কক্সবাজার-মহেশখালী নৌ-রুটের ২০০ নৌযান চালককে ‘সমুদ্রে নিরাপত্তা’ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দিচ্ছে আন্তর্জাতিক অভিবাসন সংস্থা আইওএম।
শুক্রবার (৫ মার্চ) মহেশখালী সংসদীয় আসনের সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক এই প্রশিক্ষণের উদ্বোধন করেন।
দাতা সংস্থা ব্যুরো অব হিউম্যানিট্যারিয়ান অ্যাসিস্টেন্স (বিএইচএ)-এর সহযোগীতায় কক্সবাজারের মহেশখালী উপজেলা প্রশাসন ও সরকারের বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়ে মহেশখালী উপজেলা প্রশাসন কার্যালয়ে শুরু হয়েছে দুই দিনব্যাপী এ প্রশিক্ষণ। শেষ হবে রোববার (৬ মার্চ)।
কক্সবাজার-মহেশখালী এই অঞ্চলের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ রুট। স্থানীয়দের পাশাপাশি পর্যটক ও উন্নয়ন সংস্থার কর্মীরা প্রতিনিয়ত এই রুট ব্যবহার করে মহেশখালী ভ্রমণ করেন। অন্যদিকে, কক্সবাজারের মূল ভূখণ্ডের মতই মহেশখালী দ্বীপটি ঘূর্ণিঝড়সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত। এই দ্বীপের প্রায় তিন লাখ বাসিন্দাদের মধ্যে এক লাখ বাসিন্দাই এই ঝুঁকিতে বসবাস করছে-এমন তথ্য জানিয়েছে উপজেলা প্রশাসন।
প্রশিক্ষণের উদ্বোধক সাংসদ আশেক উল্লাহ রফিক বলেন, কক্সবাজার-মহেশখালী সমুদ্রপথটি ঘূর্ণিঝড়সহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ। সমুদ্র সুরক্ষায় আমাদের নৌ-চালকদের সংবেদনশীল করার এই উদ্যোগের জন্য আমরা কৃতজ্ঞ। আইওএম মহেশখালীর নানামুখী উন্নয়নে ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীকে সহযোগীতায় কাজ করছে। আমরা আশা করছি এই প্রত্যন্ত দ্বীপের ভবিষ্যৎ উন্নয়ন ও নানা জরুরি ক্ষেত্রে এই সহযোগীতা অব্যাহত থাকবে।
তিনি বলেন, ২০১৯ সাল থেকে আইওএম মহেশখালী উপজেলা এবং এর পাঁচটি ইউনিয়নে উপজেলা ও ইউনিয়ন দুর্যোগ পরিচালনা কমিটির (ডিএমসি) সদস্যদের সক্ষমতা বাড়াতে কাজ করছে। এ পর্যন্ত দেড় হাজার ঘূর্ণিঝড় প্রস্তুতি কর্মসূচি (সিপিপি)-এর স্বেচ্ছাসেবীদের দুর্যোগকালীন ঝুঁকি হ্রাসে মৌলিক দক্ষতা এবং অগ্নিনির্বাপনে মৌলিক প্রশিক্ষণ দিয়েছে। পাশাপাশি ১৫০ জন স্থানীয় স্বেচ্ছাসেবককে উদ্ধারকাজ বিষয়ে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে।
প্রশিক্ষণে উপস্থিত বিশেষ অতিথি মহেশখালীর উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. মাহফুজুর রহমান আইওএম-এর এমন উদ্যোগের প্রশংসা করে বলেন, মহেশখালীতে আইওএম-এর প্রতিনিয়ত উন্নয়ন কর্মকাণ্ড অজানা নয়। এই ধরণের সহযোগীতার ফলে আমাদের স্বেচ্ছাসেবকরা উপকৃত হচ্ছে। তারা বেশ কয়েকটি প্রয়োজনীয় দুর্যোগজনিত ঝুঁকি হ্রাসে সক্ষমতা বাড়ানোর প্রশিক্ষণ কার্যক্রম থেকে উপকৃত হয়েছে এবং কোভিড-১৯ এর বিরুদ্ধে লড়াইয়ে স্থানীয় জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্যবিষয়ক নানা সামগ্রীর সবচেয়ে বেশি প্রয়োজন ছিল এবং আইওএম এগুলোও আমাদের সরবরাহ করেছে।
বিশেষ অতিথি আইওএম কক্সবাজার কার্যালয়ের ট্রানজিশন এন্ড রিকভারি ডিভিশনের প্রোগ্রাম কো-অর্ডিনেটর প্যাট্রিক শেরিগনন বলেন, কক্সবাজার-মহেশখালী নৌ-রুটে কয়েকশত নৌ-চালক কর্মরত আছেন। কিন্তু সমুদ্রে সুরক্ষার বিষয়ে তাদের এখনও পর্যন্ত কোনও যথাযথ প্রশিক্ষণ নেই। এই ধরণের জীবনরক্ষামূলক সক্ষমতা বাড়ানোর কার্যকলাপে তাদের অভিগম্যতা জরুরি। আমরা আশা করি এই উদ্যোগটি কেবল জীবনই রক্ষা করবে না, বরং দ্বীপের পর্যটন খাতের জন্যও ভূমিকা রাখবে।
প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণকারী নৌ-চালক রাজন বলেন, আজ আমি বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ পেয়েছি যা আমার প্রতিদিনের কাজে খুব সহায়ক হবে। এখন থেকে আমি আরও অনেক আত্মবিশ্বাসী যে সমুদ্রে ভ্রমণের সময় আমি নিজেকে এবং আমার যাত্রীদের সুরক্ষা নিশ্চিত করতে পারব।
জানা গেছে, উপজেলা প্রশাসনের পাশাপাশি স্থানীয় ফায়ার সার্ভিস ও সিভিল ডিফেন্স, সিপিপি স্বেচ্ছাসেবক, বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ নৌ পরিবহন কর্তৃপক্ষ এবং উপকূলরক্ষীরাও প্রশিক্ষণে সক্রিয়ভাবে অংশ নিয়েছে। প্রশিক্ষণটিতে দুইটি ব্যাচে প্রতিদিন ১০০ জন অংশগ্রহণকারী উপস্থিত থাকছে। পাশাপাশি মহেশখালীর উপজেলা ও ইউনিয়ন ডিএমসির সদস্যরাও প্রশিক্ষণে অংশ নিয়েছেন। প্রশিক্ষণ মডিউলটি শেষ করার পরে, আইওএম নৌ-চালকদের সমুদ্র সুরক্ষা সরঞ্জাম সরবরাহ করে।
এসএ