সন্দ্বীপে লোক জড়ো করে খাদ্য বিতরণের ঝুঁকিপূর্ণ ফটোসেশন

চট্টগ্রামের সন্দ্বীপে বিভিন্ন এলাকায় লোকজন জড়ো করে স্থানীয় সাংসদের পক্ষ থেকে খাদ্য সহায়তা বিতরণ করছেন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ জনপ্রতিনিধিরা। সোমবার (৩০ মার্চ) সন্দ্বীপের সারিকাইত ইউনিয়নে ৯০ জন ব্যক্তির হাতে এসব খাদ্য সহায়তা বিতরণ করা হয়। পর্যায়ক্রমে পুরো সন্দ্বীপে আরও ২ হাজার ৮৮০ পরিবারকে এভাবে খাদ্য সহায়তা দেওয়ার কথা জানিয়েছেন সন্দ্বীপের সংসদ সদস্য মাহফুজুর রহমান মিতা।

করোনা প্রতিরোধে সামাজিক দূরত্ব মেনে চলা ও মানুষকে ঘরে থাকতে যখন সরকার সবচেয়ে বেশি জোর দিচ্ছে তখন একটি উপজেলার শীর্ষ জনপ্রতিনিধি ও প্রশাসকদের এমন কাণ্ড অবাক করছে সবাইকে। তাদের এই কর্মকাণ্ডকে চূড়ান্ত রকমের ‘অসচেতনতা’ হিসেবে অভিহিত করে তীব্র সমালোচনা করছেন অনেকেই। তবে সাংসদ মাহফুজুর রহমানের দাবি, জনসমাগম করতে নিষেধ করে দিয়েছেন তিনি।

সোমবার (৩০ মার্চ) সাংসদের পক্ষ থেকে সন্দ্বীপের সারিকাইতে খাদ্য সহায়তার বিতরণের বেশ কিছু ছবি ফেসবুকে পোস্ট করেন সন্দ্বীপ উপজেলা ছাত্রলীগের এক নেতা। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে ছড়িয়ে পড়া খাদ্য বিতরণের এসব ছবিতে দেখা যায় সন্দ্বীপের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিদর্শী সম্বৌধি চাকমা ও উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাঈন উদ্দিন মিশনসহ এক ডজনেরও বেশি লোক মিলে একজনের হাতে খাদ্য সহায়তা তুলে দিচ্ছেন। খবর নিয়ে জানা গেছে, সন্দ্বীপের সারিকাইত ইউনিয়নে এভাবেই সাংসদের পক্ষে খাদ্য সহায়তা বিতরণ করেন তারা।

সন্দ্বীপে লোক জড়ো করে খাদ্য বিতরণের ঝুঁকিপূর্ণ ফটোসেশন 1

এসব ছবি ছড়িয়ে পড়ার পর ফেসবুকে এই ধরনের কার্যক্রমের বিষয়ে সমালোচনায় মুখর হন অনেকেই। শামসুল আজম মুন্না নামে একজন লিখেছেন, ‘চাল বিতরণকালে গণজমায়েত করে জন্মভূমি সন্দ্বীপকে অধিক ঝুঁকিপূর্ণ করে তোলার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানাই।’

সন্দ্বীপে করোনার সংক্রমণ ঘটলে তার জন্য রাজনৈতিক ব্যক্তিরা দায়ী থাকবেন বলে উল্লেখ করে তিনি লিখেন, ‘আন্তর্জাতিক বিশেষজ্ঞদের মতে, আগামী ৬-১০ দিন বাংলাদেশের জন্য সবচেয়ে ঝুঁকিপূর্ণ সময়। তাই এই সময়টা যথাযথভাবে হোম কোয়ারেন্টাইন মেনে চলতে হবে। আল্লাহ না করুক। করোনার প্রভাবে সন্দ্বীপে যদি ক্ষয়ক্ষতি হয়,তার জন্যে প্রবাসীরা নয়— দায়ী থাকবে সন্দ্বীপ উপজেলার বর্তমান রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ। কতিপয় অসচেতন রাজনৈতিক কর্মীদের এমন কাজের দায়ভার সকল সচেতন নেতৃবৃন্দকে টানতে হবে।

এই বিষয়ে মাহফুজুর রহমান মিতা চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘জনসমাগম ঠিক না। নেতাকর্মীদের মাধ্যমে এসব বিতরণ করা হয়েছে। তারাই দিনমজুর এসব মানুষের তালিকা করে দিয়েছে। তাদের অনেকে উৎসাহ উদ্দীপনা নিয়ে আসছে। আমি তো ঢাকায়। আমি নিষেধ করে দিয়েছি।’

এইভাবে লোক জড়ো করে খাদ্য সহায়তা বিতরণের কথা চট্টগ্রাম প্রতিদিনের কাছে স্বীকারও করে নিয়েছেন সন্দ্বীপের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বিদর্শী সম্বৌধি চাকমা। চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে তিনি বলেন, ‘এমপি মহোদয়ের পক্ষ থেকে এসব খাদ্য সহায়তা বিতরণ করা হয়েছে। আজ ৯০ জনের মধ্যে খাবার বিতরণ করা হয়েছে।’

করোনা প্রতিরোধে সরকারি ছুটি ও এই সময়ে নিম্ন আয়ের মানুষদের ঘরে ঘরে খাবার পৌঁছে দেয়ার বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনার বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি বলেন, ‘এরকম তো কোন সুযোগ নেই ঘরে যাবো। যেখানে সুযোগ আছে সেখানে ঘরে ঘরে দেওয়া হচ্ছে। তাছাড়া এমপি স্যারের এটা সম্পূর্ণ আলাদা।’

অন্যদিকে উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান মাঈন উদ্দিন ‘ঘরে ঘরে ত্রাণ পৌঁছিয়ে দেওয়া ব্যপক ব্যাপার’ হিসেবে উল্লেখ করে চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা চেষ্টা করে ব্যর্থ হয়েছি। ঘরে ঘরে পৌঁছে দিতে সময় বেশি লাগবে, প্রতিটি ওয়ার্ড শেষ করতে এক মাস লাগতে পারে তাই এভাবে দিচ্ছি।’

এর আগে সন্দ্বীপের প্রতি ওয়ার্ডে ২০ পরিবারকে খাদ্য সহায়তার ঘোষণা দেন সাংসদ মিতা। এক স্থানে ৩ ওয়ার্ডের লোক একত্র করে এসব খাদ্য সহায়তা বিতরণ করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। সাংসদ মিতার পক্ষ থেকে সন্দ্বীপের প্রতি ওয়ার্ডে ২০ পরিবারকে দেয়া এই খাদ্য সহায়তায় প্রতি পরিবার ১০ কেজি চাউল, ১ কেজি ডাল, ও ২ কেজি আলু পাচ্ছেন বলে জানিয়েছেন মাহফুজুর রহমান মিতা। সন্দ্বীপে একটি পৌরসভা ও ১৫টি ইউনিয়নে সব মিলিয়ে ওয়ার্ড রয়েছে ১৪৪ টি।

প্রসঙ্গত করোনা ভাইরাস সংক্রমণ যাতে সারা দেশে ছড়িয়ে না পড়ে সেজন্য সারা দেশে ১০ দিনের সাধারণ ছুটি ঘোষণা করেছে সরকার। এই সময়ে নাগরিকদের ঘরে থাকার আহবানও জানিয়েছেন সরকার। নাগরিকদের ঘরে থাকা নিশ্চিত করতে মাঠে নামানো হয়ে সেনাবাহিনীকেও। দ্বীপ উপজেলা সন্দ্বীপে এই কাজে মোতায়েন করা হয়েছে নৌবাহিনীকে। উপজেলা প্রশাসনের সাথে মানুষকে ঘরে রাখার দায়িত্বও পালন করছেন তারা।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!