প্রতিদিন ডেস্ক : উচ্চ আদালতের বিচারকদের অপসারণের ক্ষমতা জাতীয় সংসদের হাতে ন্যস্ত করে আনা সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী অবৈধ ঘোষণা করে হাইকোর্টের দেয়া রায় বহাল রেখেছে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।
হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষের করা আপিল খারিজ করে দিয়েছে দেশের সর্বোচ্চ আদালত।
সোমবার (০৩ জুলাই) প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন আপিল বিভাগ এ আদেশ দেন।
এর আগে রবিবার (০২ জুলাই) রায়ের জন্য আপিলের কার্যতালিকার এক নম্বরে রাখা হয়েছে। গত ১ জুন এ মামলার দীর্ঘ শুনানি শেষে রায়ের জন্য অপেক্ষমান রেখে দেন প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বেধীন আপিল বিভাগের পূর্ণাঙ্গ বেঞ্চ।
বার অ্যামিকাস কিউরির মতামত গ্রহণসহ এ মামলায় মোট ১১ দিন শুনানি অনুষ্ঠিত হয়। এরপর উভয়পক্ষের যুক্তিতর্ক শেষে এ মামলার রায় যে কোনও দিন দেয়া হবে মর্মে অপেক্ষমান রাখা হয়।
আপিল আবেদনের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাটর্নি জেনারেল মাহবুবে আলম, অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা। অন্যদিকে রিটকারীর পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনজিল মোরসেদ।
এর আগে গত ৮ মে পেপার বুক থেকে রায় পড়ার মাধ্যমে এই মামলার আপিল শুনানি শুরু হয়। এরপর ৯ মে দ্বিতীয় দিনের মতো শুনানি হয়। এ দুদিন রাষ্ট্রপক্ষে অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা হাইকোর্টের রায়ের ওপর আদালতে শুনানি করেন।
এরপর ওইদিনই আদালতে চারজন অ্যামিকাস কিউরি তাদের লিখিত মতামত জমা দেন। এই চারজন হলেন- সংবিধানের অন্যতম প্রণেতা ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার এম. আমীর-উল ইসলাম, এম আই ফারুকী ও আবদুল ওয়াদুদ ভূইয়া।
এর আগে ৮ ফেব্রুয়ারি এই মামলায় আপিল শুনানিতে সহায়তার জন্য ১২ জন জ্যেষ্ঠ আইনজীবীকে অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগ দেন আপিল বিভাগ।
অ্যামিকাস কিউরি হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত ১২ আইনজীবী হচ্ছেন- বিচারপতি টিএইচ খান, ড. কামাল হোসেন, ব্যারিস্টার রফিক-উল হক, ব্যারিস্টার এম আমীর-উল ইসলাম, এ এফ হাসান আরিফ, ব্যারিস্টার শফিক আহমেদ, এ জে মোহাম্মদ আলী, ব্যারিস্টার রোকন উদ্দিন মাহমুদ, ফিদা এম কামাল, ব্যারিস্টার আজমালুল কিউসি, আবদুল ওয়াদুদ ভূইয়া, এম আই ফারুকী।
বিচারপতি অপসারণের ক্ষমতা পুনরায় সংসদের কাছে ফিরিয়ে নিতে ২০১৪ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনী সংসদে পাস করা হয়। এরপর তা ওই বছরের ২২ সেপ্টেম্বর গেজেট আকারে প্রকাশ পায়। এ অবস্থায় সংবিধানের ষোড়শ সংশোধনীর বৈধতা চ্যালেঞ্জ করে ওই বছরের ৫ নভেম্বর সুপ্রিম কোর্টের নয়জন আইনজীবী হাইকোর্টে রিট আবেদন করেন।
এ আবেদনের ওপর প্রাথমিক শুনানি শেষে হাইকোর্ট ওই সংশোধনী কেন অবৈধ, বাতিল ও সংবিধান পরিপন্থী ঘোষণা করা হবে না-তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেন। ওই রুলের ওপর শুনানি শেষে গত ৫মে আদালত সংখ্যাগরিষ্ঠ বিচারকের মতামতের ভিত্তিতে ১৬তম সংশোধনী অবৈধ বলে রায় দেন। তিন বিচারকের মধ্যে একজন রিট আবেদনটি খারিজ করেন।
এর মধ্যে সংখ্যাগরিষ্ঠদের রায় প্রকাশিত হয় গত ১১ আগস্ট এবং রিট খারিজ করে দেয়া বিচারকের রায় প্রকাশিত হয় ৮ সেপ্টেম্বর। দুটি মিলে মোট ২৯০ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশিত হয়। এরপর হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ আপিল করে।