সিআইডির হাতে পাঁচলাইশের ওসির বিরুদ্ধে মামলার তদন্ত, সময় ৩৫ দিন
সেই মুস্তাকিমের জানমালের নিরাপত্তা চেয়ে আদালতে পিটিশন
পিতৃহারা যুবককে পুলিশি হেফাজতে নির্মমভাবে নির্যাতনের অভিযোগে চট্টগ্রামের পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিমসহ একাধিক পুলিশের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করা হয়েছে চট্টগ্রামের আদালতে।
সোমবার (২০ ফেব্রুয়ারি) বিকেলে চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ ড. বেগম জেবুননেছার আদালতে ওই মামলা দায়ের করা হয়।
এই মামলায় পাঁচলাইশ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন (৪২) এবং উপপরিদর্শক (এসআই) আবদুল আজিজকে (৩৮) আসামি করা হয়েছে।
মামলাটি আমলে নিয়ে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগকে (সিআইডি) তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। আগামী ২৭ মার্চের মধ্যে এই তদন্ত প্রতিবেদন আদালতে দাখিলের জন্য বলা হয়েছে। এদিকে একই সঙ্গে বাদীর জানমালের নিরাপত্তার জন্য আলাদা একটি পিটিশন দেওয়া হয়েছে আদালতে।
মামলা গ্রহণ ও সিআইডিকে তদন্তের আদেশ দেওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন চট্টগ্রাম মহানগর পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট আবদুর রশিদ।
বাদীর আইনজীবী অ্যাডভোকেট জিয়া হাবীব আহ্সান জানান, পাঁচলাইশ থানা হেফাজতে সৈয়দ মো. মোস্তাকিমকে নির্যাতনের অভিযোগে ওসি মোহাম্মদ নাজিম উদ্দিন এবং এসআই আবদুল আজিজের বিরুদ্ধে হেফাজত নিবারণ আইনে মামলার আবেদন করা হয়েছে। ভুক্তভোগী আদালতে জবানবন্দি দিয়েছেন। শুনানি শেষে মামলাটি আদেশের জন্য অপেক্ষমাণ রেখেছিলেন আদালত। পরবর্তীতে মামলাটি সিআইডিকে তদন্তের আদেশ দেওয়া হয়। আগামী ২৭ মার্চের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের জন্য বলা হয়েছে। একইসঙ্গে বাদীর জান-মালের নিরাপত্তার জন্য আলাদা একটি পিটিশন দেওয়া হয়েছে।
মামলার অভিযোগে বলা হয়, সৈয়দ মোস্তাকিম তার মাকে গত ৭ বছর ধরে চট্টগ্রাম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে কিডনি ডায়ালাইসিস করান। সম্প্রতি ডায়ালাইসিসের মূল্য বেড়ে যাওয়ায় তিনিসহ রোগীর স্বজনরা মিলে আন্দোলন করেন।
গত ১০ জানুয়ারি তারা চমেক হাসপাতালের প্রধান গেটে জড়ো হয়ে মানববন্ধন করেন। পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিম উদ্দিনের নেতৃত্বে একদল পুলিশ সেখানে এসে আন্দোলনকারীদের ওপর চড়াও হন। একপর্যায়ে ওসি নাজিম মোস্তাকিমকে গ্রেফতার করে প্রথমে একটি বেসরকারি ডায়াগণস্টিক সেন্টারের নিচে মারধর করেন। পরবর্তী থানায় তাকে মারধর ও নির্যাতন করা হয়। মারধরের সময় এসআই আবদুল আজিজ মোস্তাকিমকে বলেন ‘ওসি নাজিম স্যারের সঙ্গে আর বেয়াদবি করবি?’ এ সময় ওসি নাজিম বলেন, ‘শালারে রিমান্ডে এনে থানায় পিটাতে হবে, তারপর বুঝবি পুলিশ কী জিনিস?’ এরপর থানায় মারধরের বিষয়টি ফাঁস করলে মোস্তাকিমকে ক্রসফায়ার দেওয়ার হুমকি দেওয়া হয়।
গত ১০ ডিসেম্বর কিডনি ডায়ালাইসিস ফি বৃদ্ধির প্রতিবাদে রোগীর স্বজনেরা আন্দোলন করেন। এ সময় পুলিশের সাথে আন্দোলনরতদের ধস্তাধস্তির ঘটনা ঘটে। গ্রেফতার মোস্তাকিমের নাম উল্লেখ করে এবং অজ্ঞাত ৫০ থেকে ৬০ জনের বিরুদ্ধে মামলা দায়ের করেন পাঁচলাইশ থানার উপপরিদর্শক মোস্তাফিজুর রহমান।
ওইদিন আন্দোলনকারী একজনকে মারতে মারতে পাশের এপিক হেলথ কেয়ারের ভেতরে নিয়ে যান পাঁচলাইশ থানার ওসি নাজিমসহ কয়েকজন পুলিশ। সেখানে এক নারী কিডনি রোগীকে লাথি মেরে নিচে ফেলে দেন ওসি নাজিম উদ্দিন মজুমদার। ঘটনার প্রতিবাদ করায় আরেক কিডনি রোগীকে কলার ধরে মারতে থাকেন ওসিসহ কয়েক পুলিশ সদস্য। মারধরে অসুস্থ হয়ে পড়লে ওই রোগীকে তড়িঘড়ি নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। এ ঘটনায় তুমুল নিন্দার ঝড় ওঠে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে।
আরএম/সিপি