সন্ত্রাসীদের সঙ্গ ছাড়ায় সাতকানিয়ায় যুবকের ওপর হামলা

সন্ত্রাসীদের সঙ্গে সম্পর্ক ছিন্ন করায় চট্টগ্রাম জেলার সাতকানিয়া উপজেলায় এক যুবকের পা ভেঙে দেওয়া হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সাতকানিয়ার গাটিয়াডেঙ্গা সফিয়া মমতাজ স্কুলের সামনে ইউপি মেম্বার মোরশেদের নেতৃত্বে এই হামলার ঘটনা ঘটে। ৬-৭ যুবক এই হামলায় অংশ নেয় বলে অভিযোগে জানা গেছে। নলুয়া ইউনিয়ন ৫ নং ওয়ার্ডের সদস্য মোরশেদ স্থানীয় এক স্বেচ্ছাসেবক লীগ নেতার ওপর হামলার ঘটনায় দীর্ঘদিন কারাগারে ছিলেন। কারাগার থেকে ফিরে আবার বেপরোয়া হয়ে ওঠেন। তিনি স্থানীয় কিশোরগ্যাং লিডার মিন্টু-কামালের ভাগ্নে।

হামলার শিকার ফারুক অভিযোগে বলেন, ‘সঙ্গ ত্যাগ করায় এবং তাদের কথামতো নানা অপরাধ কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত না হওয়ায় ক্ষিপ্ত হয়ে তার ওপর পরিকল্পিত হামলা চালানো হয়েছে। অতীতে এলাকায় মিন্টু- কামালের প্ররোচনায় বিভিন্ন অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে অংশ নিয়েছি। তারা এলাকায় আধিপত্য বিস্তারের জন্য নিরপরাধ অনেকের ওপর হামলা করার জন্য আমার ওপর বারবার চাপ সৃষ্টি করতো। বিষয়গুলো বুঝতে পেরে আমি সম্প্রতি তাদের সঙ্গ ত্যাগ করি এবং তাদের এড়িয়ে চলতে থাকি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে মোরশেদ মেম্বারের নেতৃত্বে হামলায় চালায় আবু বক্কর, আবু আহাম্মদ, কানা মনজুর, ছালেকসহ কয়েকজন। তারা মূলত ফখরুদ্দিন মিন্টু ও কামাল উদ্দিনের অনুচর একেএম মনজুরুল ইসলামের অনুসারী। তাদের বিরুদ্ধে এলাকায় সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ড চালানো, হুন্ডি ব্যবসা পরিচালনা, মাদক পাচার ও ব্যবসার অভিযোগ রয়েছে।’

ফারুক অভিযোগে আরও বলেন, ‘হামলায় আমার দুই পা ভেঙে দেওয়া হয়েছে। পায়ে কোদাল দিয়ে ক্রমাগত আঘাত করেছে মোরশেদ মেম্বার। আবু বক্কর, আবু আহাম্মদ, ছালেক ও মনজুরসহ কয়েকজন ছিল এ সময়। তাদের সবার হাতে ছুরি, লোহার রড, লাঠি ও ধারালো দেশীয় অস্ত্র ছিল। পরবর্তীতে আমার চিৎকারে কয়েকজন লোক এগিয়ে আসলে তারা পালিয়ে যায়। এক মাস আগে হাঙ্গরমুখ বাজারে শার্টের কলার চেপে ধরে তাদের কথামতো না চললে মোরশেদ আমাকে দেখে নেওয়ার হুমকি দেয়।’

স্থানীয় এলাকাবাসী জানান, মিন্টু-কামালের কারণে পুরো নলুয়া দীর্ঘদিন থেকে সন্ত্রাসী জনপদে পরিণত হয়েছে। তাদের হামলায় ইউনিয়ন স্বেচ্ছাসেবক লীগ সভাপতি মোহাম্মদ মহিউদ্দিন গুরুতর আহত হয়ে ৯ মাস পর মারা যান। মিন্টু কামালের অনুসারীরা তাকে মৃত ভেবে ফেলে রাখেন তখন। ওই ঘটনায় মোরশেদ প্রায় ৪ মাস জেল খাটেন। পরবর্তীতে জাতীয় নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থী এমএ মোতালেব জয়ী হওয়ার পর তারা আবারও বেপরোয়া হয়ে ওঠে।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, মোরশেদ মেম্বারের বিরুদ্ধে ত্রাণের টিন চুরির অভিযোগও রয়েছে। সম্প্রতি ত্রাণের টিন চুরি করে হাঙ্গরমুখ বাজারে তার ভাড়া দেওয়া দোকানেও লাগানো হয়। এ বিষয়ে স্থানীয়রা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কাছে অভিযোগ করার পর অভিযানে যাওয়ার আগের রাতে ওই টিন খুলে সরিয়ে ফেলেন মোরশেদ মেম্বার। দোকানের চালায় টিন লাগানো ও খোলার কাজ করেছেন স্থানীয় মিস্ত্রি আকতার। পুরো এলাকার মানুষ বিষয়টি জানলেও প্রকাশ্যে মুখ খোলার সাহস পাচ্ছেন না। কারণ প্রতিবাদ করলেই তাদের নানাভাবে হয়রানি ও নির্যাতন করেন সন্ত্রাসী মোরশেদ মেম্বার।

জানা গেছে, মোরশেদ মেম্বারের ছোট ভাই খোরশেদ আলমও অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী। তার বিরুদ্ধে প্রকাশ্যে অস্ত্রবাজির অভিযোগ রয়েছে। নলুয়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আহমদ মিয়া ও দক্ষিণ জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাক আহমদ আঙ্গুরের বাড়িতে প্রকাশ্য দিবালোকে গুলি করার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। অবৈধ অস্ত্র প্রদর্শনের এসব ছবি ও ভিডিও এলাকায় ব্যাপকভাবে প্রচার আছে। তবে এসব অবৈধ আগ্নেয়াস্ত্র উদ্ধারে প্রশাসনের কোনো তৎপরতা নেই।

জানা গেছে, গাটিয়াডেঙ্গা এলাকায় মিন্টু-কামালের একটি ‘বাহিনী’ আছে। অবৈধ অস্ত্রধারী ওই ‘বাহিনী’র সক্রিয় সদস্যরা হলেন মোরশেদ, খোরশেদ, জাবেদ, সমশু, শহীদসহ আরও অনেকেই। সন্ত্রাসী ওই বাহিনী দিয়ে এলাকায় ব্যাপক আধিপত্য বিস্তার করে মিন্টু কামাল। কেউ তাদের কর্মকাণ্ডের বিরোধীতা বা দ্বিমত পোষণ করলেই পরিকল্পিত হামলা চালিয়ে নির্যাতন করা হয়। ইতিমধ্যে তাদের হামলার শিকার হয়েছেন মুবিন, হোসেন, দিদার, রহিম, মহিউদ্দিন, ফারুকসহ আর অনেকেই। এভাবে পুরো এলাকায় তারা ত্রাসের রাজত্ব কায়েম করে আছে বছরের পর বছর।

সাতকানিয়া থানার ওসি প্রিটন সরকার এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘একটি চিহ্নিত গোষ্ঠী এলাকাটাকে দীর্ঘদিন থেকে অস্থিতিশীল করে রেখেছে। যোগাযোগ ব্যবস্থা অনুন্নত হওয়ায় অপরাধীদের স্বর্গরাজ্য হয়ে উঠেছে আশপাশের কয়েকটি গ্রাম। সম্প্রতি মোরশেদ মেম্বারের নেতৃত্বে হামলা চালিয়ে এক যুবকের পা ভেঙ্গে দেওয়া হয়েছে এমন অভিযোগ পেয়েছি। ভাঙ্গা পা নিয়ে সে থানায় এসেছিল। আমার তাকে দ্রুত চিকিৎসা নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছি। আজ (বৃহস্পতিবার) লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। দায়ীদের বিরুদ্ধে কঠোর আইনগত পদক্ষেপ নেওয়া হবে।’

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm