সংরক্ষিত কাউন্সিলর প্রার্থী ফেরদৌসী আকবরই শুধু মাঠে, জিন্নাত আরা ঝিমিয়ে

জাকারিয়া দস্তগীরের ওপর নির্ভর বিবি মরিয়মের কপাল

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের ২৮, ২৯ ও ৩৬ নম্বর ওয়ার্ডের সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে নির্বাচন ঘুরপাক খাচ্ছে আওয়ামী লীগের দলীয় মনোনয়নকে কেন্দ্র করেই। এই সংরক্ষিত ওয়ার্ডে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন ৪ জন। এর মধ্যে ৩ জনই আওয়ামী লীগের। এছাড়া কাউন্সিলর পদে আওয়ামী লীগের মনোনয়নকে ঘিরে চলে আসা অসংখ্য নাটকীয় ঘটনার মধ্যে সবচেয়ে বড় নাটকীয় ঘটনাও ঘটেছে এই ওয়ার্ডে।

এই ওয়ার্ডে সাবেক কাউন্সিলর ফেরদৌসী আকবরকে মনোনয়ন দেয় কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগ। কিন্তু দলের সর্বসম্মত সিদ্ধান্তের ধার না ধেরেই জিন্নাত আরা লিপি নিজেকে দলীয় প্রার্থী হিসেবে প্রচার করে আসছেন। এমনকি কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়ার স্বাক্ষর জাল করে চট্টগ্রামের একটি দৈনিকে আওয়ামী লীগের নামে মিথ্যা বিজ্ঞাপন দেওয়ার মত তোলপাড় করা ঘটনার পেছনেও তার সম্পৃক্ততা রয়েছে বলে স্থানীয় আওয়ামী লীগের অভিযোগ। এই ধরনের গুরুতর অভিযোগের পরেও স্থানীয় আওয়ামী লীগের একাংশের পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছেন জিন্নাত আরা।

এছাড়া দলীয় মনোনয়ন বঞ্চিত হয়ে এই ওয়ার্ড থেকে বিদ্রোহী হয়ে নির্বাচন করছেন নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীরের বোন বিবি মরিয়ম। যার বিরুদ্ধে আগেও নির্বাচনে ভাইয়ের প্রভাব কাজে লাগিয়ে অস্ত্রবাজি করার অভিযোগ রয়েছে। তবে নিজেকে ‘আওয়ামী লীগের কেউ না’ মন্তব্য করে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে দাবি করা এই প্রার্থীই আবার নিজের প্রচার প্রচারণায় নিজের ছোট ভাই জাকারিয়া দস্তগীরের নাম-পদবি ব্যবহার করছেন। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ স্থানীয় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা।

এর আগে ২০১৮ সালের এপ্রিল মাসে অনুষ্ঠিত ৩৬ নম্বর গোসাইলডাঙ্গা ওয়ার্ডের উপ নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছিলেন বিবি মরিয়ম। ওই নির্বাচনে বিবি মরিয়মের বাড়ির সামনে ও আঙিনায় তার অনুসারী চার যুবক প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে প্রতিপক্ষকে ধাওয়া করেন। ওয়ার্ডের বেচাশাহ রোডে তার বাড়ির সামনে প্রতিপক্ষের নেতা-কর্মীদের সঙ্গে সংঘর্ষ ও গুলি ছোঁড়ার ঘটনাকেও ‘সামান্য ঘটনা’ বলে মন্তব্য করেছিলেন বন্দর থানার তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ময়নুল ইসলাম। দুর্নীতি ও অনিয়মের নানা অভিযোগে অভিযুক্ত এই ওসিকে পরে অবশ্য চট্টগ্রাম থেকেই সরিয়ে জামালপুরে বদলি করা হয়।

জানা গেছে, গোসাইলডাঙ্গা ওয়ার্ডের উপ নির্বাচনের দিন বিবি মরিয়মের পক্ষের যুবকেরা বেচাশাহ রোডে জাহাঙ্গীরের নির্বাচনী ক্যাম্প ও কয়েকটি দোকান ভাঙচুর করেন। এ সময় জুয়েল নামে এক যুবকসহ কয়েকজন আহত হন। ঘটনাস্থলে তিনটি গুলির খোসা ও একটি তাজা গুলি পড়ে থাকতে দেখা যায়। স্থানীয় কয়েকজন বাসিন্দা নাম না প্রকাশ করার শর্তে বলেন, নির্বাচনী প্রচারণার শুরু থেকে ভয়ভীতি দেখিয়েছেন মরিয়মের পক্ষে কাজ করা যুবকেরা। অস্ত্রের জোরে পাস করতে চেয়েছিলেন তিনি। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীরকেই এজন্য দায়ী করছিলেন সেখানকার ভোটাররা। এবারেও এই ওয়ার্ডে একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটার আশংকা রয়েছে স্থানীয়দের।

তবে এসব বিষয়ে কথা বলতে বিদ্রোহী প্রার্থী বিবি মরিয়মের ছোট ভাই ও নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক জাকারিয়া দস্তগীরের মুঠোফোনে কয়েক দফা কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি।

জানা গেছে, আওয়ামী লীগের মনোনয়ন পাওয়া ফেরদৌসী আকবরের দুই সন্তানও রয়েছেন নগর ছাত্রলীগের গুরুত্বপূর্ণ পদে। তার ছেলে ইমতিয়াজ আকবর নগর ছাত্রলীগের গ্রন্থনা ও প্রকাশনা সম্পাদক এবং মেয়ে ফারিয়া আকবর দায়িত্ব পালন করছেন একই কমিটির সদস্য হিসেবে। মায়ের পক্ষে দুই ভাইবোনই চষে বেড়াচ্ছেন নির্বাচনী মাঠ। নির্বাচনে যা অনেকটা এগিয়ে রাখছে ফেরদৌসীকে।

এর বাইরেও দলীয় মনোনয়ন পাওয়া ফেরদৌসী আকবর বলছেন, বিদ্রোহী দুই প্রার্থী বিভিন্নভাবে তার প্রচার প্রচারণায় বিভ্রান্তি ছড়ালেও গত মেয়াদে কাউন্সিলর হিসেবে দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ভোটারদের সাথে তার আস্থা ও বিশ্বাসের সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। তাছাড়া আওয়ামী লীগের অবস্থানও বিভিন্নভাবে সুষ্পষ্ট হয়েছে। কাজেই নির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার ব্যাপারে শতভাগ আশাবাদী তিনি।

এদিকে আওয়ামী লীগের মনোনয়ন বঞ্চিত হওয়ার পর নিজেকে ‘আওয়ামী লীগের কেউ না’ দাবি করে বিবি মরিয়ম বলেন, ‘আমি তো আওয়ামী লীগের কেউ না। আমি স্বাধীনতা নারী শক্তি ফাউন্ডেশন থেকে নির্বাচনে দাঁড়িয়েছি। আমাকে কেন যে বাকিরা বিদ্রোহী বানিয়ে দিচ্ছে বুঝতে পারছি না। আমি ২০১৭ সালে ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সদস্য ছিলাম, তারপর থেকে আমার সাথে আওয়ামী লীগের কোনো সম্পর্ক নেই।’

তাহলে নিজের নির্বাচনী প্রচারণায় নগর ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক দস্তগীরের নাম ব্যবহারের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘দস্তগীর আমার ভাই। সে হিসেবে আমি আমার পারিবারিক পরিচয় দিয়েছি ফেস্টুনে। সে আমার জন্য কাজ করবে না। সে যেহেতু একটা পদে আছে, সে দলের হয়ে কাজ করবে।’

ভাই হিসেবে দস্তগীরের ভূমিকা কী জানতে চাইলে বলেন, ‘ভাই হিসেবে সে আমাকে বলেছে যদি ভোট সুষ্ঠু হয় এবং যদি আমি জিতি তাহলে জনগণের জন্য কাজ করতে। আর জিততে না পারলে মন খারাপ করতে বারণ করছে। সুষ্ঠু নির্বাচন হলে অবশ্যই আমি জিতব।’

এদিকে কেন্দ্রীয় আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক বিপ্লব বড়ুয়ার স্বাক্ষর জালিয়াতি করে আওয়ামী লীগের নামে ভুয়া বিজ্ঞাপন পত্রিকায় দেওয়ার বিতর্কের পর থেকেই ধরাছোঁয়ার বাইরে আছেন জিন্নাত আরা লিপি। নির্বাচনের সর্বশেষ পরিস্থিতি নিয়ে কথা বলতে তাকে কল করা হলেও সাংবাদিক পরিচয় দিতেই ‘মিটিংয়ে ব্যস্ত আছি’ বলে সংযোগটি বিচ্ছিন্ন করে দেন বিতর্কিত এই প্রার্থী।

এআরটি/সিপি

যখনই ঘটনা, তখনই আপডেট পেতে, গ্রাহক হয়ে যান এখনই!

ksrm