চট্টগ্রামের সাতকানিয়ার কাঞ্চনা এলাকার দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার জামশেদকে নলুয়া থেকে গ্রেপ্তার করেছে পুলিশ।
রোববার (১২ মার্চ) রাত সাড়ে ১০টার দিকে নলুয়া ইউনিয়নের হাঙ্গরমুখ বাজারের নবীর দোকান থেকে তাকে গ্রেপ্তার করা হয়।
বিষয়টি নিশ্চিত করে ঢেমশা তদন্তকেন্দ্রের এসআই জাহাঙ্গীর আলম বলেন, সাম্প্রতিক সময় পূর্ব গাটিয়াডেঙ্গা এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড বেড়ে গেছে। বহিরাগত শিবির ক্যাডার জামশেদ, ফাহিমসহ গুটিকয়েক সন্ত্রাসী স্থানীয় প্রভাবশালীদের ইন্ধনে পুরো এলাকাকে অশান্ত করে রেখেছে। মারধর ও গুলিবর্ষণের ঘটনা ঘটিয়েছে একাধিক। তাই প্রশাসন বিশৃঙ্খলাকারীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় আনতে বেশ তৎপর। এরই পরিপ্রেক্ষিতে গোপন সংবাদের ভিত্তিতে অভিযান চালিয়ে জামশেদকে গ্রেপ্তার করা হয়।
অভিযোগ আছে, জামশেদ কাঞ্চনার দুর্ধর্ষ শিবির ক্যাডার। পুরো এলাকার মানুষ তার ভয়ে তটস্থ থাকে। জামশেদ পুলিশের সাথে বন্দুকযুদ্ধে নিহত শিবির ক্যাডার বশরের সেকেন্ড-ইন কমান্ড হিসেবে পরিচিত। পুলিশের ওপর হামলাসহ বিভিন্ন সন্ত্রাসী ঘটনায় সম্পৃক্ততা রয়েছে জামশেদের। হত্যাচেষ্টাসহ বিভিন্ন মামলা রয়েছে তার বিরুদ্ধে। কিন্তু পুলিশের চোখ ফাঁকি দিয়ে জামিন নিয়ে পালিয়ে বেড়াতেন। তার কর্মকাণ্ডে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী জামশেদকে কাঞ্চনা এলাকা থেকে বিতাড়িত করে।
এরপর থেকে মিন্টু-কামাল গ্রুপের আশ্রয় প্রশ্রয়ে নলুয়ায় আত্মগোপন করে। শুধু তাই নয়, জামশেদ তার প্রকৃত নাম গোপন করে পাসপোর্টও বানিয়ে নেয় প্রতারণা ও তথ্যগোপনের মাধ্যমে। তার প্রকৃত নাম জামশেদুল করিম চৌধুরী হলেও পাসপোর্ট করা হয়েছে মোহাম্মদ জামশেদ নাম। বাবার নাম আবু বক্কর ও মায়ের নাম সায়রা বেগম উল্লেখ করা হয়েছে। ঠিকানা দেখানো হয়েছে পূর্ব গাটিয়াডেঙ্গা। অথচ তার প্রকৃত মা বাবার নাম ফয়েজ আহমেদ চৌধুরী ও ছেনু আরা বেগম। ঠিকানা উত্তর কাঞ্চনা চৌধুরী পাড়া।
স্থানীয়দের অভিযোগ, জামশেদ নলুয়ার পূর্ব গাটিয়াডেঙ্গা এলাকায়ও নানা সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে জামশেদ। তার কাছে বেশ কিছু আগ্নেয়াস্ত্রও রয়েছে বলে অভিযোগ আছে। সম্প্রতি গত বছরের ১৩ আগস্ট রাতে নলুয়া ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মো. মহিউদ্দিনের বাড়িতে গুলিবর্ষণ করা হয় হত্যার উদ্দেশ্যে। পরবর্তীতে ১৯ ডিসেম্বর রাতে মহিউদ্দিনকে হত্যার উদ্দেশ্যে এলোপাতাড়ি বন্দুক, হকিস্টিক, লোহার রড দিয়ে পিটিয়ে মৃত ভেবে ফেলে যায় জামশেদরা। ওই হামলার পর মহিউদ্দিন অনেকটা পঙ্গু জীবনযাপন করছে। এসব ঘটনায় মামলা হয়েছে সাতকানিয়া থানায়। সর্বশেষ ২০ জানুয়ারি রাতে সাতকানিয়া থানা যুবলীগের সাবেক নেতা শাকিলের ঘরে গুলি বর্ষণের ঘটনায়ও সন্দেহের তীর তার দিকে।
এছাড়া জামশেদ সোনা চোরাচালানের সাথে জড়িত বলেও অভিযোগ রয়েছে। কিছুদিন ঘন ঘন দুবাই যাওয়া আসা করে প্রচুর সোনাপাচার করেছেন জামশেদ। অনেকের সোনা আত্মসাতের অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে। মূলত মিথ্যা তথ্য দিয়ে প্রতারণার মাধ্যমে বানানো পাসপোর্টে তিনি সোনা চোরাকারবারের কাজ করতেন— এমন অভিযোগ স্থানীয়দের।
গত ৪ ফেব্রুয়ারি হাঙ্গরমুখ বাজের সাতকানিয়া থানা পুলিশ আইন শৃঙ্খলা পরিস্থিতি উন্নতির লক্ষ্যে স্থানীয়দের সাথে মতবিনিময় করে। ওই সভায় ওসি ইয়াসির আরাফাত শিবিরের দুর্ধর্ষ সন্ত্রাসী জামশেদের নাম উল্লেখ করে বহিরাগত সন্ত্রাসীদের এলাকায় বিশৃঙ্খলা সৃষ্টির জন্য দায়ী করেন।
এ প্রসঙ্গে সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) ইয়াসির আরাফাত বলেন, শিবির ক্যাডার জামশেদকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাকে আইনের আওতায় আনার পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে। আইনি প্রক্রিয়ায় জামশেদকে আদালতের মাধ্যমে হাজতে পাঠানো হবে। অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে রিমান্ড চাওয়া হবে।