সিইপিজেডে কৌশলে কর্মী ছাঁটাই, ভেতরে চলছে ঋণদান সমিতিও

ইয়াং এন হ্যাট (বিডি)

করোনার অজুহাতে বেতন ছাড়া পোশাক শ্রমিকদের ছুটিতে পাঠানো ও উচ্চ বেতনধারী সিনিয়র অপারেটরদের সুকৌশলে কাজের বাইরে রাখতে কর্মস্থলে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না— এমন অভিযোগ উঠেছে চট্টগ্রামের সিইপিজেডের ইয়াং এন হ্যাট (বিডি) লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজারসহ তিন কর্মকর্তার বিরুদ্ধে।

এই তিন কর্মকর্তা হলেন ইয়াং এন হ্যাট (বিডি) লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার (জিএম) এসএম আলমগীর, এইচআর ম্যানেজার রিফা ও ফ্যাক্টরি ম্যানেজার সিদরাম বাবু।

অভিযোগ রয়েছে, বেতন ছাড়া শ্রমিকদের ছুটিতে পাঠিয়ে কৌশলে ওই শ্রমিকদের বেতনের টাকা আত্মসাতের চেষ্টা করছেন এই তিন কর্মকর্তা। শুধু তাই নয়, বেপজার নিয়ম ভেঙে ওই কারখানার ভেতরে ফ্যাক্টরি ম্যানেজার সিদরাম বাবুর নেতৃত্বে চলছে ‘অমিয় বন্ধন সঞ্চয় ও ঋণদান সমবায় সমিতির লিমিটেড’ নামে একটি সমিতির কার্যক্রমও।

জানা গেছে, গত ২-৩ দিন ধরে সকালে কর্মস্থলে গিয়েও কারখানায় প্রবেশ করতে পারেনি সেখানকার নিরাপত্তাকর্মীরা। অথচ কম বেতনে থাকা কারখানার শত শত শ্রমিককে কাজে যোগদানের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে। যাদের কারখানায় ঢুকতে দেওয়া হয়নি তাদের মধ্যে অনেকেই ওই প্রতিষ্ঠানে দীর্ঘদিন ধরে কাজ করছেন। ১৯৯১ সাল থেকে চাকরি করে আসা সিনিয়র অপারেটর ফরিদা আক্তার, ২০০০ সাল থেকে চাকরি করে আসা সিনিয়র অপরেটর পারভীন, ২০০২ সাল থেকে চাকরি করে আসা ফিনিশিং সিনিয়র অপারেটর সুমা (ছদ্মনাম) ও সিনিয়র অপারেটর রেবেকাসহ আরও অনেককেই হঠাৎ করে কারখানাতেই ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন শ্রমিক জানান, ফ্যাক্টরিতে চলছে বেশি বেতনের শ্রমিকদের তাড়ানোর পরিকল্পনা। করোনা পরিস্থিতি ভাল হলে শ্রমিকদের কল করে ডাকা হবে বলে জানিয়ে কৌশলে বেতন ছাড়া ৩-৬ মাসের ছুটিতে যেতেও বাধ্য করা হচ্ছে অনেককে। আর এ কাজে সহযোগিতা করছেন ফ্যাক্টরি ম্যানেজার সিদরাম ও রিফা নামে এক কর্মকর্তা।

এদিকে শ্রমিক সংগঠন ওয়ার্কার এসোসিয়েশনের (ডব্লিউএ) প্রাক্তন সভাপতি মো. মামুন বলেন, ‘করোনা ইস্যুতে ইয়াং এন হ্যাট কারখানার সিনিয়র অপারেটরদের বেতন না দিতে কৌশলে তাদের ছাঁটাই করছেন সেখানকার কয়েকজন কর্মকর্তা। শুধু তাই নয়, অনেককে চাকরি থেকে বরখাস্তের ভয় দেখিয়ে কৌশলে পদত্যাগে বাধ্য করা হচ্ছে। পদত্যাগের গুজব শুনে বাধ্য হয়ে গত ২২ মার্চ আমি নিজেও রিজাইন করি।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে ইয়াং এন হ্যাট (বিডি) লিমিটেডের কারখানার ম্যানেজার সিদরাম বাবু বলেন, ‘আমি একজন ফ্যাক্টরি ম্যানেজার। আমি কেন ছাঁটাইয়ের কথা বলব? ফ্যাক্টরির বিষয়ে আপনি বেপজার সঙ্গে কথা বলেন।’

কারখানার ভেতরে অবৈধ সমিতির কার্যক্রম পরিচালনার বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি এ সম্পর্কে কিছু বলতে পারব না।’

অন্যদিকে ইয়াং এন হ্যাট (বিডি) লিমিটেডের জেনারেল ম্যানেজার এসএম আলমগীর বলেন, ‘আমার কারখানার পোশাক শ্রমিকদের বিষয়ে আনা অভিযোগ সত্য নয়। আপনি আমার কারখানায় এসেই কথা বলেন।’ পরে তিনি মুঠোফোনের সংযোগ কেটে দেন।

চট্টগ্রাম রপ্তানি প্রক্রিয়াজাতকরণ অঞ্চল (বেপজা) সিইপিজেডের জেনারেল ম্যানেজার খুরশিদ আলম বলেন, ‘করোনার অজুহাতে বেপজার ভেতরে কোন শ্রমিক ছাঁটাই করা হলে তার জন্য কারখানা কর্তৃপক্ষকে ছাড় দেওয়া হবে না। গত কিছুদিন আগে এই ধরনের একটি অভিযোগ পেয়েছিলাম। পরে সেখানে খোঁজখবর নিয়ে ভুক্তভোগী দুই শ্রমিকের সব পাওনা আদায় করে দিয়েছি ওই কারখানা থেকে।’ এই ধরনের সমস্যায় ক্ষতিগ্রস্থ ব্যক্তিদের তার সঙ্গে যোগাযোগ করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।

ইয়াং এন হ্যাট কারখানার বিরুদ্ধে অভিযোগের বিষয়টি খতিয়ে দেখা হবে জানিয়ে তিনি আরও বলেন, ‘বেপজার ভেতরে সমিতির কার্যক্রম চালানো সম্পূর্ণ নিষেধ। এ ধরনের কর্মকাণ্ড তদন্তে প্রমাণিত হলে সংশ্লিষ্ট ব্যক্তির বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান এই কর্মকর্তা।’

এসএ/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!