প্রখ্যাত চিত্রনায়ক সালমান শাহকে হত্যা মামলায় নতুন মোড় এসেছে। ঢাকার একটি আদালত তার স্ত্রী সামীরা হক ও মা লতিফা হক লিও ওরফে লুসি এবং খলনায়ক আশরাফুল হক ডনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দিয়েছে। আদালতের এ আদেশে তিনজনের বিদেশযাত্রা স্থগিত হওয়ায় মামলার তদন্তে নতুন গতি আসতে পারে।
সালমান শাহের শাশুড়ি লতিফা হক লিও ওরফে লুসি চট্টগ্রামভিত্তিক লুসি বিউটি পার্লারের স্বত্ত্বাধিকারী।
ঢাকার মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুজ্জামান মঙ্গলবার এই আদেশ দেন। লুসি মামলার এজহারনামীয় তিন নাম্বার আসামি। এর আগে ২৭ অক্টোবর সামীরা হক ও খলনায়ক আশরাফুল হক ডনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা দেন ম্যাজিস্ট্রেট সাইফুজ্জামান। এইভাবে মামলায় তিনজনের দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা কার্যকর হলো।
১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর সালমান শাহের মৃত্যুতে রমনা থানায় একটি অপমৃত্যু মামলা দায়ের করা হয়েছিল। কিন্তু ২০ অক্টোবর ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ মো. জান্নাতুল ফেরদৌস ইবনে হক বাদীপক্ষের করা রিভিশন মঞ্জুর করে মামলাটি হত্যা মামলা হিসেবে গ্রহণের নির্দেশ দেন। এরপর ২১ অক্টোবর সালমান শাহের মামা মোহাম্মদ আলমগীর রমনা থানায় মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় সালমান শাহের স্ত্রী সামীরা হকসহ ১১ জনকে আসামি করা হয়। এদের বিরুদ্ধে দণ্ডবিধির ৩০২/৩৪ ধারায় অভিযোগ আনা হয়েছে।
সামীরা ছাড়া মামলার অপর আসামিরা হলেন শিল্পপতি ও সাবেক চলচ্চিত্র প্রযোজক আজিজ মোহাম্মদ ভাই, লতিফা হক লুসি, খলনায়ক আশরাফুল হক ডন, ডেবিড, জাভেদ, ফারুক, মে-ফেয়ার বিউটি সেন্টারের রুবি, আব্দুস ছাত্তার, সাজু এবং রেজভি আহমেদ ফরহাদ (১৭)। এছাড়া অজ্ঞাতনামা আরো অনেককে আসামি করা হয়েছে।
মামলার অভিযোগে মোহাম্মদ আলমগীর উল্লেখ করেছেন, ১৯৯৬ সালের ৬ সেপ্টেম্বর তার বোন নিলুফার জামান চৌধুরী, বোনের স্বামী কমর উদ্দীন আহমদ চৌধুরী ও তাদের ছেলে শাহরান শাহ নিউ ইস্কাটনের বাসায় সালমান শাহের সঙ্গে দেখা করতে যান। সেখানে তারা জানতে পারেন সালমান ঘুমাচ্ছেন। কিছুক্ষণ পর প্রডাকশন ম্যানেজার সেলিম ফোন করে জানান, সালমানের কিছু হয়েছে। দ্রুত তারা বাসায় ফিরে দেখেন শয়নকক্ষে সালমানের নিথর দেহের পাশে কয়েকজন নারী তার হাত-পায়ে তেল মালিশ করছেন। পাশের কক্ষে সামীরার আত্মীয় রুবি বসে ছিলেন। সালমানের মা চিৎকার করে তাকে হাসপাতালে নেওয়ার অনুরোধ করেন। পথে তারা তার গলায় দড়ির দাগ এবং মুখমণ্ডল ও পায়ে নীল দাগ লক্ষ্য করেন। পরে হলি ফ্যামিলি হাসপাতাল হয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হলে কর্তব্যরত চিকিৎসক জানান, সালমান শাহ অনেক আগেই মারা গেছেন।
মোহাম্মদ আলমগীর আরও উল্লেখ করেন, সালমান শাহের বাবা কমর উদ্দীন আহমদ চৌধুরী মৃত্যুর আগে ছেলের মৃত্যুকে হত্যা বলে সন্দেহ করেন। ১৯৯৭ সালের ২৪ জুলাই চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে তিনি একটি দরখাস্ত দাখিল করেন। এতে রমনা থানার অপমৃত্যু মামলাটি হত্যা মামলা হিসেবে গ্রহণ এবং সিআইডি’র মাধ্যমে তদন্তের আবেদন করা হয়। সালমানের বাবার মৃত্যুর পর আলমগীর তার বোনের পক্ষ থেকে মামলাটি পরিচালনা করছেন। মামলায় অভিযুক্তদের মধ্যে কেউ মৃত্যুবরণ করলে প্রমাণ সাপেক্ষে তারা দায়মুক্তি পাবেন। তবে, এজাহারনামীয় ও অজ্ঞাতনামা পলাতক আসামিরা পূর্বপরিকল্পিতভাবে পরস্পর যোগসাজশে সালমান শাহকে হত্যা করেছেন বলে অভিযোগে উল্লেখ করা হয়েছে।



