উপজেলা নির্বাচন/ সাতকানিয়ায় শিকে ছিঁড়ল বনফুলের মোতালেবের ভাগ্যে
'প্রতারণায়' মনোনয়নবঞ্চিতদের ক্ষোভ
আগামী ১৪ অক্টোবর অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া দক্ষিণ চট্টগ্রামের সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পেলেন শিল্পপতি থেকে রাজনীতিবিদ বনে যাওয়া এমএ মোতালেব। তিনি সাতকানিয়া উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি এবং বনফুল অ্যান্ড কিষোয়ান গ্রুপের চেয়ারম্যান।
শনিবার (৭ সেপ্টেম্বর) বিকেলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে দলের সংসদীয় বোর্ড ও স্থানীয় সরকার মনোনয়ন বোর্ডের সভায় সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে এমএ মোতালেবকে দলের পক্ষ থেকে চেয়ারম্যান প্রার্থী হিসেবে মনোনয়ন চূড়ান্ত করা হয়।
এমএ মোতালেব স্ত্রীর চিকিৎসার কারণে বর্তমানে ভারতে রয়েছেন। রোববার (৮ সেপ্টেম্বর) তার দেশে ফেরার কথা রয়েছে।
৪ আগস্ট নির্বাচন কমিশন সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদ নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করে। নির্বাচন কমিশনের ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী আগামী ১৪ অক্টোবর সাতকানিয়া উপজেলা পরিষদের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। অতীতে ব্যালট পেপারের মাধ্যমে এখানে ভোটগ্রহণ করা হলেও এবারই প্রথম সবকটি ভোট কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত হবে ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে উপজেলা নির্বাচন। এ নির্বাচনে মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ তারিখ ১২ সেপ্টেম্বর। ১৫ সেপ্টেম্বর বাছাই ও ২২ সেপ্টেম্বর মনোনয়ন প্রত্যাহারের শেষ দিন।
৪ আগস্ট তফসিল ঘোষণার পর থেকে আওয়ামী লীগের মনোনয়নপ্রত্যাশীদের দৌড়ঝাঁপ শুরু হয়। মনোনয়ন লড়াইয়ে টিকে থাকতে নানাভাবে কেন্দ্রে চেষ্টা-তদবির চলে। মনোনয়ন লাভের আশায় যার যার সাধ্যমত কেন্দ্রীয় নেতাসহ বিভিন্ন পর্যায়ে লবিং চালিয়ে যান সম্ভাব্য প্রার্থীরা। ঢাকায় যোগাযোগের পাশাপাশি মনোনয়নপ্রত্যাশীরা পোস্টার, ব্যানার, ফেস্টুন ছেপে প্রচারণাও চালান।
এম এ মোতালেব ছাড়াও আওয়ামী লীগ থেকে অন্তত সাতজন নেতা মনোনয়নপ্রত্যাশী ছিলেন। এরা হলেন দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নুরুল আবছার চৌধুরী, সহ-সভাপতি এমএ সাঈদ, যুব ও ক্রীড়া বিষয়ক সম্পাদক গোলাম ফারুক ডলার, কার্যনির্বাহী সদস্য মোস্তাক আহমদ আঙ্গুর, সাতকানিয়া আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক কুতুব উদ্দিন চৌধুরী, সহ-সভাপতি বশির আহমদ চৌধুরী, বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা সভাপতি আবু ছালেহ।
এদের মধ্যে নুরুল আবছার চৌধুরী, কুতুব উদ্দিন চৌধুরী, গোলাম ফারুক ডলার ও আবু ছালেহ মাঠে বেশ তৎপরও ছিলেন। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তাদের হতাশই হতে হয়েছে।
চলতি বছরের ২৭ জানুয়ারি দলীয় প্রার্থী মনোনয়নে দক্ষিণ জেলা আওয়ামীলীগ কার্যালয়ে এক সভা অনুষ্ঠিত হয়। সেই সভা শেষে দলের পক্ষ থেকে সাতকানিয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি এম এ মোতালেব সিআইপিকে একক প্রার্থী করে কেন্দ্রে প্রস্তাবনা পাঠানো হয়েছে বলে খবর বের হয়। পরে সর্বশেষ ধাপে নির্বাচন অনুষ্ঠানের ঘোষণা আসায় প্রার্থী মনোনয়ন প্রক্রিয়া থমকে যায়। এর মধ্যে উল্লেখিত প্রার্থীদের মধ্যে অনেকে মাঠ চষে বেড়ালেও দলীয় কর্মসূচির বাইরে তেমন প্রচারণা চালাননি এমএ মোতালেব। একে অনীহা হিসেবে ধরে নিয়ে অনেকেই তখন মাঠে নেমে পড়েন।
এমএ মোতালেব মনোনয়ন পাওয়ার পর মনোনয়ন বঞ্চিতদের অনেকেই বেশ ক্ষুব্ধ। তারা বলছেন, এমএ মোতালেব বারবারই নির্বাচনে অনীহা প্রকাশ করেছেন। এ কারণে অনেকেই নির্বাচন করতে আগ্রহী হন। অনেকে প্রচার-প্রচারণাও চালান। কিন্তু বাস্তবে তিনি ভেতরে ভেতরে মনোনয়ন পাওয়ার জন্য মরিয়া ছিলেন। এজন্য তিনি সর্বোচ্চ তদবিরও করেছেন।
মনোনয়নবঞ্চিত প্রার্থীরা অভিযোগ করেন, এর মধ্য দিয়ে মোতালেব সবার সঙ্গেই প্রতারণা করলেন।
তারা বলছেন, সাতকানিয়া আওয়ামী লীগের সভাপতি হলেও দলীয় কর্মসূচিতেই তাকে সেভাবে পাওয়া যায় না। কর্মীদের সঙ্গে তার যথেষ্ট দূরত্ব রয়েছে। এ অবস্থায় নির্বাচনে ভালো ফল আশা করা কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে।
গত উপজেলা নির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের প্রচার ও প্রকাশনা সম্পাদক নুরুল আবছার চৌধুরী বলেন, ছাত্রজীবন থেকে বঙ্গবন্ধুর আদর্শকে ধারণ করে রাজনীতির সাথে নিজেকে জড়িয়ে দলের যে কোন দুঃসময়ে পাশে থাকার চেষ্টা করেছি। বিগত উপজেলা নির্বাচনে আমার একই বাড়ি থেকে অ্যাডভোকেট আবদুর রকিব চৌধুরী প্রার্থী ছিলেন। তাই ষড়যন্ত্রের কারণে আমি হেরেছিলাম। তারপরও মাঠে ছিলাম বলে দল আমাকে মূল্যায়ন করবে বলে আমি আশাবাদী ছিলাম।
দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের যুব ও ক্রীড়া সম্পাদক গোলাম ফারুক ডলার বলেন, তৃণমূলের অনুরোধে আমি আওয়ামী লীগ থেকে মনোনয়ন প্রত্যাশী ছিলাম।
জামায়াত-শিবির অধ্যুষিত এলাকা সাতকানিয়া। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে তাদের সমর্থিত প্রার্থীর বিজয়ী হওয়ার সম্ভাবনা থাকে বেশি। তবে তারা আদৌ উপজেলা নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছে কিনা তা নিয়ে এখনও সংশয় রয়েছে।
অন্যদিকে বিএনপি-এলডিপি থেকে এ নির্বাচনে অংশ নেওয়ার সম্ভাবনা অনেকটা ক্ষীণ বলে তাদের দলীয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ নেতাদের সাথে আলাপকালে জানা গেছে।