সদরঘাট-আইস ফ্যাক্টরি সড়ক দখল করে বাজার, সকাল-সন্ধ্যায় নরক দুর্ভোগ

প্রতিদিন দিতে হয় ২০০ টাকা চাঁদা

চট্টগ্রাম নগরীর সদরঘাট রোডে সিটি কলেজের সামনে, মেমন হাসপাতালের সামনে থেকে মাদারবাড়ির আইস ফ্যাক্টরি রোড পর্যন্ত থাকা ফুটপাত ও সড়ক দখল করে গড়ে উঠেছে বিশাল কাঁচাবাজার। এর ফলে ব্যস্ততম সড়কটি হয়ে পড়েছে সংকীর্ণ। সন্ধ্যা হতে না হতেই সৃষ্টি হচ্ছে দীর্ঘ যানজট। স্বচ্ছন্দে চলাচল করতে পারছে না বলে অভিযোগ করছেন ভুক্তভোগী পথচারী, হাসপাতালে আসা রোগীর স্বজন থেকে এলাকাবাসী এ কারণে দারুণ দুর্ভোগে পড়েছে।

সড়ক দখল করে পসরা সাজিয়ে বসা ব্যবসায়ীদের দাবি দৈনিক ২০০ টাকার চাঁদা দিয়ে ফুটপাত ও সড়কে ব্যবসা করছেন তারা। কারা এই চাঁদা তুলছে প্রতিদিন—এ নিয়ে মুখ খুলতে রাজি নয় ব্যবসায়ীরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, সদরঘাট থেকে মাদারবাড়ির আইস ফ্যাক্টরির সড়ক ও ফুটপাত চলে গেছে অস্থায়ী বাজারের দখলে। অবাধে বসেছে শাকসবজি, ফলমূল, তরিতরকারি ও মাছের দোকান।

স্থানীয়দের অভিযোগ, ফুটপাতে হেঁটে যাওয়ার মত কোন পথই আর অবশিষ্ট নেই। ফুটপাত দখল করে বসানো হয়েছে দোকান। এখন আবার মূল সড়কে বসেছে অবৈধ বাজার। বিকাল ৫ টার পর রাস্তা দিয়ে পর্যন্ত হেঁটে যাওয়ার মত অবস্থায় থাকে না। এসব অস্থায়ী বাজারের জন্য রাস্তা পর্যন্ত সরু হয়ে গেছে। ফুটপাত ও সড়ক দখল করে রাস্তার ওপরেই রাখা হয় ফলের ঝুড়ি, সবজির বস্তা, মাছের জন্য আনা বরফের বাক্সসহ আরও নানা সামগ্রী। ফলে সন্ধ্যা থেকেই ওই এলাকায় জ্যামের সৃষ্টি হয়। কোনো দিকেই আসা-যাওয়ার অবস্থায় থাকে না এই সড়ক দিয়ে। গাড়ির ফাঁকে ফাঁকে ঝুঁকি নিয়েই চলাচল করতে হয় পথচারীদের।

পূর্ব মাদারবাড়ির বাসিন্দা সাইদুল ইসলাম চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘এটা অনেক ব্যস্ততম সড়ক। এমন একটা স্থানে ফুটপাত ও সড়ক দখল করে কাঁচাবাজার বসা খুবই দুঃখজনক। আমাদের চলাচল করতে সমস্যা হয়। হেঁটে চলাচলের কোন উপায় নেই। গাড়িতে করে গেলে যানজটের কারণে আটকে থাকতে হয় অনেকক্ষণ।’

দক্ষিণ মাদারবাড়ির বাসিন্দা আলমগীর হোসাইন বলেন, ‘ফুটপাত ও সড়ক দখল করে অবৈধ দোকান ও বাজার। এর মধ্য দিয়েই ব্যাটারিচালিত ইজিবাইক, রিক্সা, ট্রাক, গার্মেন্টস ও লোকাল বাস যাতায়াত করে। সবমিলিয়ে বিকেল হতেই একটা বিশৃঙ্খল অবস্থা বিরাজ করে। গাড়িগুলোকে লম্বা লাইনে দাঁড়িয়ে থাকতে হয় যানজটের কারণে। ফুটপাতে হাঁটার মত জায়গা থাকে না। বাধ্য হয়ে মূল সড়ক দিয়েই আমাদের হেঁটে যেতে হয়। এতে অনেক সময় দুর্ঘটনা ঘটে। এমন একটা স্থানে বাজার বসাতে আমাদের চলাচলে সত্যিই খুব সমস্যা হয়।’

বাজার করতে আসা হাফিজুর রহমান জানান, ‘এই এলাকায় নির্দিষ্ট কোন বাজার নেই, অফিস শেষে রিয়াজুদ্দিন বাজার থেকে বাজার করা কষ্টসাধ্য হয়ে পড়ে। এই অস্থায়ী বাজার বসার কারণে আমাদের বাজার করতে সুবিধাই হচ্ছে। সবই ঠিক আছে। কিন্তু এই বাজারের জন্য সন্ধ্যা হলেই তীব্র যানজট সৃষ্টি হয়। এজন্য সবাইকে চরম ভোগান্তিতে পড়তে হয়—এটাও ভেবে দেখার বিষয়।’

ট্রাক ও বাসচালকদের সঙ্গে এ বিষয়ে কথা বললে তারা ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, এমনিতেই সন্ধ্যায় অতিরিক্ত গাড়ি রাস্তায় নামানো হয় চাকরিজীবিদের জন্য। তার ওপর রাস্তার এক পাশে হাসপাতালে রোগী বহনকারী গাড়ি ও প্রাইভেট কারসহ বিভিন্ন রকম গাড়ি দাঁড়ানো থাকে। সড়কের ওপর পাশে শাকসবজি, ফলমূল, তরিতরকারি ও মাছের দোকান বসে থাকে। রাস্তা হলো গাড়ি চালানোর জন্য। কিন্তু তারা রাস্তাকে বাজার আর গাড়ির স্ট্যান্ড বানিয়ে ফেলেছে। এই যানজটের জ্বালায় আমরা বাঁচি না।

সড়কের ওপর গাড়ি রেখে যাত্রীর অপেক্ষায় থাকা সিএনজিচালক নোয়াখালীর বাসিন্দা রমিজ মিয়া বললেন, ‘রাস্তায় গাড়ি রাখলেও যানজট হয় না রাখলেও যানজট হবেই। অর্ধেক রাস্তা দখল করে যে তারা বাজার বসিয়েছে সেটা চোখে দেখেন না? তাদের বাজার সরিয়ে রাস্তা খালি করেন যানজট কমে যাবে।’

রাস্তার ওপর বাজার বসা ব্যবসায়ীরা জানান, তারা দৈনিক ২০০ টাকা চাঁদা দিয়ে রাস্তার ওপর পসরা সাজিয়ে বসেন। তবে কে বা কারা এই চাঁদা তোলে এই বিষয়ে কেউই মুখ খুলতে রাজি হননি।

১০-১২ বছরের এক কিশোর সড়কের ওপর সবজির গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে সবজি বিক্রি করছিল। রাস্তার ওপর সবজি বিক্রি করার জন্য কে অনুমতি দিয়েছে—জানতে চাইলে সে রাগী স্বরে উত্তর দেয়, ‘প্রতিদিন এক বেডা আইসা ২০০ টাকা নিয়ে যায়। সেই আমাদের এখানে বসে বিক্রি করতে কইছে।’

মুল সড়ক দখল করে বাজার বসানো সম্পর্কে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট আফিয়া আকতার চট্টগ্রাম প্রতিদিনকে বলেন, ‘আমরা গত সপ্তাহেই মাদারবাড়ি থেকে সদরঘাট মূল সড়কের ওপর অবৈধ বাজার উচ্ছেদ করে এসেছি। নগরীর বাকি অবৈধ বাজারগুলোও উচ্ছেদের প্রক্রিয়াধীন আছে।’

ম্যাজিস্ট্রেট দিয়ে অবৈধ বাজার উচ্ছেদের পরও মূল সড়কে আবারও অবৈধ বাজার কিভাবে বসানো হল—এ সম্পর্কে জানতে চাইলে স্পেশাল ম্যাজিস্ট্রেট (যুগ্ম জেলা জজ) জাহানারা ফেরদৌস বলেন, ‘আমাদের দায়িত্ব অবৈধ স্থাপনা ও বাজার উচ্ছেদ করা। এরপর স্থানীয় এলাকাবাসী, কাউন্সিলর, স্থানীয় থানার পুলিশকেই নিয়ন্ত্রণ করতে হবে যাতে পুনরায় অবৈধ স্থাপনা বা বাজার বসতে না পারে।’

সদরঘাট সড়কে অবৈধ বাজার বাসানোর সম্পর্কে জানতে চাওয়া হলে সদরঘাট থানার ওসি ফজলুর রহমান ফারুকী বলেন, ‘এটা আমাদের দায়িত্ব নয়।’ ‘এমন কোন তথ্য আমাদের কাছে নেই’ বলে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন তিনি।

মাদারবাড়ি থেকে সদরঘাট সড়কে অবৈধ বাজার উচ্ছেদের পর দিনই আবার বাজার বসানো প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ৩০ নম্বর পূর্ব মাদারবাড়ি ওয়ার্ডের কাউন্সিলর মাজহারুল ইসলাম চৌধুরী প্রশ্ন শুনেই ‘ব্যস্ত আছি’ বলে ফোন সংযোগ কেটে দেন। এরপরও কয়েকবার তাকে ফোন করা হলে তিনি ব্যস্ততার অজুহাত দেখিয়ে কথা বলতে অসম্মতি জানান।

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!