সরওয়ার জাহান-মোজাম্মেলের ধোঁকাবাজিতে সাউদার্ন ইউনিভার্সিটির ৬ কোটি টাকা উধাও

ভুয়া ঋণ ‘শোধ’ দেখিয়েও কোটি টাকা আত্মসাৎ

চট্টগ্রামের সাউদার্ন ইউনিভার্সিটিতে বাংলাদেশে দীর্ঘকাল ধরে চলা ‘আপদকালীন তহবিল’ ও এজেন্ট ব্যাংকিং ফান্ডের অনিয়ম ও কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে নড়েচড়ে বসেছে দুর্নীতি দমন কমিশন। এরই অংশ হিসেবে মঙ্গলবার (২ নভেম্বর) সকালে দুর্নীতি দমন কমিশনের উপপরিচালক আলমগীর হোসেন একটি মামলা দায়ের করেছেন।

মামলায় অভিযোগ আনা হয়েছে, কোষাধ্যক্ষ সরওয়ার জাহান (৬৩) ও সাবেক রেজিস্ট্রার প্রফেসর ইঞ্জিনিয়ার মোজাম্মেল হক (৭৮) একে অপরের সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ করেছেন।

আপদকালীন তহবিল থেকে কোটি কোটি টাকা আত্মসাৎ

দুর্নীতি দমন কমিশনের দায়ের করা মামলার এজাহারে বলা হয়েছে, আসামি সরওয়ার জাহান অসৎ উদ্দেশ্যে প্রতারণামূলকভাবে ব্যক্তিগত লাভের জন্য শিক্ষক ও কর্মকর্তা/কর্মচারীদের কাছ থেকে আদায় করা প্রভিডেন্ট ফান্ড বা আপদকালীন তহবিলের ৬ কোটি ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৭৩০ টাকা তুলে নিয়ে আত্মসাৎ করেছেন। একই সঙ্গে তিনি ব্যাংক এশিয়ার অধীনে ‘এজেন্ট সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি’ নামে একটি এজেন্ট ব্যাংক পরিচালনা করেন। অথচ সেখান থেকে কোনো কমিশন বিশ্ববিদ্যালয় তহবিলে জমা করেননি। অথচ এজেন্ট ব্যাংকিং কর্মচারীর বেতন বাবদ বিশ্ববিদ্যালয়ের তহবিল থেকে ৮৮ হাজার ৭৩৮ টাকা দিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক ক্ষতি সাধন করেছেন।

টাকা না নিয়েই দেখানো হয় পরিশোধ

এছাড়া আসামি সরওয়ার জাহান ও প্রফেসর মোজাম্মেল হক একে অপরের সহযোগিতায় এনআরবি গ্লোবাল ইসলামী ব্যাংকে বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি হিসাব থেকে মোহাম্মদ ইলিয়াছ নামে এক ব্যক্তিকে ২৮ লাখ আট হাজার ৯৯০ টাকা ‘ঋণ’ দেন। পরে অবৈধভাবে দেওয়া এই কথিত ‘ঋণে’র টাকা পরিশোধ দেখিয়ে পুরো টাকাই সরওয়ার ও মোজাম্মেল মেরে দিয়েছেন।

পেছনের প্রেক্ষাপট

ঘটনার সূত্রপাত ২০০৭ সালের ১৫ জুলাই সাউদার্ন ইউনিভার্সিটি বাংলাদেশ ফাউন্ডেশনের ১৪তম সভা থেকে। ওই সভায় সিদ্ধান্ত নেওয়া হয় চট্টগ্রামে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংক পিএলসির প্রবর্তক শাখায় একটি ব্যাংক হিসাব খোলার। ড. সরওয়ার জাহানকে সিগনেটরি হিসেবে মনোনয়ন প্রদান করা হয়। ২০১০ সালের ২৭ মে ব্যাংকে হিসাব খোলার আবেদন করলে ৩০ জুন একটি হিসাব (নম্বর ০১১৯০৩১০০০০১৮৬৫) খোলা হয়। হিসাবের বিবরণী পর্যালোচনায় দেখা যায়, ২০১০ সালের মে থেকে ২০২৪ সালের জুন পর্যন্ত মোট ৬ কোটি ৩ লাখ ৬৮ হাজার ৭৩০ টাকা জমা থাকলেও সবই জালিয়াতির মাধ্যমে উত্তোলন করা হয়েছে। দুদকের মামলায় বলা হয়, ওই সময় তিনি ওই ব্যাংক থেকে সব অর্থ তুলে নিয়ে হিসাব শূন্য করে দেন, অথচ ব্যয়ের কোনো নথিই দেখাতে পারেননি।

আইনি প্রক্রিয়া

দুর্নীতি দমন কমিশন জানিয়েছে, মামলার তদন্তকালে যদি আসামিদের সঙ্গে অন্য কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায় বা নতুন তথ্য উদ্ঘাটিত হয়, তা আইন অনুযায়ী আমলে আনা হবে। মামলা রুজু করা হয়েছে দন্ডবিধি ৪০৯/৪২০/১০৯ ধারা ও দুর্নীতি প্রতিরোধ আইন, ১৯৪৭-এর ৫(২) ধারায়।

ksrm