সবচেয়ে বেশি প্রবাসী ফেরত সৌদি আরব থেকে, তবু ফ্লাইট চালুতে স্বস্তি ফিরেছে

বেশ কিছুদিনের খরা কাটিয়ে বাংলাদেশ থেকে অবশেষে সৌদি আরবে ফ্লাইট যাবে ৬ জানুয়ারি (বুধবার) থেকে। সৌদি আরবে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচলের নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করায় বিমান চলাচলে আবার স্বাভাবিক অবস্থা ফেরার সুযোগ তৈরি হল।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স এক বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে সৌদি আরবের ফ্লাইট চলাচলে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। এর আগে ২১ ডিসেম্বর থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সৌদি আরব। শুরুতে এক সপ্তাহের জন্য নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হলেও পরবর্তীতে আরও এক সপ্তাহ বাড়ানো হয়।

বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের উপ মহাব্যবস্থাপক তাহেরা খন্দকার চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, আগামী বুধবার থেকে সৌদি আরবগামী ফ্লাইটগুলো নিয়মিত চলাচল করবে। যাত্রীরা নিকটস্থ সেলস সেন্টার থেকে ফ্লাইটের সিডিউল অনুসারে সিট বরাদ্দ নিতে পারবেন। আসন খালি থাকা সাপেক্ষে যাত্রীরা আসন বরাদ্দ পাবেন।

ইউরোপসহ বিভিন্ন দেশে করোনার দ্বিতীয় ঢেউ শুরু হওয়ায় ২১ ডিসেম্বর থেকে আন্তর্জাতিক ফ্লাইট চলাচলের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে সৌদি আরব, ওমান কুয়েতসহ মধ্যপ্রাচ্যের কয়েকটি দেশ। এর মধ্যে সাত দিনের মেয়াদ শেষ হওয়ার শেষ দিনে আরো সাত দিনের জন্য নিষেধাজ্ঞা বাড়ায় সৌদি আবর। এতে অনিশ্চয়তায় পড়ে যান লাখো প্রবাসী কর্মী। সৌদির নিষেধাজ্ঞা দীর্ঘায়িত হলে প্রায় ৪০ হাজার নতুন ভিসা বাতিল হওয়ার আশঙ্কা করা হয়েছিল। কিন্তু ৬ জানুয়ারি থেকে আবার ফ্লাইট চালু ঘোষণা প্রবাসীদের মধ্যে স্বস্তি ফিরে আসে।

কর্মসংস্থান ও জনশক্তি অধিদপ্তরের চট্টগ্রাম কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক মোহাম্মদ জহিরুল আলম মজুমদার বলেন, সৌদি আরব আরও এক সপ্তাহের জন্য নিষেধাজ্ঞা বাড়ানোয় ফ্লাইটের টিকিট কেটেও অনেক প্রবাসী সৌদি আরবে যেতে পারেননি। এর আগে ওমান এক সপ্তাহের জন্য বিমান চলাচল বন্ধ করে আবার নিষেধাজ্ঞা তুলে নিয়েছে।

জানা গেছে, করোনা মহামারির আগে সৌদি আরবে প্রথমবারের মতো কাজে যাওয়ার জন্য প্রায় ২৫ হাজার কর্মী ভিসা নিয়েছিলেন। কিন্তু তারা যেতে পারেননি। তাদের নতুন করে ভিসা নিতে বলা হচ্ছে সৌদি সরকারের পক্ষ থেকে।

সৌদি আরব থেকে বিভিন্ন মেয়াদে কারাভোগ শেষে দেশে ফেরা কর্মীরা বলছেন, চুক্তির মেয়াদ শেষ হওয়া, প্রতারিত হওয়া এবং ভিসার মেয়াদ শেষ বা কাজের অনুমতি না থাকাসহ বিভিন্ন কারণে তাদের আটক করে দেশে ফেরত পাঠানো হয়েছে।

অন্যদিকে সংযুক্ত আরব আমিরাত থেকে ফিরে আসা কর্মীরা জানিয়েছেন, কাজ না থাকায় বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কর্মরতদের নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে।

জনশক্তি কর্মসংস্থান প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য বলছে, ২০১৯ সালে বাংলাদেশ থেকে চাকরি নিয়ে বিভিন্ন দেশে যাওয়া কর্মীর সংখ্যা ছিল সাত লাখ। চলতি ২০২০ সালে সেই লক্ষ্যমাত্রা ছিল সাড়ে সাত লাখ। গত জানুয়ারি থেকে মার্চ পর্যন্ত তিন মাসে বিদেশে যাওয়া মোট কর্মীর ৮৮ শতাংশ গেছে মধ্যপ্রাচ্যের ১০ দেশে। তাদের মধ্যে ৭৪ শতাংশই গেছে সৌদি আরবে। দেশটিতে প্রায় ২১ লাখ বাংলাদেশি শ্রমিক বিভিন্ন পেশায় কর্মরত।

সুত্র জানায়, গত ৩০ নভেম্বর পর্যন্ত কারাভোগ শেষে আউটপাস নিয়ে সবচেয়ে বেশি প্রবাসী কর্মী ফেরত এসেছেন সৌদি আরব থেকে। গত আট মাসে দেশটি থেকে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন ১৭ হাজার ৩১৬ জন নারী কর্মীসহ মোট ৯৬ হাজার ৬৮৭ জন। একই সময়ে ইউএই থেকে ফিরে আসতে বাধ্য হয়েছেন আট হাজার ৩৯৭ জন নারীসহ মোট ৮৭ হাজার ৫২৫ জন কর্মী।

এএস/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!