেন, ‘যখনই আবেদন আমাদের হাতে আসবে, তখনই আমরা জবাব দেব।’ প্রধান উপদেষ্টার কার্যালয় এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি।

২০০৪ সালের বাংলাদেশ-সিঙ্গাপুর দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তির আওতায় করা এই মামলায় উল্লেখ আছে, এস আলম পরিবার ২০২০ সালে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব ত্যাগ করে ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে সিঙ্গাপুরের নাগরিকত্ব নেয়। সিঙ্গাপুরের নাগরিক হিসেবে বিনিয়োগ সুরক্ষার দাবি তুলেছে পরিবারটি।

পূর্বে আইএমএফে কর্মরত আহসান মনসুরের অভিযোগ, এস আলম ও তার সহযোগীরা সামরিক গোয়েন্দা সংস্থার সহায়তায় জোরপূর্বক ব্যাংক দখল করে ঋণ ও আমদানি জালিয়াতি করেছেন। তাঁর ভাষায়, ‘আমাদের হাতে বিপুল প্রমাণ আছে, তারা কত সম্পদ বিদেশে পাঠিয়েছে। এখন আমরা তাদের ব্যাংকগুলো নিয়ে কাজ করছি। এগুলোর অবস্থা খুবই খারাপ। এগুলো টিকিয়ে রাখতে বেইল আউট দেওয়া হয়েছে।’

অন্যদিকে, এস আলম পরিবারের দাবি, সরকার তাদের বিরুদ্ধে কোনো প্রমাণ দিতে পারেনি। চলতি বছরের শুরুতে আহসান মনসুর বলেছিলেন, বিদেশে অর্থ পাচারের অভিযোগে থাকা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আর্থিক সমঝোতার বিষয় বিবেচনা করা হচ্ছে।

ksrm