সরকারি নির্দেশ মানছে না চট্টগ্রামের বেপজা স্কুল!

সোমবার খোলা ছিল, মঙ্গলবারও থাকবে

দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে চট্টগ্রামসহ উপকূলীয় ১৪ জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম দুই দিন বন্ধ রাখার নির্দেশ দিলেও সেটা না মেনে স্কুল খোলা রেখেছে বেপজা পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ। মঙ্গলবারও স্কুল খোলা রাখা হবে বলে জানিয়েছে স্কুল কর্তৃপক্ষ। ওই এলাকায় অবস্থিত বাংলাদেশ নৌবাহিনী স্কুল এন্ড কলেজ, বিএএফ শাহীন স্কুল এন্ড কলেজ সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান সরকারি ঘোষণা মেনে স্কুল বন্ধ রেখেছে।

শনিবার (৯ নভেম্বর) মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ড. সৈয়দ মো. গোলাম ফারুক স্বাক্ষরিত এক আদেশে জানানো হয়, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার কারণে চট্টগ্রামসহ উপকূলীয় ১৪ জেলার সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষা কার্যক্রম বন্ধ থাকবে সোমবার (১১ নভেম্বর) ও মঙ্গলবার (১২ নভেম্বর)। তবে ঘূর্ণিঝড় কবলিত লোকজনের নিরাপদ আশ্রয় নিশ্চিত করতে এসব এলাকার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলা থাকবে।

বেপজা পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজ নগরীর দক্ষিণ হালিশহর ঘূর্ণিঝড় স্পর্শকাতর এলাকায় অবস্থিত। দক্ষিণ হালিশহরে বেপজায় কর্মরতদের সন্তানদের লেখাপড়ার উদ্দেশ্যে ১৯৯৯ সালের ১৫ মার্চ এই প্রতিষ্ঠানটি স্থাপন করে ইপিজেড কর্তৃপক্ষ।

জানা যায়, অধিদপ্তরের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে বরাবরই স্কুলের কার্যক্রম চালিয়ে নেয় স্কুল কর্তৃপক্ষ। পরবর্তীতে নোটিশ না পাওয়ার অজুহাত দেখানো হয়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন অভিভাবক জানিয়েছেন, ‘বুলবুলের কারণে রীতিমতো আতঙ্কে ছিলাম। এমন আবহাওয়ায় বাচ্চাদের স্কুলে দেওয়ার পক্ষে ছিলাম না। কিন্তু সামনে পরীক্ষা চলে আসায় বাধ্য হয়ে স্কুলে পাঠিয়েছি। দুইদিন বন্ধ রাখলে তো আহামরি ক্ষতি হবে না। কিন্তু সরকারি নির্দেশে বন্ধ দেওয়ার পরেও কেন যে স্কুল খোলা রাখলো তা বুঝলাম না!’

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার ব্যাপারে চট্টগ্রাম ইপিজেডের জেনারেল ম্যানেজার মোহাম্মদ খোরশেদ আলম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এটা আমি আসলে জানি না, জানতাম না। এটার ব্যাপারে আমার জানা নেই। আপনার থেকে শুনলাম। আমাদের প্রিন্সিপালের সাথে কথা বলে জানাচ্ছি।’

তবে মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাকে গুরুত্ব না দিয়ে ভিন্নমত অধ্যক্ষের।

তাচ্ছিল্যের সুরে বেপজা পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ ড. শেখ শরিফুল ইসলাম বলেন,’ আমি নোটিশটা ওরকমভাবে ফরমালি পাইনি। এতে অসুবিধাটা কী হয়েছে? আপনার কাছে কি এখানে দুর্যোগ মনে হয়েছিল? তাহলে আপনি কেন আমাকে জিজ্ঞেস করছেন?’

আরও কটাক্ষভাবে তিনি বলেন, ‘ আপনার বুদ্ধিতে কোন কিছু মনে হয় না। আপনি কেন আমাদের খোঁচাচ্ছেন— স্কুল কেন খোলা ছিল? আপনি বলেন বন্ধ রাখা উচিত ছিল কিনা?’

সরকারি নির্দেশনা মানা প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। তাতে আপনারা বুদ্ধি খাটাবেন না! আপনাকে যদি বলে এখন আগুনে ঝাঁপ দেন। আপনি কি দেবেন? সরি সরি সরি, এ বিষয়ে আর কথা বলতে পারছি না।’

মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা পালনের বিষয়কে গুরুত্ব দিয়ে চট্টগ্রাম শিক্ষাবোর্ডের চেয়ারম্যান প্রফেসর শাহেদা ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন,’ শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের যেকোনো নির্দেশনা প্রত্যেকটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানকে মানতে হবে বলে আমি মনে করি। তারা যেহেতু মানেনি এর মানে, তারা মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনাকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়েছে। আর যারা এমন করবে তারা নিশ্চয় আইনের বাইরে থাকবে না।’

নির্দেশনা মানা প্রসঙ্গে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের পরিচালক প্রফেসর ড. মো. আব্দুল মান্নান চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘অবশ্যই মন্ত্রণালয়ের যেকোনো নির্দেশনা মানা কর্তব্য। আর তারা যদি সরকারের অর্ডার অমান্য করে তাহলে অবশ্যই তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

পরবর্তীতে বেপজা পাবলিক স্কুল এন্ড কলেজের অধ্যক্ষ নোটিশ না পাওয়ার অজুহাতে সুর পাল্টে বলেন, ‘আমি এখন সবকিছু খুলে দেখলাম, মাউশি’র যে ওয়েবসাইট আছে সেখানেই পোস্ট করা ছিল। উনারা পোস্ট দিয়েছেন ৯ তারিখ। ১০ তারিখ ছুটির দিন ছিল তাই তখন সেভাবে আমাদের নজরে আসেনি। এখন ঘটনা যেটা সেটা হলো, ছুটির দিন যেহেতু ছিল পরে আমাদের শিক্ষা অফিসার দেওয়ার কথা। তারাও দেয় নাই। যার জন্য আমরা তেমন কিছু জানি না। দুই দিনের ছুটি রাখতে বলেছে। এখন আমরা আগামীকালের ছুটি রাখার চেষ্টা করছি। এখন দেখা যাক। আপনার নলেজে দেওয়ার জন্য বলা।’

এসআর/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm