সাতকানিয়ায় ‘দুর্নীতি’র স্কুল কমিটি, অভিযোগ শিক্ষা কর্মকর্তার বিরুদ্ধে

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় ভোটার তালিকা নিয়ে অভিভাবকদের আপত্তি থাকার পরও ইউএনও ও শিক্ষা বোর্ডের নির্দেশনা অমান্য করে বিদ্যালয়ের পরিচালনা পর্ষদ অনুমোদনের অভিযোগ উঠেছে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসারের বিরুদ্ধে। অভিযোগ উঠেছে, উপজেলার এওচিয়া ইউনিয়নের পশ্চিম গাটিয়াডেঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের ‘ভোটার তালিকা’ নিয়ে আপত্তির পরও আর্থিক অনিয়মের মাধ্যমে এ কমিটি অনুমোদন দিয়েছেন মাধ্যমিক শিক্ষা কর্মকর্তা।

জানা গেছে, গাটিয়াডেঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয় পরিচালনা পর্ষদ গঠনের লক্ষ্যে ভোটার তালিকা প্রকাশ করেন বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। প্রকাশিত ভোটার তালিকা নিয়ে আপত্তি থাকায় গত ৯ মার্চ উপজেলা নির্বাহী অফিসার বরাবর একটি অভিযোগ দেয় এলাকাবাসী। অভিযোগটি তদন্তের জন্য ইউএনও উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আজিম শরীফকে দায়িত্ব দেন। অভিযোগের সত্যতা পেয়ে গত ১৬ মার্চ উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার ইউএনও বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন জমা দেন। তদন্ত প্রতিবেদনের পরিপ্রেক্ষিতে ইউএনও নির্বাচনের কার্যক্রম স্থগিত করে ভোটার তালিকার ত্রুটি সংশোধনের নির্দেশ দেন।

অভিযোগ রয়েছে, ইউএনওর নির্দেশনা না মেনে ‘আর্থিক অনিয়মের’ মাধ্যমে মঙ্গলবার (২৪ শে মার্চ) কমিটি অনুমোদন দিয়ে বোর্ডে পাঠান উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আজিম শরীফ। উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আজিম শরীফের সাথে অভিযোগের বিষয়ে যোগাযোগ করতে কয়েক বার ফোন করা হলে তিনি সাড়া দেননি।

এদিকে, তার আর্থিক অনিয়মের বিষয়ে পশ্চিম গাটিয়াডেঙ্গা উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি হাজী দেলোয়ার বলেন, বিভিন্ন অভিযোগের ভিত্তিতে ইউএনওর নির্দেশে আজিম শরীফ নিজেই অভিযোগের সত্যতা স্বীকার করে প্রতিবেদন দাখিল করেন ইউএনও সাহেবকে। তার ভিত্তিতে ইউএনও সাহেব গত ২৩ মার্চে নির্বাচন স্থগিত এবং প্রশ্নবিদ্ধ ভোটার তালিকা পুনঃতদন্তের নির্দেশ দেন। মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড কর্তৃক অফিসিয়াল একটা আদেশও আছে যে করোনার কারণে ১৮ মার্চ হতে ৩১ মার্চ পর্যন্ত কোন বিদ্যালয়ে ম্যানেজিং কমিটি পুনর্গঠন এবং কার্যক্রম চালানো যাবে না। এর ওপর আজিম শরীফ নিজের লিখিত প্রতিবেদন এবং ইউএনওর নির্দেশনা এবং সর্বশেষ মাধ্যমিক বোর্ডের সর্বশেষ আদেশ উপেক্ষা করে নগদ ৫ লাখ টাকার বিনিময়ে কমিটি গঠন করে বোর্ডে পাঠায়। আমি জেলা মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডকে তার অনৈতিকতার বিষয়ে লিখিতভাবে জানিয়েছি।

অনুসন্ধানে জানা যায়, দীর্ঘ ৯ বছরেরও বেশি সময় ধরে উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার আজিম শরীফ সাতকানিয়ায় থাকার কারণে বিভিন্ন অনিয়মের সাথে জড়িত থেকেছেন। তার বিরুদ্ধে বাজালিয়ায় একটি দুর্নীতির অভিযোগ ছিল। ওই প্রেক্ষিতে তাকে ম্যানেজিং কমিটির নির্বাচনে প্রিসাইডিং অফিসারের পদ হতে সরিয়ে দিতে জেলা শিক্ষা অফিসার ইউএনও বরাবর চিঠি লিখেছিলেন।

জানতে চাইলে চট্টগ্রাম মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের প্রধান বিদ্যালয় পরিদর্শক বিপ্লব গাঙ্গুলী বলেন, ‘বিষয়টা শুনেছি, যেহেতু তিনিই নিজেই প্রতিবেদনে উল্লেখ করেছেন ভোটার তালিকা প্রশ্নবিদ্ধ এবং এটা পুনরায় যাচাই করে গঠন করা দরকার সেখানে তিনি আবার প্রশ্নবিদ্ধ তালিকা দিয়ে কমিটি গঠন করলে সেটা অবশ্যই স্ববিরোধিতা এবং তিনি বোর্ডের নির্দেশনাও উপেক্ষা করেছেন। পুরো ফাইল হাতে আসলে এটা আমরা কঠোর পদক্ষেপ নেব।’

এদিকে ইউএনও নুরে আলমের দেওয়া নির্দেশনাও উপেক্ষা করায় তার বিরুদ্ধে ইউএনও বরাবর অভিযোগ দাখিল করা হয়। এ বিষয়ে ইউএনও নুরে আলম বলেন, ‘প্রশ্নবিদ্ধ ভোটার তালিকা তৈরির বিষয়ে আজিম শরীফের তদন্ত প্রতিবেদনে প্রমাণ হওয়ায় তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে লিখিত নির্দেশনা দিয়েছি।’

এসএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!