রেলওয়ে পূর্বাঞ্চল চট্টগ্রামে বিল-ভাউচার ছাড়াই প্রায় সাড়ে ১০ লাখ টাকার ভ্রমণ ব্যয় তুলে নেওয়া হয়েছে। রেলের পরিবহন অডিট অধিদপ্তরের অডিটে ধরা পড়েছে এমন অসঙ্গতি। এ ঘটনায় দুই মাস আগে বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তাকে (ডিসিও) জানানো হলেও এখনও কোনো বিল-ভাউচার খুঁজে পাওয়া যায়নি।
পরিবহন অডিট অধিদপ্তর থেকে অডিট আপত্তির ঘটনা চট্টগ্রাম বিভাগের অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব অধিকর্তা (ডিএফএ) ভুয়া বলে দাবি করলেও ডিসিও চিঠি পাওয়ার কথা স্বীকার করেন।
গত বছরের ১ ডিসেম্বর ডিসিও বরাবরে ‘অডিট মেমো’র দিয়ে মাধ্যমে বিল-ভাউচার ছাড়া ভ্রমণ ব্যয় তোলার বিষয়টি জানানো হয়।
অডিট মেমোতে উল্লেখ করা হয়, ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে বিল-ভাউচার ছাড়াই ভ্রমণ বিল বাবদ ১০ লাখ ৫৮ হাজার ৮৬৮ টাকা তুলে নেওয়া। এতে সরকারের ১০ লাখ ৫৬ হাজার ৮৬৮ টাকা ক্ষতি হয়েছে। আইবাস++ হতে প্রাপ্ত পরিশোধিত বিল ও ভাউচার পর্যালোচনায় দেখা যায়, অর্থনৈতিক কোড-৩২৪৪১০১ (ভ্রমণ বায়) হতে বিভিন্ন সময়ে ১০ লাখ ৫৬ হাজার ৮৬৮ পরিশোধ করা হয়েছে। কিন্তু সংশ্লিষ্ট দপ্তরে এ সংক্রান্ত কোনো রেকর্ড সংরক্ষণ করা হয়নি, এমনকি সংশ্লিষ্ট দপ্তরের বিল পাসিং রেডিয়ারেও উক্ত বিলের কোন এন্ট্রি বা তথ্য পাওয়া যায়নি। রেলওয়ের জেনারেল কোড ৮০৭(১) অনুযায়ী প্রত্যেক সরকারি কর্মচারী সরকারি অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে সেরূপ সতর্কতা অবলম্বন করবেন, যেরূপ একজন মিতব্যয়ী ব্যক্তি তার নিজের অর্থ ব্যয় করেন।
পাহাড়তলীর বিভাগীয় বাণিজ্যিক ব্যবস্থাপক কার্যালয়ের ২০২৩-২৪ অর্থবছরের ভ্রমণ বিল উত্তোলনের তালিকায় দেখা গেছে, ২০২৩ সালের ১০ জুলাই একদিনে চার টোকেনে ১৮ হাজার ৮৭৫ টাকা, ১ লাখ ৯ হাজার ৮৩৭ টাকা, ৭৭ হাজার ৮০৫ টাকা, ৩২ হাজার ৬৩৭ তোলা হয়।
১১ জুলাই তিন টোকেনে ১৯ হাজার ৭৪৭ টাকা, ৭৭ হাজার ৮০৫ টাকা ও ১ লাখ ৯ হাজার ৮৩৭ টাকা; ৩ আগস্ট ৬৪ হাজার ৭৫০ টাকা, ৪ অক্টোবর ১৪ হাজার ১৬০ টাকা, ১৭ অক্টোবর ৪ হাজার ৩৭৫ টাকা তুলে নেওয়া হয়।
৬ নভেম্বর ৩২ হাজার ৩৭৫ টাকা, ২৪ হাজার ৭২৯ টাকা; ১২ নভেম্বর ৯ হাজার ৩২০ টাকা; ২২ নভেম্বর ১৩ হাজার ১২৫ টাকা এবং ৩ ডিসেম্বর ৯ হাজার ৪৪০ টাকা ভ্রমণ বিল তোলা হয়।
২০২৪ সালের ৬ ফেব্রুয়ারি তোলা হয় ১৭ হাজার ৬০০ টাকা; ২২ এপ্রিল ৪৭ হাজার ৩২০ টাকা।
সবচেয়ে বেশি টাকা তোলা হয় চলতি বছরের ২৩ জুন। ওইদিন সাতটি টোকেনে ৪৮ হাজার ৬৮৫ টাকা, ১৪ হাজার ৭৯৮ টাকা, ৫৬ হাজার ৬০৫ টাকা, ৮৯ হাজার ৪৭৪ টাকা, ৭১ হাজার ১৩৪ টাকা, ৪০ হাজার ৫৬৫ টাকা ও ৫১ হাজার ৮৭০ টাকার ভ্রমণ বিল তোলা হয়।
জানা গেছে, রেল কর্মকর্তা-কর্মচারীরা বিভিন্ন সময় রেললাইন ও স্টেশন পরিদর্শনসহ নানান কাজে বিভিন্ন জায়গায় যাতায়াত করেন। এজন্য তাদের ভ্রমণ ব্যয় দেওয়া হয়। কোন খাতে কি পরিমাণ খরচ হয়েছে, তার ভাউচার অর্থ বিভাগে জমা দিয়ে ভ্রমণ বিল পাশ করতে হয়। কিন্তু ২০২৩-২৪ অর্থবছরে এসব নিয়ম মানা হয়নি। ওই সময় বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তার দায়িত্বে ছিলেন তারেক মোহাম্মদ ইমরান।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে পূর্বাঞ্চলের বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা তৌষিয়া আহমেদ বলেন, ‘এরকম একটি অডিট আপত্তি পেয়েছি। আমি এখনও ১০ লাখ টাকা ব্যয়ের কোনো বিল ভাউচার পায়নি। আমি ব্যস্ততার কারণে অডিট আপত্তির উত্তর দিতে পারিনি। শীঘ্রই পরিবহন অডিট অধিদপ্তরকে উত্তর দেওয়া হবে।’
এদিকে বিল-ভাউচার ছাড়াই সাড়ে ১০ লাখ টাকা তুলে নেওয়ার ঘটনা সম্পূর্ণ ভুয়া বলে দাবি করেন চট্টগ্রাম বিভাগের অর্থ উপদেষ্টা ও প্রধান হিসাব অধিকর্তা (ডিএফএ) সুগ্রীব চাকমা। তিনি বলেন, ‘এটি ভুয়া অভিযোগ। হিসাব বিভাগে এরকম কোনো ঘটনায় ঘটেনি। আমি এরকম কোনো তথ্য পাইনি। হিসাব বিভাগ থেকে এরকম কোনো বিল পাশ হয়নি।’
এ বিষয়ে তথ্য জানতে হলে তথ্য অধিকার আইনে প্রতিবেদককে আবেদন করতে বলেন তিনি।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক মোহাম্মদ সুবক্তগীনের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘এরকম ঘটনা খুবই খারাপ। আমি বিষয়টি খোঁজ নিয়ে দ্রুত পদক্ষেপ নেব।’
ডিজে