সরকারের বিনামূল্যের হাজারো বই মিললো মহেশখালীর ভাঙারি দোকানে

চলতি শিক্ষাবর্ষের মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণের জন্য দেওয়া সরকারি বই স্কুল-মাদ্রাসায় শতভাগ পৌঁছানোর আগেই পাওয়া গেল ভাঙারি দোকানে।

রোববার (১৬ জানুয়ারি) দিবাগত রাতে কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলার বড় মহেশখালীর একটি ভাঙারি (স্ক্র‍্যাপ) দোকানে পাওয়া যায় দুই হাজার বই।

এসব বই প্রথমে স্থানীয় গ্রাম পুলিশের হেফাজতে নেওয়ার পর সোমবার (১৭ জানুয়ারি) সকালে ঘটনাস্থলে গিয়ে জব্দ করে মহেশখালী থানা পুলিশ।

মহেশখালীর সব স্কুল-মাদ্রাসায় শতভাগ বই না পৌঁছানোর আগেই নতুন বছরের বইগুলো কিভাবে ভাঙারি দোকানে গেলো তা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন শিক্ষক ও অভিভাবকরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক মহেশখালীর কয়েকটি মাদ্রাসার অধ্যক্ষ বলেন, ‘মহেশখালী উপজেলা শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার ফজলুল করিমের অজান্তেই এসব কিভাবে হল? যেখানে এ কর্মকর্তা আমাদের পরিপূর্ণ বই দিতে চান না সেখানে এ অফিস থেকে বই বের হলো কিভাবে?’

জানা গেছে, বড় মহেশখালী ফকিরাঘোনা কমিউনিটি ক্লিনিকের পাশের জনৈক মোহাম্মদ ছিদ্দিকের মালিকানাধীন একটি ভাঙারির দোকানে দুই হাজার নতুন বই মজুদ করা হয় রাতের আঁধারে। রুবেল নামে একজন খুচরা ভাঙারি পণ্য বিক্রেতা ওই দোকানের মালিকের কাছে বিক্রি করার জন্য বইগুলো নিয়ে আসে। এ অবস্থায় নতুন বই দেখে দোকান মালিক ও ভাঙারি ব্যবসায়ীর সন্দেহ হলে বিষয়টি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদে জানান তারা।

পরে ইউনিয়ন পরিষদের কয়েকজন গ্রাম পুলিশ সদস্য ওই দোকানে গিয়ে বিপুল সংখ্যক নতুন বইয়ের মজুদ দেখতে পান। মজুদ সব বই ২০২২ সালের চলতি শিক্ষাবর্ষের। পরে বইগুলো ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশের সদস্যরা নিজেদের জিম্মায় রাখেন।

গ্রাম পুলিশ সদস্য মোহাম্মদ সোলাইমান বলেন, ‘স্ক্র্যাপের দোকানে প্রায় ২ হাজার কপির মতো নতুন বই পাওয়া গেছে। বইগুলো প্রথমে ইউনিয়ন পরিষদের আওতায় গ্রাম পুলিশ সদস্যদের জিম্মায় রাখার পরে পুলিশের কাছে স্থানান্তর করা হয়েছে।’

দোকান মালিক মোহাম্মদ ছিদ্দিক বলেন, ‘বড় মহেশখালীর কুলাল পাড়া এলাকার মনজুরের পুত্র মোহাম্মদ রুবেল সন্ধ্যা ৭টার দিকে ব্যবহৃত কাগজ হিসেবে কেজির দরে বিক্রির জন্য দোকানে বইগুলো আনেন। বইগুলো মজুদ করে রুবেল দোকান থেকে সরে যায়। পরে নতুন বই দেখে সন্দেহ হলে বিষয়টি স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের গ্রাম পুলিশ সদস্যদের জানাই। রুবেল তার কাছে নিয়মিত ভাঙারি পণ্য বিক্রি করে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে মহেশখালী থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মো. আব্দুল হাই বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের মাঝে বিনামূল্যে বিতরণের সরকারি বই বিক্রি করা খুবই দুঃখজনক কাজ। বইগুলো পুলিশ জব্দ করেছে। বর্তমানে থানা হেফাজতে রাখা হয়েছে। প্রাথমিক তথ্য অনুযায়ী রুবেল নামে এক ভাঙারিওয়ালার নাম পাওয়া গেছে। পরবর্তীতে এ বিষয়ে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

ওসি আরও বলেন, ‘হয়তো কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অতিরিক্ত বই বিতরণের কারণে বইগুলো বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। এরপরও সরকারি বই কিভাবে ওখানে গেলো তা অনুসন্ধান করা হবে।’

মহেশখালী উপজেলা শিক্ষা অফিসের একাডেমিক সুপারভাইজার ফজলুল করিম বলেন, ‘রুবেল নামে এক ভাঙারিওয়ালা বইগুলো কেজি দরে স্ক্র্যাপের দোকানে বিক্রি করেছে- এমন খবর পেয়েছি। এসব বিষয় খতিয়ে দেখে জড়িতদের বিরুদ্ধে প্রাতিষ্ঠানিক ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এমএফও

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!