সাতকানিয়ায় দুই রাতে ‘প্রতিশোধের’ চার হামলা, বোরখা পরে ভাঙা হয় সিসি ক্যামেরা

সেলুনে ঢুকে ধারালো অস্ত্রের আঘাত, কিশোর গ্যাং বেপরোয়া

চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় সদ্য শেষ হওয়া সংসদ নির্বাচনের রেশ না কাটতেই নির্বাচন-পরবর্তী সহিংসতায় নৌকা প্রার্থীর সমর্থক আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ওপর একের পর এক হামলার ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনায় বেশ কয়েকজন গুরুতর আহত হয়েছেন। অনেকের বাড়িঘর ভাঙচুর হচ্ছে। আবার শত্রুতামূলকভাবে মামলায় জড়িয়ে নিরীহ মানুষকে হয়রানির ঘটনাও ঘটছে।

শনিবার (২৭ জানুয়ারি) রাত ৮টার দিকে সাতকানিয়া উপজেলার কেরানীহাট নিউমার্কেট এলাকায় নির্বাচনকালীন রেষারেষিকে কেন্দ্র করে কিশোর গ্যাংয়ের একদল সদস্যের হাতে ছাত্রলীগ কর্মী ইজাজ ও তার ভাই মারধরের শিকার হন বলে জানা গেছে।

শনিবার একই রাতে সাতকানিয়ার এওচিয়া ইউনিয়নে উপজেলা তাঁতী লীগ নেতা মাইনুদ্দিন চৌধুরীর বাড়ির সিসি ক্যামেরা ভেঙে ফেলা হয়। এর আগে সংসদ নির্বাচনের পরদিন ৮ জানুয়ারি রাত ৯টার দিকে শাহ আলম মেম্বারের নেতৃত্বে মাইনুদ্দিন চৌধুরীর বাড়িতে হামলা ও ভাঙচুর করা হয়। তার বিরুদ্ধে নৌকার প্রার্থীর পক্ষে কাজ করার অভিযোগ আনে প্রতিপক্ষ।

একইদিন দুপুরে সাতকানিয়ার পশ্চিম ঢেমশা ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ নেতা শাহ আলমকে স্থানীয় সেলুনে শেইভ করা অবস্থায় ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করে রক্তাক্ত ও জখম করা হয়। শাহ আলম ও তার ছেলে ছাত্রলীগ নেতা রুমনের বিরুদ্ধে গত সংসদ নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করার ‘অভিযোগ’ এনেছে প্রতিপক্ষ।

এদিকে রোববার (২৮ জানুয়ারি) সন্ধ্যা ৬টায় সাতকানিয়ার সোনাকানিয়া ইউনিয়নে চট্টগ্রাম জেলা পরিষদের সদস্য আব্দুল আলিমসহ স্থানীয় কিছু প্রবাসী ও এলাকার তরুণরা পিকনিকের আয়োজন করে। পিকনিকের আয়োজকরা অভিযোগ করেছেন, সোনাকানিয়া ইউনিয়ন পরিষদ চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন ও তার ভাই খোরশেদের নেতৃত্বে ৪০-৫০ জনের একটি দল গিয়ে রান্না করা সব খাবারদাবার মাটিতে ফেলে দিয়ে প্যান্ডেল-চেয়ার ভাঙচুর করে। আয়োজকরা বলেন, গত নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করায় তাদের ওপর শোধ নেওয়া হয়েছে।

এর আগে গত সংসদ নির্বাচনে নিজ কেন্দ্রে নৌকাকে বিজয়ী করায় ১২ জানুয়ারি রাত ৯টার দিকে এওচিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ড মেম্বার মনজুরকে মারধর করে হাত ভেঙে দেয় একদল দুর্বৃত্ত। এ ঘটনায় ১৪ জনের নাম উল্লেখ করে সাতকানিয়া থানায় এজাহার দায়ের করলেও পুলিশ এখন পর্যন্ত নির্যাতনের শিকার মনজুরের এজাহার নথিভুক্ত করেনি। প্রাণভয়ে এখন তিনি এলাকাছাড়া হয়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছেন।

গত ২০ জানুয়ারি কেঁওচিয়া ইউনিয়নে গরুর ঘাস কাটাকে কেন্দ্র করে স্থানীয় দুই পক্ষের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা একপর্যায়ে সশস্ত্র সংঘর্ষে রূপ নেয়। এ ঘটনায় স্থানীয় জনগণ চারজনকে আটক করে ও অস্ত্র উদ্ধার হয়। অভিযোগ পাওয়া গেছে, অস্ত্র উদ্ধার ঘটনার মামলায় সম্পূর্ণ উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে আসামির তালিকায় নিরীহ কয়েকজন ব্যক্তিকে ঢুকিয়ে দেওয়া হয়।

জানা গেছে, গত সংসদ নির্বাচনে নৌকার পক্ষে কাজ করায় ব্যক্তিবিশেষের রোষানলের শিকার হয়ে ৬ নম্বর আসামি পশ্চিম ঢেমশা ইউনিয়ন ১নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মহিম, ৮ নম্বর আসামি নলুয়া ইউনিয়ন ৬ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগ নেতা মোক্তার এবং ৯ নম্বর আসামি নলুয়া ইউনিয়ন যুবলীগ কর্মী মিজান। ৮ ও ৯ নম্বর আসামির আগে অন্য মামলার আসামি হলেও এ ঘটনায় তাদের বিন্দুমাত্র সম্পৃক্ততা ছিল না বলে স্থানীয়রা জানান।

সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm