সামনে বর্ষা, বিপদ মাথায় নিয়ে বাঁশের সাঁকো বানালো উত্তর পতেঙ্গার মানুষ

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের অবহেলাকেই দুষছে এলাকাবাসী

না, এটি মফস্বলের কোনো ছবি নয়। তবে সড়কটি দেখে মনে হবে যেন এটি কোন অজপাড়া গাঁয়ের চলাচল পথ। আর সড়কে এই হালই দেখিয়ে দেয় শহরের ভেতর চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের (চসিক) উন্নয়নচিত্রের নমুনা। চলাচলে প্রতিদিনই নিদারুন কষ্টে দিন যাচ্ছে উত্তর পতেঙ্গার মুসলিমাবাদ চরপাড়া সংযোগ সড়কের বাসিন্দাদের।

চসিক কিংবা কোন উন্নয়ন সংস্থার সহযোগিতা না পেয়ে বর্ষার দুর্ভোগ থেকে রেহাই পেতে মাত্র ৭০০ ফুটের এ সড়কে এলাকাবাসী নিজ খরচে ৩০০ দৈর্ঘ্য এবং ৩ ফুট প্রস্থের বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেছে। এতে ব্যয় হয়েছে ৪০ হাজার টাকা। সড়কের উন্নয়নে জন্য সিটি মেয়রের হস্তক্ষেপ কামনা করেও কোন প্রতিকার মেলেনি এমন অভিযোগ এলাকাবাসীর।

স্থানীয় সমাজকর্মী মোহাম্মদ সম্রাট এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘সড়কের এমন বেহাল দশায় গ্রীষ্ম মৌসুমেও চলাচলে দারুণ দুর্ভোগ পোহাতে হয়। বর্ষা মৌসুমে এ সড়কে হাঁটু পরিমাণ পানি ডিঙিয়ে কর্মস্থলে যেতে হয়। এলাকায় অনেক সড়কের উন্নয়ন হলেও অজ্ঞাতকারণে এ সড়কে কোন সংস্কার হয়নি। চসিক নির্বাচনে কাউন্সিলর প্রার্থীদের আশার বাণীও শুনেছি অনেক। কিন্তু নির্বাচনী বৈতরণী পার হয়েই সবাই ভুলে যায় আমাদের দুর্ভোগের কথা।’

chittagong-north-patenga-bamboo-bridge
এলাকাবাসী নিজ খরচে ৩০০ দৈর্ঘ্য এবং ৩ ফুট প্রস্থের বাঁশের সাঁকো নির্মাণ করেছে

জানা যায়, বর্ষা মৌসুমেই সড়কটি তলিয়ে যায় পানির নিচে। এলাকার অন্তত ২০ হাজার মানুষের মধ্যে হাঁটু পানিতেও এ সংযোগ সড়কেই চলাচল করতে হয় অন্তত তিন হাজার মানুষকে। বর্ষায় পানিতে তলিয়ে যাওয়া সড়কে চলাচল করতে গিয়ে গর্তে পড়ে আহত হওয়ার নজিরও রয়েছে অনেক। চসিকের বৈদ্যুতিক খুঁটিগুলোতে পর্যাপ্ত বাতি না থাকায় সন্ধ্যাতেই দুর্ভোগে পড়তে হচ্ছে পথচারীদের।

উত্তর পতেঙ্গায় মুসলিমাবাদ চরপাড়ায় এ সংযোগ সড়কেই রয়েছে একটি মসজিদ। এ মসজিদে স্থানীয়রা নামাজ আদায় করছে প্রতিদিনই। মসজিদের অপ্রতুল জায়গার কারণে মুসল্লিরা শুক্রবার জুমার নামাজ আদায় করেছে সড়কের ওপরই। বর্ষায় সড়কটি পানির নিচে তলিয়ে যাওয়ায় মসজিদে নামাজ আদায় করতে পারে না স্থানীয় মুসল্লিরা।

মুসলিমাবাদ এলাকার বাসিন্দা বঙ্গবন্ধু স্মৃতি ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম মহানগরের সাংগঠনিক সম্পাদক মো. জয়নাল আবেদিন সড়কের উন্নয়নের বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সুদৃষ্টি কামনা করে বলেন, মসজিদে নামাজ আদায়সহ নাগরিক দুর্ভোগের বিষয়টি মাথায় রেখে যদি বর্ষার আগেই সড়কের উন্নয়ন বা বিকল্প ব্যবস্থা করা যায়, এলাকার মানুষ দুর্ভোগ থেকে মুক্তি পাবে।

মসজিদ কমিটির পক্ষে মুসলিমাবাদ সোলাইমান কন্টাক্টার জামে মসজিদের সাধারণ সম্পাদক হাজী মো. আব্দুল হক বলেন, মুসলিমাবাদ দিয়ে চরপাড়ায় যাতায়াতের সড়কটির বেহাল দশা থেকে সাময়িক রেহাই পেতে ইতিমধ্যে মসজিদ কমিটির অর্থায়নে প্রায় ৪০ হাজার টাকা ব্যয়ে বাঁশের সাঁকো নির্মাণ ও সড়কে মাটি ভরাট করা হয়েছে।

এ বিষয়ে ৪০ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর হাজী মো. জয়নাল আবেদিন চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ৪০ নং ওয়ার্ডের বিভিন্ন সড়কে ব্যাপক উন্নয়ন হয়েছে। কিছু কিছু কাজ এখনও শেষ হয়নি। মুসলিমাবাদ দিয়ে চরপাড়ায় যাতায়াতের সড়কের দৈর্ঘ্য প্রায় ৭০০ ফুট। সড়কটির উন্নয়নের জন্য ৫০ লাখ টাকায় দুবার দরপত্র আহবান করা হলেও কেউ দরপত্রে অংশ নেননি। এতে আর সড়কটির উন্নয়ন করা সম্ভব হয়নি।

তিনি বলেন, বর্ষার আগে এ সড়কের উন্নয়ন সম্ভব নয়। তবে আমি কাউন্সিলর থাকাকালীন সড়কের উন্নয়ন কাজ শেষ করব। জনসাধারণের সুবিধার্থে মুসলিমাবাদ দিয়ে চরপাড়ায় যাতায়াতের জন্য সড়কটিতে খুব শীঘ্রই বৈদ্যুতিক খুঁটিতে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!