‘জিডি করতে টাকা নয়’— সিএমপির থানায় সাইনবোর্ড ঝোলাতে বললেন আইজিপি

২০৪১ সালের মধ্যে যখন বাংলাদেশ উন্নত দেশ হবে তখনকার পুলিশও যেন উন্নত দেশের মত হয় সেই ধরনেরই পুলিশিং দেখতে চান আইজিপি ড. জাবেদ পাটোয়ারী। ‘হ্যালো ওসি’ সহ সব ধরনের জনবান্ধব পুলিশিং কার্যক্রমকে আরও গতিশীল করতেও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশকে (সিএমপি) নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। জনবান্ধব পুলিশিংয়ের প্রথম ধাপে হিসেবে প্রত্যেক থানায় জিডি করার সময় যেন কোনও টাকা নেওয়া না হয় সেটি নিশ্চিত করার পাশাপাশি তার কার্যক্রম মনিটরিং করতে সিনিয়র অফিসারদের নির্দেশ দিয়েছেন আইজিপি জাবেদ পাটোয়ারি। এমনকি জিডি করতে টাকা নেওয়া হবে না সেই বিষয়টি থানার নোটিশ বোর্ডে জানিয়ে দিতেও বলেছেন তিনি।

মঙ্গলবার (১৫ অক্টোবর) সিএমপির কনফারেন্স রুমে সিনিয়র অফিসার ও ১৬ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাদের (ওসি) সঙ্গে অপরাধ বিষয়ক এক সভায় পুলিশের মহা-পরিদর্শক (আইজিপি) ড. জাবেদ পাটোয়ারী এসব নির্দেশনা দেন। এ সময় চট্টগ্রাম রেঞ্জের ডিআইজি খন্দকার গোলাম ফারুক, সিএমপি কমিশনার মাহবুবর রহমান, অতিরিক্ত কমিশনার (অপরাধ) আমেনা বেগম, অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) এসএম মোস্তাক আহমেদ খানসহ সিএমপির উপ-কমিশনাররা উপস্থিত ছিলেন।

পুলিশ কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে আইজিপি বলেন, ‘মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর ভিশন অনুযায়ী আমরা ২০৪১ সালের মধ্যে একটি উন্নত দেশ প্রতিষ্ঠায় এগিয়ে যাচ্ছি। সেই ভিশনের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য হিসেবে বাংলাদেশ পুলিশকেও গড়ে তুলতে হবে। উন্নত দেশ যেমন হবে তেমনি আমরা উন্নত পুলিশিং ব্যবস্থাও দেখাতে চাই। সেজন্য সকল পুলিশ সদস্যের কার্যক্রম হতে হবে জনবান্ধব গণমুখী।’

তিনি আরও বলেন, ‘পুলিশের প্রতি বেশিরভাগ মানুষেরই ধারণা খারাপ। মানুষ এখনও পুলিশকে আস্থা নিতে পারে না। থানায় যেতে ভয় পায়। এসব ধারণা বদলাতে হবে। বেশি করে জনবান্ধব পুলিশিং করতে হবে। মানুষ যাতে হয়রানির শিকার না হয় সেদিকে সিনিয়র অফিসারদেরও মনিটর করতে হবে।’

এসময় সিএমপি কমিশনার মো. মাহবুবর রহমান আইজিপির উদ্দেশ্যে বলেন, ‘স্যার প্রতি শুক্রবার বিভিন্ন মসজিদে গিয়ে আমার থানার ওসিগণ মাদক সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদবিরোধী বক্তব্য রাখছেন। এছাড়া একেবারে রুট লেভেলে পুলিশিং সেবাকে পৌঁছে দিতে ‘হ্যালো ওসি’ নামে একটি কার্যক্রম চালু করা হয়েছে। এর উদ্যোক্তা হচ্ছেন কোতোয়ালী থানার ওসি মহসীন। সেই কার্যক্রমের মাধ্যমে আমরা একেবারে রুট লেভেলে পৌঁছে দিচ্ছি পুলিশকে। যারা জীবনে কোনও দিন থানায় আসার সাহস করে না তারাও এই হ্যালো ওসির বুথে এসে সরাসরি ওসির সঙ্গে কথা বলতে পারছেন। তারাদের অভিযোগ জানাতে পারছেন, সমস্যাও সমাধান করছেন। যা সিএমপির ১৬ থানাতেই বর্তমানে চলমান রয়েছে।

এর উত্তরে আইজিপি ড. জাবেদ পাটোয়ারী বলেন, ‘হ্যালো ওসি’র কনসেপ্টটা ঠিক আছে। যেভাবেই হোক, পুলিশিং কার্যক্রমকে জনগণের কাছে নিয়ে যেতে হবে। পুলিশ নিয়ে মানুষের যে নেতিবাচক ধারণা তা পাল্টাতে হবে। পুলিশকে যাতে মানুষ আস্থায় নিতে পারে।

আইজিপি আরও বলেন, থানা হলো সেবার প্রাপ্তির প্রধান স্থান। কিন্তু মানুষ থানায় যেতে ভয় পান। সামান্য একটি জিডি করতেই টাকা দিতে হয় বলে অভিযোগ আছে। এই অভিযোগমুক্ত হতে হবে। আমি সিএমপিকে নির্দেশ দিচ্ছি, প্রত্যেক থানায় জিডি করতে কোনও টাকা নেওয়া হয় না— এই লেখা সম্বলিত নোটিশ থানায় বড় করে সাইনবোর্ড টাঙাতে হবে। শুধু সাইনবোর্ড টাঙালে হবে না। এই নির্দেশনা যথাযতভাবে হচ্ছে কিনা তা মনিটরিং করতে হবে সিনিয়র অফিসারদের। সেবাপ্রার্থীদের কাছেও ফোন করে জানতে হবে সত্যতা। আমি সিএমপিকে বাংলাদেশ পুলিশের মডেল ইউনিট হিসেবে দেখতে চাই।

এসময় কোতোয়ালীর ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ মহসীন আইজিপিকে উদ্দেশ্যে করে বলেন, স্যার আমরা আপনার নির্দেশ মত চলব। সিএমপিকে দেশের মডেল ইউনিট হিসেবে গড়ে তুলতে কাজ করব। আপনার সঙ্গে আমরা ১৬ থানার ওসি একটি ছবি তুলে শপথ নিতে চাই জনবান্ধব ও গুড পুলিশিংয়ের মাধ্যমে সিএমপিকে মডেল ইউনিট করব।’ এরপর আইজিপি সবাইকে নিয়ে ছবি তুলেন।

এডি/এসএস

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!