চট্টগ্রামের সাতকানিয়ায় আবারও ঘটেছে দিনেদুপুরে খুনের ঘটনা। এবার কোদাল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে এক কৃষককে।
রোববার (৯ জুন) বিকাল সাড়ে চারটার দিকে সাতকানিয়ার সোনাকানিয়া ইউনিয়নের ৩ নম্বর ওয়ার্ডের তাঁতীপাড়া এলাকার ফজল করিম মেম্বারের গরুর ফার্মের পূর্ব পাশে কুপিয়ে হত্যা করা হয়েছে ফজল আহমদ (৫৫) নামের এক কৃষককে। তিনি সোনাকানিয়া ২ নম্বর ওয়ার্ডের কুতুব পাড়ার সাচি মিয়ার পুত্র।
প্রাথমিকভাবে জায়গা জমির বিরোধের জের ধরে ওই কৃষককে হত্যা করা হয়েছে বলে ধারণা করা হলেও তার স্ত্রী বলছেন, তার স্বামীকে কেন মেরে ফেলা হয়েছে, তার কারণ সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না।
এদিকে ঘটনার পর হত্যাকারী সন্দেহে আবুল কাশেম (৫৫) নামে এক ব্যক্তিকে পুলিশ গ্রেপ্তার করেছে।
এলাকায় গিয়ে প্রত্যক্ষদর্শীর সাথে কথা বলে জানা গেছে, নিহত ফজল আহমদের সঙ্গে দীর্ঘদিন ধরে অল্প জায়গা নিয়ে ঘাতক আবুল কাশেমের বিরোধ চলে আসছিল। রোববার (৯ জুন) বিকাল সাড়ে চারটার দিকে আবুল কাশেম বিলে ঘাস কাটছিলেন। এ সময় কৃষক ফজল আহমদ রাস্তা দিয়ে মির্জাখীল বাজারের দিকে যাওয়ার সময় হঠাৎ কাশেম বিল থেকে রাস্তায় ওঠে তার হাতে থাকা কোদাল নিয়ে ফজলের মাথায় এলোপাথাড়ি কোপাতে থাকে। এতে ঘটনাস্থলেই ফজল আহমদ মারা যান।
নিহত ফজল আহমদের স্ত্রী রেহেনা আক্তার বলেন, ‘কী কারণে আমার স্বামীকে মেরে ফেলা হয়েছে তার কারণ কিছুই জানি না। ঘটনার খবর শুনে দৌড়ে এসে দেখতে পাই জমিতে পড়ে আছে আমার স্বামীর রক্তাক্ত লাশ।’
তিনি বলেন, ‘বাড়ির উত্তর পাশের কুতুব পাড়ার আবুল কাশেম ও তার ছেলে তৌহিদ আমার স্বামীকে কোদাল দিয়ে কুপিয়ে হত্যা করেছে। আমার স্বামী খুবই নিরীহ লোক ছিল। আমার ৩ ছেলে ও ২ মেয়ে রয়েছে।’
উপজেলার সোনাকানিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দীন ও ৩ নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য মহি উদ্দীন কোদাল দিয়ে কুপিয়ে ফজল আহমদকে নির্মমভাবে হত্যার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
সোনাকানিয়া ইউনিয়নের ২ নং ওয়ার্ডের সাবেক ইউপি সদস্য ফজল করিম বলেন, ‘হত্যাকারী কাশেম সম্ভবত মানসিকভাবে বিপর্যস্ত ছিল। কিছু আগেও সে এলাকার একজনকে কোদাল দিয়ে কোপ দিয়েছিল। কিন্তু সে যদি মানসিকভাবে বিপর্যস্তই হয়ে থাকে, তাহলে বাড়িঘরের লোকদের কেন কোদাল বা অন্য কিছু দিয়ে মারে নাই কখনও?’
সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) প্রিটন সরকার জানান, ‘হত্যাকারী কাশেমকে বাড়ি হতে আটক করা হয়েছে। ফজল আহমদের লাশ ময়নাতদন্তের জন্য চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।’
একের পর এক খুন
এ ঘটনার মাত্র ১০ দিন আগে বুধবার (২৯ মে) রাত ৮টার দিকে সাতকানিয়ার আমিলাইশ ইউনিয়নের ৬ নম্বর ওয়ার্ড দক্ষিণ আমিলাইশে কয়েক দফা পিটিয়ে সদ্যবিবাহিত এক পিকআপচালককে পিটিয়ে হত্যা করা হয়। মো. মহিউদ্দিন (২৫) নামের ওই পিকআপচালককে গাড়িসহ আটক করে কয়েক দফা পেটানোর পর তিনি মারা যান।
এ ঘটনার একদিন আগে উপজেলার ছদাহা ইউনিয়নের এক নম্বর ওয়ার্ড সর্দারপাড়ায় ছুরিকাঘাতে মোহাম্মদুল হক (৩৩) নামে এক আওয়ামী লীগ কর্মীকে পেটে ছুরিকাঘাত করে খুন করা হয়। নিহত মোহাম্মদুল গত সংসদ নির্বাচনে নৌকা প্রার্থীর এজেন্ট ছিলেন। গত সংসদ নির্বাচনের পর থেকেই তিনি হত্যার হুমকি পাচ্ছিলেন বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা জানিয়েছেন। সম্প্রতি ওই ইউনিয়নে ছাত্রলীগের নতুন কমিটি হওয়ার পর এই হুমকি আরও বেড়ে যায়। সর্বশেষ খুনের ঘটনার আগের দিনও প্রাণনাশের হুমকি পান তিনি।
দিনেদুপুরে খুনের এ ঘটনায় সাতকানিয়া থানা মামলা নিতে অস্বীকৃতি জানায়। পরে ৩ জুন চট্টগ্রামের চিফ জুডিসিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ফৌজদারি অভিযোগ দায়ের করেছেন নিহত মোহাম্মদুল হকের বড় ভাই এনামুল হক (৪১)। শুনানি শেষে আদালতের বিচারক সাতকানিয়া থানার অফিসার ইনচার্জকে (ওসি) ফৌজদারি অভিযোগটি সরাসরি এফআইআর হিসেবে গ্রহণ করার নির্দেশ দেন। নৃশংস খুনের এই মামলার আসামিদের মধ্যে রয়েছেন ছদাহা ইউনিয়ন ছাত্রলীগের সভাপতি মিজানুর রহমান জয় (২৫) ছাড়াও স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের আট সদস্য।