সর্বনাশ ঘটিয়ে রেল যাচ্ছে কোথায়?

পর পর দুর্ঘটনা, অব্যবস্থাপনা অনিয়মে বাড়ছে নিরাপত্তাহীনতা

সাশ্রয়ী ও নিরাপদ বলে মানুষ রেল ভ্রমণেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। কিন্তু সাম্প্রতিক সময়ে ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ভয়াবহ রেল দুর্ঘটনায় ১৬ জনের প্রাণহানি ও পরপর কয়েকটি দুর্ঘটনায় মানুষ এখন শংকিত রেল চলাচলে নিরাপত্তা নিয়ে। এসব দুর্ঘটনায় রেলের সম্পদের ক্ষতির পাশাপাশি আলোচিত হচ্ছে রেল পরিচালনায় অব্যবস্থাপনা, দুর্নীতি, অদক্ষ চালকের বিষয়গুলোও। তার ওপর ‘এটা স্যাবোটাজ কি না’- প্রধানমন্ত্রীর এ মন্তব্য। রেলের প্রতি সাধারণ মানুষের বিশ্বাসের জায়গাটা নষ্ট হচ্ছে। জনমনে এখন প্রশ্ন- মানুষের আস্থা ও প্রাণহানি, সর্বনাশ ঘটিয়ে রেল যাচ্ছে কোথায়!

মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর) ভোররাতে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলার কসবা উপজেলার মন্দাবাগ রেলওয়ে স্টেশন সংলগ্ন এলাকায় ঢাকাগামী তূর্ণা নিশীথার সঙ্গে সিলেট থেকে ছেড়ে আসা চট্টগ্রামগামী উদয়ন এক্সপ্রেসের সংঘর্ষে ১৬ জনের মৃত্যু ও ৭৬ জন আহত হয়। জানা যায়, চালক ঘুমন্ত থাকায় সিগন্যাল অমান্য করার কারণে এ দুর্ঘটনা ঘটে। বৃহস্পতিবার (১৪ নভেম্বর) দুপুর ২টার দিকে সিরাজগঞ্জ থেকে ঢাকা ছেড়ে যাওয়া রংপুর এক্সপ্রেসের ৭টি বগি উল্লাপাড়ায় লাইনচ্যুত হয়। এতে ৭টি বগিতে আগুন লেগে যায়। এতে অর্ধশত যাত্রী আহত হয়। এই দুই দুর্ঘটনার রেশ কাটতে না কাটতেই কুমিল্লায় ভয়াবহ দুর্ঘটনায় পড়ে ঢাকা থেকে চট্টগ্রামগামী চট্টলা এক্সপ্রেস। একইদিন আখাউড়া রেলস্টেশনে রেল লাইন সংস্কারের কাজ করতে গিয়ে মাটির নিচে থাকা সিগন্যাল তার কাটা যাওয়ায় মোবাইল ফোনে যোগাযোগের মাধ্যমে স্টেশন মাস্টারেরা রেল চলাচল চালু রাখে । ফলে ঢাকা-চট্টগ্রাম ও চাঁদপুরগামী ট্রেনের গন্তব্যে পৌঁছতে দুই থেকে তিনঘণ্টা দেরি হয়। পরপর ঘটে যাওয়া এ ঘটনাগুলো সর্বত্র আলোচনার জন্ম দেয়। অন্যদিকে প্রধানমন্ত্রী রেল দুর্ঘটনার পেছনে কোনো যড়যন্ত্র আছে কি-না, তা তদন্ত করে দেখার জন্য বলেন।

জানা যায়, রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলে চালকের পদ রয়েছে ৯৮০টি । বর্তমানে কর্মরত আছে ৬৪৭ জন। এলএম গ্রেড (লোকোমাস্টার)-১ পদসংখ্যা ১৩৯ জন। কর্মরত আছে ১২৯ জন। এলএম গ্রেড-২ এ ২৩০ জনের বিপরীতে কর্মরত আছে ৮৩ জন। এস এল এম ( শান্টিং লোকোমাস্টার) ১২০ জন, কর্মরত ৭৫ জন, এ এল এম (সহকারী লোকোমাস্টার) গ্রেড-১ ১৩৭ জন, কর্মরত-১৩৩ জন, এ এল এম গ্রেড-২ ৩৫৪ জন, কর্মরত ২২৭ জন।

চালকের ক্ষেত্রে ৩৩৩টি পদসংখ্যা খালি রয়েছে। দৈনিক ইঞ্জিন চাহিদা ১৫৫টি, দৈনিক প্রস্তুত থাকে ১০৫টি। ইঞ্জিন সংকট ৫৫টি। বর্তমানে ১৯৫৬ সালের ইঞ্জিনও রয়েছে। যদিও একটি ইঞ্জিনের মেয়াদ ২০ বছর।

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনায় ৫টি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়। বিভাগীয় পর্যায়ে গঠিত পাঁচ সদস্যের কমিটিকে ২ দিনের মধ্যে প্রতিবেদন দেওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়। ঘটনার জন্য তূর্ণা নিশিথার চালক তাছের উদ্দিন ও সহকারী অপু ও গার্ড আবদুর রহমানকে দায়ী করা হয়েছে। বলা হয়, চালক ঘুমিয়ে থাকায় তিনটি সিগন্যাল মিস করেছে। তবে দুই চালককে দায়ী করার বিষয়টি মানলেও, স্টেশনের সিগন্যাল ত্রুটি ও গার্ডকে দায়ীর বিষয়টি মানতে পারেননি বিভাগীয় যান্ত্রিক প্রকৌশলী। তার মতে, সিগন্যাল ঠিক ছিল। চালক চাইলে ট্রেন থামাতে পারতো। প্রতিবেদন বিষয়ে মতৈক্য না হওয়ায় তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলে দেরি হয়।

আগেও রেল দুর্ঘটনার তদন্ত প্রতিবেদন আলোর মুখ দেখেনি। তবে এবার তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হবে বলে জানিয়েছিলেন রেলমন্ত্রী নজরুল ইসলাম সুজন ।

শুক্রবার (১৫ নভেম্বর) তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়া হলেও তা শনিবার (১৬ নভেম্বর) রেলমন্ত্রী সাংবাদিকদের সামনে ব্রিফ করবেন। এক সপ্তাহে একাধিক দুর্ঘটনা, প্রাণহানি, দুর্ঘটনার পেছনে প্রধানমন্ত্রী যড়যন্ত্রের গন্ধ- দুর্ঘটনায় মূল কারণ জনসমক্ষে প্রকাশ করে ঘটনার জন্য দায়ীদের শাস্তি প্রদানের মাধ্যমে রেলের প্রতি মানুষের আস্থা ফিরিয়ে আনা জরুরি বলে মনে করছে সাধারণ মানুষ।

সিএম

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!