সাংসদ বাদলের জানাজা ও দাফন যখন যেখানে

ভারতের ব্যাঙ্গালুরুতে চিকিৎসাধীন অবস্থায় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মারা যাওয়া চট্টগ্রাম ৮ আসনের সংসদ সদস্য ও বীর মুক্তিযোদ্ধা মইন উদ্দিন খান বাদলের জানাজা ও দাফনের বিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মরদেহ ভারত থেকে আনা থেকে জানাজা ও দাফনের সবই হচ্ছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শ ও তত্ত্বাবধানে।

শুক্রবার (৮ নভেম্বর) রাতে এয়ার ইন্ডিয়াযােগে ঢাকায় এসে পৌছাবে চট্টগ্রাম-৮ মইন উদ্দিন খান বাদলের মরদেহ ।

বিষয়টি নিশ্চিত করে নয়াদিল্লীর বাংলাদেশ দূতাবাসের স্টাফ কাউন্সিলর রবি শর্মা জানান, মইন উদ্দিন খান বাদলের মরদেহ এয়ার ইন্ডিয়াযোগে ঢাকায় পাঠানোর সব প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে ইতিমধ্যে। সে অনুযায়ী কলকাতা হয়ে বাংলাদেশ সময় শুক্রবার রাত ৮:৩৫ মিনিটে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে পৌঁছানোর কথা রয়েছে।

রবি শর্মা আরও জানান, শুক্রবার স্থানীয় সময় সকাল ১১:০৫ মিনিটে ব্যাঙ্গালুরু থেকে এয়ার ইন্ডিয়ার ফ্লাইট এআই-৭৭২ যোগে মরহুমের মরদেহ প্রথমে কলকাতার দিকে রওনা হবে। দুপুর ১:২৫ মিনিটে ফ্লাইটটি কলকাতা নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বিমানবন্দরে পৌঁছাবে। অন্যদিকে কলকাতা থেকে সন্ধ্যা ৭:০৫ মিনিটে এয়ার ইন্ডিয়ার কানেকটিক ফ্লাইট এআই-২৩০ যোগে ঢাকার দিকে রওনা দিয়ে বাংলাদেশ সময় রাত ৮:৩৫ মিনিটে ঢাকা শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে অবতরণ করবে।

মেয়ে, মেয়ের জামাইসহ ঘনিষ্ঠ পাঁচ আত্মীয় মইন উদ্দিন খান বাদলের মরদেহের সঙ্গে একই ফ্লাইটে বাংলাদেশ আসবেন বলে তিনি আরও জানান।

সাংসদের স্ত্রী সেলিনা খান বাদল জানিয়েছেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পরামর্শ ও তত্ত্বাবধানে মরহুমের মরদেহ ভারত থেকে আনা, জানাজা ও দাফনের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। সিদ্ধান্ত অনুযায়ী, ঢাকায় পৌঁছার পর ওই রাতে হিমঘরে মরহুমের মরদেহ রাখা হবে।

পর দিন শনিবার (৯ নভেম্বর) সকাল ১১টায় সংসদ ভবনের দক্ষিণ প্লাজায় তার প্রথম জানাজার নামাজ অনুষ্ঠিত হবে এবং সেখানে রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ রাষ্ট্রীয়ভাবে শোক জানানো হবে। সকল আনুষ্ঠানিকতা শেষে সেখান থেকে প্রধানমন্ত্রীর ব্যবস্থপনায় হেলিকপ্টারযোগে সাংসদ বাদলের মরদেহ সরাসরি নিয়ে আসা হবে চট্টগ্রাম নগরীর জমিয়াতুল ফালাহ জামে মসজিদ প্রাঙ্গণে। সেখানে দুপুর দুটার দিকে দ্বিতীয় জানাজার নামাজ শেষে সড়কপথে নিজ সংসদীয় আসন বোয়ালখালী সিরাজুল ইসলাম ডিগ্রি কলেজ মাঠে নেওয়া হবে।

সেখানে বাদ আছর তৃতীয় জানাজা নামাজ শেষে সাংসদ বাদলের গ্রামের বাড়ি সারোয়াতলীর খান বাড়ির পারিবারিক কবরস্থানে বাবা-মায়ের কবরের পাশে মাগরিবের নামাজের পর তাকে সমাহিত করা হবে। বৃহস্পতিবার (৭ নভেম্বর) বাংলাদেশ সময় সকাল ৬টা ৪৫ মিনিটে ভারতের বেঙ্গালুরুর নারায়ণ হৃদরোগ রিসার্চ ইনস্টিটিউট অ্যান্ড হসপিটালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা যান।

১৯৫২ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি বোয়ালখালীর সারোয়াতলী গ্রামে জন্ম মঈন উদ্দিন খান বাদলের। তার বাবা আহমদ উল্লাহ খান ও মা যতুমা খাতুন। স্ত্রী সেলিনা খান। তিন ছেলে ও এক মেয়ের জনক তিনি, বয়স হয়েছিল ৬৭ বছর। চট্টগ্রাম-৮ (বোয়ালখালী-চাঁন্দগাও) আসন থেকে মঈন উদ্দিন খান বাদল তিনবার সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ছিলেন একাদশ জাতীয় সংসদের ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা এবং মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় কমিটির সদস্য। জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলের (জাসদ) একাংশের কার্যকরী সভাপতির দায়িত্বও পালন করেছেন।

ছাত্রজীবনে বাদল ছাত্রলীগের রাজনীতির সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। ১৯৭১ সালে অংশ নেন মুক্তিযুদ্ধে। তাদের মুজিব বাহিনী ভারতের জেনারেল সুজন সিংহবান এর অধীনে প্রশিক্ষণ নেয়। চট্টগ্রাম বন্দরে সোয়াত জাহাজ থেকে অস্ত্র খালাসের সময় তিনি ছিলেন প্রতিরোধ যোদ্ধা।

মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তী সময়ে তিনি জাতীয় সমাজতান্ত্রিক দলে যোগ দেন। এরপর যোগ দেন বাংলাদেশ সমাজতান্ত্রিক দলে। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে ১৪ দল গঠন করা হলে তিনি এতে বিশেষ ভূমিকা রাখেন। বাংলাদেশ-ভারত-পাকিস্তান পিপলস ত্রিদেশীয় কমিটির সেক্রেটারি জেনারেল হিসেবে কমিটির সভায় যোগ দিতে তিনি (বাদল) গত ১৮ অক্টোবর কলকাতা যান। ২৫ অক্টোবর বেঙ্গালুরু নারায়ণা হৃদয়ালয়ে চেকআপ করাতে যান। সেখানে তাঁর এনজিওগ্রাম করা হয়। পরে তিনি দ্বিতীয়বারের মতো ব্রেন স্ট্রোক করেন এবং তার নিউমোনিয়া ধরা পড়ে। তখনই তাকে আইসিইউতে রাখা হয়।

এডি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!