সম্প্রীতির বাংলাদেশে সংঘাতের অপচেষ্টা রুখে দেওয়ার ডাক আন্তঃধর্মীয় সংলাপে

কক্সবাজারে দুদিনব্যাপী আন্তঃধর্মীয় সংলাপ সেমিনার

‘প্রতিটি ধর্মই শান্তি আর সম্প্রীতির কথা বলে। মানুষের মানবিক মর্যাদা প্রতিষ্ঠার বাণী দৃঢ়ভাবে উচ্চারিত হয়েছে প্রতিটি ধর্মে। কিন্তু উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে এই ধর্মকে ব্যবহার করে সমাজের আন্তঃধর্মীয় সংঘাতকে উসকে দেওয়া হয়। এতে সামাজিক সম্প্রীতি নষ্ট হয় এবং শান্তি বিঘ্নিত হয়। সম্প্রীতির বাংলাদেশে এ ধরনের অপচেষ্টা প্রতিরোধে সবাইকে সজাগ থাকতে হবে। সমাজে শান্তি ও সম্প্রীতি বিনির্মাণে তাই আন্তঃধর্মীয় সংলাপ জরুরি ও গুরুত্বপূর্ণ।’

কক্সবাজার জেলা পরিষদ কন্সফারেন্স হল, হোটেল সিলভার সাইন এবং কক্সবাজার প্রেসক্লাব হলে ২৯-৩০ ডিসেম্বর ২০২০ দু’দিনব্যাপী অনুষ্ঠিত তিনটি সেমিনারে এই অভিমত ব্যক্ত করা হয়। ইউরোপিয়ান ইউনিয়ন, দি নেটওয়ার্ক ফর রিলিজিয়নসহ অন্যান্য কয়েকটি দাতা সংস্থার পৃষ্ঠপোষকতায় এ কর্মসূচি অনুষ্ঠিত হয়।

দি নেটওয়ার্ক ফর রেলিজিয়ন ও ট্র্যাডিশনাল পিসমেকার্সের ফেলো উজ্জ্বল কান্তি দেবের সভাপতিতে ‘সম্প্রীতি বন্ধনে আন্তঃধর্মীয় সংলাপ’ শীর্ষক প্রথম সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন তথ্য মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সদস্য ও কক্সবাজার সদর-রামু আসনের সাংসদ সাইমুম সরওয়ার কমল।

সেমিনারে তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ ঐতিহ্যগতভাবে সম্প্রীতির বন্ধনে আবদ্ধ। এ সম্প্রীতির রূপকার ছিলেন জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান। অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশে তাই সকল ধর্মের প্রতি সকলের শ্রদ্ধাশীল হতে হবে।’

সেমিনারের প্রধান বক্তা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ও মানববিদ্যা অনুষদের সাবেক ডিন ও বাংলাদেশ স্টাডিজ বিভাগের চেয়ারম্যান প্রফেসর ড. মো. সেকান্দর চৌধুরী বলেন, ‘আন্তঃধর্মীয় সংলাপ ও আন্তঃধর্মীয় নেতৃত্বই বর্তমানে তরুণ সমাজ তথা মানুষের মধ্যে সাম্প্রদায়িক সম্প্রতির মেলবন্ধন সুদৃঢ় করতে পারে।’

সেমিনারসমূহে রিসোর্সপার্সন হিসেবে একাডেমিক ও জ্ঞানগর্ভ বক্তব্য রাখেন চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা ইনস্টিটিউটের সাবেক পরিচালক প্রফেসর মো. জসিম উদ্দিন, চবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক ও আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মনজুরুল আলম এবং চবি দর্শন বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ও দি নেটওয়ার্ক ফর রেলিজিয়ন ও ট্র্যাডিশনাল পিসমেকার্সের ফেলো মাছুম আহমেদ।

‘শান্তি স্থাপনে আন্তঃধর্মীয় নেতৃত্ব বিনির্মাণ’ শীর্ষক দ্বিতীয় সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ট্যুরিস্ট পুলিশের সুপার জিল্লুর রহমান। তিনি বলেন, ‘অন্যের ক্ষতি থেকে বিরত থাকলে মানুষ প্রকৃত শান্তির খোঁজ পেতে পারে। সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠায় সকল ধর্ম ও মানুষের প্রতি সমদৃষ্টি থাকা উচিত।’

এদিকে কক্সবাজার প্রেসক্লাবে ‘দ্বন্দ্বের নিরসনে আন্তঃধর্মীয় সংলাপ’ বিষয়ে আয়োজিত সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন কক্সবাজার অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক মো. শাহজাহান আলী। তিনি বলেন, ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রতি বন্ধনে সকল ধরনের দ্বন্দ্বের অবসানে আন্তঃধর্মীয় সংলাপই উত্তম পন্থা।’

সেমিনারসমূহে অন্যান্যের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন অধ্যক্ষ অজিত দাশ, হিন্দু কল্যাণ ট্রাস্ট্রের ট্রাস্টি বাবুল শর্মা, বৌদ্ধ কল্যাণ ট্রাস্ট্রের ট্রাস্ট্রি দীপংকর বড়ুয়া পিন্টু, পরমাণু কর্মকর্তা ইফতেখার উদ্দিন চৌধুরী, ড. নুরুল আবছার, অধ্যাপক হাশেম উদ্দিন, ইসলামী ফাউন্ডেশনের কো-অর্ডিনেটর মো. ফয়েজ, রামকোট বৌদ্ধ বিহারের পরিচালক জ্যোতিসেন ভিক্ষু, রিলিজিয়ন ফর পিসের (চট্টগ্রাম) ভাইস চেয়ারপার্সন এন্ড্রু গোমেজ, কমরেড গিয়াস উদ্দিন, সাংবাদিক আমির হোসেন হেলালী, অ্যাডভোকেট সাকী এ কাউছার, অধ্যাপক জসিম উদ্দিন, অধ্যাপক জাহাঙ্গীর আলম, অধ্যাপক নওশাদ, অধ্যাপক শহিদুল আলম, অধ্যাপক আবদুল্লাহ আল-নোমান, আরিফুর রহমান, খোকন চন্দ্র পাটোয়ারী, জিয়া উদ্দিন, শাহ নিবরাস, জামসেদ, উসমান গণিসহসহ বিভিন্ন শ্রেণী-পেশার নেতৃবৃন্দ ও শিক্ষক-শিক্ষার্থীবৃন্দ।

পবিত্র ধর্মগ্রন্থগুলো থেকে পাঠ ও জাতীয় সঙ্গীত পরিবেশনার মধ্য দিয়ে সেমিনারের সূচনা ঘটে। অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন রিয়া বড়ুয়া ও মো. শাহ-নিবরাস।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!