রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল চট্টগ্রামের সেন্ট্রাল রেলওয়ে বিল্ডিং (সিআরবি) এলাকায় দৌরাত্ম্য বেড়েই চলেছে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর (আরএনবি) সিপাহী জসিম উদ্দিনের। তার সহযোগী হিসেবে আছেন আরএনবির অবসরপ্রাপ্ত সদস্য হারুন। এ দু’জনের অপকর্মের পেছনে আরএনবির চিফ ইন্সপেক্টর (সিআই) মাসুদুর রহমান রয়েছেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
সিআরবি ও আশপাশের এলাকায় প্রতিদিন ৫০ হাজার টাকা চাঁদা তোলেন জসিম ও হারুন। সিআরবি এলাকার ভ্রাম্যমাণ দোকান প্রতি দৈনিক ৩০০ টাকা করে নেওয়া হয়। আবার এসব দোকান থেকে নেওয়া হয় এককালীন এডভান্সও। এছাড়া কদমতলী সিএনজি পাম্পের পেছনের গলিতে দিন-রাত যেসব পণ্যবাহী ট্রাক মালামাল আনলোড করে তাদের কাছ থেকে গাড়িভেদে নেওয়া হয় ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা। একইসঙ্গে বিভিন্ন টং দোকানে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ দিয়েও এককালীন টাকা ছাড়াও মাসে ৫০০ থেকে ১০০০ টাকা আদায় করেন তারা।
সিআরবির সিআই থেকে শুরু করে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ এসব টাকার ভাগ পান বলে জানা গেছে।
এর আগে গত ১৯ জুন সিআরবিতে রাস্তার ধারে বসা ‘নিষেধ’, দোকান থেকে ‘চাঁদা’ নেন আরএনবির সিপাহী এবং ২২ জুন ‘সিআরবিতে দর্শনার্থীদের বসতে বাধা, ব্যবস্থা নেওয়া হয়নি সেই আরএনবির সিপাহীর বিরুদ্ধে’—শিরোনামে দুটো প্রতিবেদন প্রকাশিত হয় চট্টগ্রাম প্রতিদিনে। এরপর জসিম গণমাধ্যমকর্মীদের উদ্দেশ্য করে তার ফেসবুক আইডিতে কুরুচিপূর্ণ পোস্ট দেন। এর প্রতিবাদে গণমাধ্যমকর্মীরা জসিমের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ১৮ জুলাই মহাব্যবস্থাপক (পূর্ব) এবং চিফ কমান্ড্যান্ট বরাবরে লিখিত অভিযোগ দেন।
অভিযোগের পর ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয় কমান্ড্যান্ট রেজওয়ান উর রহমানকে। কিন্তু সেই নির্দেশের পর সাতদিনের মধ্যে অভিযুক্তদের লিখিত বক্তব্য দেওয়ার কথা থাকলেও এখনও পর্যন্ত তা জমা পড়েনি চিফ কমান্ড্যান্টের হাতে।
মঙ্গলবার (২ আগস্ট) বিকালে সিআরবি এলাকায় সরেজমিন গিয়ে দেখা যায়, ভ্রাম্যমাণ প্রায় অর্ধ শতাধিক দোকান রয়েছে সেখানে। বেশ কিছু ভ্রাম্যমাণ দোকানে দেওয়া হয়েছে অবৈধ বিদ্যুৎ সংযোগ। আশপাশে বিভিন্ন ঝুপড়ি ও বস্তিতেও দেওয়া হয়েছে এ অবৈধ সংযোগ। এছাড়া কদমতলীর সিএনজি পাম্পের পেছনের গলিতে দেখা গেছে মাল আনলোডের অপেক্ষায় থাকা অনেকগুলো ট্রাক।
পরিচয় গোপন রেখে দোকান ভাড়া নেওয়ার বিষয়ে জানতে কথা হয় আরএনবির ‘ক্যাশিয়ার’ হিসেবে পরিচিত হারুনের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘প্রতি দোকান বাবদ দৈনিক ৩০০ টাকা মাসিক ভাড়া এবং এককালীন এডভান্স দিতে হবে।’ এ বিষয়ে সিআই মাসুদের সঙ্গে দেখা করে চূড়ান্ত কথা বলার জন্য জানান। এ সময় তিনি কীভাবে মাসুদের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে তা বলে দেন।
আরও জানা গেছে, কমান্ড্যান্ট রেজওয়ান উর রহমানের সঙ্গে সিআই মাসুদুর রহমানের রয়েছে সখ্যতা। লোকবল সংকটের কারণে যেখানে চিফ কমান্ড্যান্ট দেহরক্ষী রাখেননি সেখানে কমান্ড্যান্টের দেহরক্ষী দু’জন। তারা হলেন সিপাহি আরিফুর রহমান ও কামরুল ইসলাম।
এদিকে সাংবাদিকদের লিখিত অভিযোগ প্রসঙ্গে আরএনবির কমান্ড্যান্ট (পূর্ব) রেজওয়ান উর রহমান বলেন, ‘তাদের কাছ থেকে সাতদিনের মধ্যে লিখিত জবাব চাওয়া হয়েছে। তবে এখনও তারা জবাব দেননি।’
পরে দেহরক্ষীর বিষয়ে জানতে কমান্ড্যান্ট রেজওয়ান উর রহমানকে মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।
চিফ কমান্ড্যান্ট জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘গণমাধ্যমকর্মীদের অভিযোগের বিষয়টি তদন্ত করে কমান্ড্যান্টকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে। এছাড়া চাঁদাবাজির অভিযোগটি আমি জেনে ব্যবস্থা নেবো।’
রেলওয়ে মহাব্যবস্থাপক জাহাঙ্গীর হোসেন বলেন, ‘আরএববির এসব কর্মকর্তার চাঁদাবাজির বিষয়টির খোঁজ নিয়ে দেখছি। সত্যতা পেলে ব্যবস্থা নেবো। গণমাধ্যমকর্মীদের অভিযোগের বিষয়ে চিফ কমান্ড্যান্টকে ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে।’
ডিজে