চট্টগ্রামের সন্দ্বীপের মাইটভাঙ্গা ইউনিয়ন পরিষদের চেয়াররম্যান মিজানুর রহমান ও তার ভাইয়ের বিরুদ্ধে রাজনৈতিক প্রভাব কাজে লাগিয়ে ভূয়া দলিল তৈরি করে এক স্কুল শিক্ষকের পরিবারের কবরস্থানের জায়গা ও দোকান ভিটা দখল করার অভিযোগ পাওয়া গেছে।
মিজানুর রহমান চট্টগ্রাম উত্তর জেলা যুবলীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক। তার ছোট ভাই মাকসুদুর রহমান উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক।
এই বিষয়ে স্থানীয় থানা ও প্রশাসনের দ্বারে দ্বারে ঘুরেও কোন সমাধান না পেয়ে বিষয়টি নিয়ে সংবাদ সম্মেলন করে এর প্রতিকার চেয়েছেন ওই ভুক্তভোগী স্কুল শিক্ষকের পরিবার। এ সময় সম্পত্তি রক্ষা করতে গিয়ে চেয়ারম্যানের কাছ থেকে হত্যার হুমকি পাচ্ছেন জানিয়ে প্রাণ সংশয়ের আশংকাও জানান তারা।
সোমবার (১ আগস্ট) চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবের এস রহমান হলে আয়োজিত এই সংবাদ সম্মেলনে ভুক্তভোগী পরিবারের পক্ষে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন মাজহারুল ইসলাম। তিনি উত্তর সাতকানিয়া আলী আহমদ প্রাণহরি উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষক।
সংবাদ সম্মেলনে মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘আমার পিতা ফয়েজ উল্ল্যাহ ১৯৮৩ ও ১৯৯৭ সালে দুই দলিয়ে আমাদের বাড়ির পাশে ১৭.৫ কড়া সম্পত্তি কিনেন। ওই সময় থেকেই জমিগুলো আমাদের ভোগ দখলে আছে। আমার পিতার নামে নাম জারি করানো ছিল। ২০০১ সালে উনি মারা যাওয়ার পর ওয়ারিশসূরে আমরা ৯ ভাইবোন ওই সম্পত্তির মালিক হই। আমরা নিয়মিত ওই জমির খাজনা দিয়ে আসছি। এর মধ্যে ২০১৯ সালে এসে মিজানুর রহমান দাবি করেন এই জমির মালিক তিনি।’
জমির মালিকানা প্রমাণ করতে মিজানুর রহমান ২০১৬ সালে আগের মালিক থেকে নিজের নামে ভূয়া দলিল তৈরি করেছেন অভিযোগ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘১৯৮৩ ও ১৯৯৭ সালে যার কাছ থেকে আমরা জমিনটি কিনেছি ২০১৬ সালে এসে সেই মালিকের কাছ থেকে তিনি নিজের নামে আবার ভূয়া দলিল তৈরি করে রাখেন। যেটি ২০১৯ সালে প্রকাশ করেন তিনি।’
এরপর এই ঘটনায় তিনি আইনের দ্বারস্থ হলে তার পরিবারের সদস্যদের হত্যার হুমকি দেয়া হয় অভিযোগ করে মাজহারুল ইসলাম বলেন, ‘জমি ও কবর ভিটা রক্ষা করতে আমরা দ্বিতীয় যুগ্ম জেলা জজ আদালতে দুটি মামলা করি। এর পর মিজানুর রহমান ও তার ভাই মাকসুদুর রহমান আমার ভাই আজহারুল ইসলামের বাসায় গিয়ে হুমকী দিয়ে আসে। সেটি নিয়েও আমরা আদালতে একটি জিডি করেছি। এর পর কিছুদিন তিনি চুপচাপ ছিলেন।’
‘কিন্তু গত ২৮ জুলাই রাতে অতর্কিত বহিরাগত সন্ত্রাসী নিয়ে আমাদের জমিটি দখলে নেন মিজানুর রহমান ও তার ভাই’- বলেন মাজহারুল ইসলাম।
পুরো বিষয়টি নিয়ে স্থানীয় থানা বা প্রশাসনের কাছে গিয়েছিলেন কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে মাজহারুল ইসলাম বলে, ‘আমরা অনেকবার গিয়েছি। কিন্তু কেউ কোন সহযোগিতা করেনা। তাছাড়া যুবলীগ নেতা মিজান চেয়ারম্যান ও তার ভাই রহমান সন্দ্বীপের মাইটভাঙ্গা ইউনিয়ন, সারিকাইত ইউনিয়ন, মগধরা ইউনিয়ন ও এই তিন ইউনিয়নের মাঝখানে অবস্থিত সবচেয়ে বড় হাট শিবের হাটের পাশ্বর্তী এলাকার অসহায় মানুষের মূল্যবান জায়গা সম্পত্তি দোকান ভিটি বিভিন্ন কৌশলে দখল করে নিচ্ছে কয়েক বছর ধরে। স্থানীয় প্রশাসনের কাছে কেউ কোন প্রতিকার পাননি।’
তিনি লিখিত অভিযোগ দিয়েছিলেন কিনা- এমন প্রশ্ন করতেই পাশে থাকা শাহাদাত ইসলাম নামে একজনকে দেখিয়ে বলেন, ‘ইনি আমার প্রতিবেশী। চেয়ারম্যানের বাড়ির সামনেই তার দোকান। কিছুদিন আগে তাকে মারধর করেছে। সে ৮-১০ দিন থানায় ঘুরেছে। লিখিত এজহারও দিয়েছে কিন্তু মামলা হয়নি। এমন ভুক্তভোগী কয়েক ডজন আছে। তাদের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ বা মামলা করতে গেলে উল্টো বিপদ আরও বাড়ে।’
প্রসঙ্গত মিজানুর রহমান বেশ কিছুদিন আগে চট্টগ্রামের একটি জুয়ার আসর থেকে খুলশী থানা পুলিশের হাতে গ্রেপ্তার হয়ে আলোচনায় এসেছিলেন।