সাতকানিয়ায় মৃত্যুর পর মুক্তিযোদ্ধা প্রণব কুমার ধরকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা না দেওয়ার ঘটনায় স্থানীয় সংসদ সদস্যের গঠিত তদন্ত কমিটি রোববার (২৩ জানুয়ারি) এক মাসে পা দিয়েছে।
তদন্ত কমিটি ১ মাস পেরিয়ে গেলেও প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি। সময়ানুযায়ী প্রতিবেদন জমা দিতে না পারলেও জমা দেওয়ার সময়ও বর্ধিত করেনি তদন্ত কমিটি।
আদৌ তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখবে কি না, তা নিয়ে সন্দিহান স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা।
এদিকে অভিযুক্ত ইউএনও মোহাম্মদ মোবারক হোসেন সাবেক কমান্ডার আবু তাহের এলএমজির জমকালো বিদায় সংবর্ধনায় সাতকানিয়া ছেড়েছেন।
সাতকানিয়া ছাড়ার আগে উপজেলা পরিষদের চেয়াম্যান এমএ মোতালেব সিআইপির সভাপতিত্বে উপজেলা পরিষদের উদ্যোগে ইউএনও মোহাম্মদ মোবারক হোসেনকে সংবর্ধনা দেয়া হয়।
উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের ব্যানারেও এক বিদায় সংবধর্নার আয়োজন করা হয় উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে। সারাদেশে মুক্তিযোদ্ধা সংসদ স্থগিত থাকায় পদাধিকার বলে ইউএনও নিজেই মুক্তিযোদ্ধা সংসদের প্রশাসক।
গুঞ্জন উঠেছে, সাতকানিয়ার অপকর্ম ঢেকে ঢাকঢোল বাজিয়ে নতুন কর্মস্থলে যোগ দিতেই তিনি মুক্তিযোদ্ধা আবু তাহেরকে দিয়ে সংবধর্না অনুষ্ঠানের আয়োজন করেন। সাতকানিয়া ছেড়ে যাওয়ার দিন তিনি রাস্তায় রাস্তায় মুক্তিযোদ্ধাদের দিয়ে ফুলেল সংবর্ধনারও আয়োজন করেন।
এছাড়া মূল অভিযুক্ত সাতকানিয়া উপজেলা কমান্ডার আবু তাহের এলএমজিকে তদন্ত কমিটি প্রধান উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ মোতালেব সিআইপি, সাবেক ইউএনও মোবারক হোসেনের সাথে উপজেলা পরিষদের বেশ কয়েকটি সভায় অংশ নিতে দেখা গেছে।
মুক্তিযোদ্ধা প্রণব কুমার ধরকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা না দেওয়ায় ক্ষোভ ও উদ্বেগ প্রকাশ করে ৪ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করেন স্থানীয় সাংসদ ড. আবু রেজা মুহাম্মদ নেজামুদ্দীন নদভী।
উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ মোতালেব সিআইপির নেতৃত্বে গঠিত কমিটির অন্যান্য সদস্যরা হলেন, সাবেক উপজেলা নির্বাহী অফিসার মোহাম্মদ মোবারক হোসেন (অভিযুক্ত), স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান, উপজেলা আইনশৃঙ্খলা কমিটির সদস্য অ্যাডভোকেট প্রদীপ চৌধুরী।
কমিটিকে ১৫ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেন এমপি নদভী।
তদন্ত কমিটির সদস্য স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, একজন মুক্তিযোদ্ধাকে যাচাই বাছাই না করে ভুয়া মুক্তিযোদ্ধার অপবাদ দিয়ে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা না দেয়া ব্যক্তি, যার বিরুদ্ধে সাতকানিয়ার সচেতন সমাজ মানববন্ধন, সভা, মিটিং মিছিল করেছে তাকে জামাই আদর দেয়া নীতি নৈতিকতা পরিপন্থী।
নির্দিষ্ট সময় পেরিয়ে গেলেও তদন্ত প্রতিবেদন জমা না দেওয়া প্রসঙ্গে তিনি বলেন, তদন্ত প্রতিবেদন তৈরি হয়েছে। আমি স্বাক্ষরও করে দিয়েছি। এখনো জমা হয়নি কেন সেটি বলতে পারছিনা।
তদন্ত কমিটির অন্য সদস্য ও মুক্তিযোদ্ধা প্রণব ধরকে রাষ্ট্রীয় সম্মানের জন্য প্রশাসনের সাথে যোগাযোগ করা অ্যাডভোট প্রদীপ কুমার বলেন, প্রতিবেদন তৈরি করে সদস্যদের স্বাক্ষর নিয়ে তদন্ত কমিটির প্রধান উপজেলা চেয়ারম্যানের হাতে হস্তান্তর করেছি। এখনো কেন জমা হয়নি সেটি তিনি বলতে পারবেন।
তদন্ত কমিটির প্রধান ও উপজেলা চেয়ারম্যান এম এ মোতালেব সিআইপির সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি সংবধর্না এবং তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেয়ার বিষয়ে কিছুই জানাতে পারেননি। তবে প্রতিবেদন সম্পন্ন হয়েছে জানান।
এ বিষয়ে স্থানীয় সংসদ সদস্য প্রফেসর ড. আবু রেজা নদভী চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, প্রণব কুমার ধরকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। তিনি প্রকৃত একজন মুক্তিযোদ্ধা ছিলেন। ঘটনা জানার পরই আমি আইনশৃঙ্খলা সভায় তদন্ত কমিটি করে প্রতিবেদন জমা দিতে বলেছি।
তিনি বলেন, ১৫ দিনের জায়গায় একমাস হয়ে গেলেও প্রতিবেদন জমা দিতে পারেনি তদন্ত কমিটি। বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। আগামী আইনশৃঙ্খলা সভায় আমি বিষয়টি জবাবদিহিতার আওতায় আনবো।
প্রসঙ্গত, গত ১৩ জানুয়ারি অসুস্থতাজনিত কারণে মৃত্যুবরণ করেন মুক্তিযোদ্ধা প্রণব কুমার ধর। অভিযোগ রয়েছে সাতকানিয়া উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার আবু তাহের এলএমজির সাথে সখ্যতা রাখতে তাঁকে রাষ্ট্রীয় সম্মাননা দেয়নি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মোহাম্মদ মোবারক হোসেন।
এ ঘটনায় ২৩ জানুয়ারি আইনশৃঙ্খলা সভায় সাংসদ নদভী উপজেলা চেয়ারম্যানকে প্রধান করে ৪ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করেন এবং কমিটিকে ২ সপ্তাহের মধ্যে তদন্ত প্রতিবেদন জমা দিতে নির্দেশ দেন।
এসএইচ